আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির ঋণও পাচ্ছে বাংলাদেশ

প্রতিনিধিদলটি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসেকা আয়েশা খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ সচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।

আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির ঋণও পাচ্ছে বাংলাদেশ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: তৃতীয় কিস্তিতেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ১১৫ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে সফররত সংস্থাটির প্রতিনিধিদল বুধবার সন্ধ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে এমন ইঙ্গিত দিয়েছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো-ইকোনমিক্স ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউ। 

প্রসঙ্গত, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে গত বছরের জানুয়ারিতে আইএমএফের সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) ডলারের ঋণ চুক্তি করে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে এই ঋণ ছাড় করার কথা। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তিতে আইএমএফ ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের ঋণ ছাড় করে। আর ডিসেম্বরে ছাড় করে দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। তৃতীয় কিস্তির ঋণ ছাড় এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যালোচনায় গত ২৪ এপ্রিল দলটি ঢাকায় আসে। এবারের সফরে ঋণ পেতে বেঁধে দেওয়া শর্ত ও সংস্কার কতটা পূরণ হয়েছে সেই বিষয়গুলোই খতিয়ে দেখেছেন আইএমএফের বিশেষজ্ঞ দলটি। মোটা দাগে বাজেটের আকার, রাজস্ব আয়, যৌক্তিক ভর্তুকি নির্ধারণ ও নিট রিজার্ভ নিয়ে নতুন করে লক্ষ্যমাত্রা ও সুপারিশ দিয়েছে এই পূর্বমূল্যায়ন দল। 

প্রতিনিধিদলটি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসেকা আয়েশা খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ সচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। এসব বৈঠকের পর বাংলাদেশের ব্যাপারে আগের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। 

ক্রিস পাপাগেওর্জিউ বলেন, আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির ঋণ পেতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এখন আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাহী বোর্ডের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। এরপর দ্বিতীয় পর্যালোচনা শেষে ১১৫ কোটি মার্কিন ডলারের কিস্তির ছাড় দেওয়া হবে। এর মধ্যে আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং  রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ২২ কোটি ডলার। 

তিনি বলেন, আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির আওতায় গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত সংস্কার করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য ফর্মুলাভিত্তিক জ্বালানি মূল্য সমন্বয় নীতি বাস্তবায়ন করেছে। মূল্যস্ফীতিসহ নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বিনিময় হার পুনর্বিন্যাসে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে আইএমএফ। 

ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইএমএফ প্রতিনিধি বলেন, একক কোনো ব্যাংক নিয়ে আমরা মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমাদের অবস্থান সুশাসনের পক্ষে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি আমাদের ঋণের শর্তের মধ্যে নেই। তবে বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আমরা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সঙ্গে কাজ করছি। 

এর আগে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান সাংবাদিকদের বলেন, আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই। তারা নতুন করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং সুদহারের বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে। 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইএমএফের জলবায়ু ও দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের পরামর্শ অনুসরণ করে চলতি বছরেই কাজ শুরু করবে সরকার। করের হার বা আওতা বাড়ানোর যে আলোচনা আছে, তাতে মানুষের কষ্ট বাড়বে কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শর্ত পূরণ করতে গিয়ে মানুষের জন্য ভোগান্তি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না বাংলাদেশ। 

প্রতিনিধিদলটির সফর নিয়ে এদিন কথা বলেন অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার। তিনি জানান, ১০টির মধ্যে বাংলাদেশ কেন একটি পূরণ করতে পারেনি তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ পক্ষ। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে জুনে রিজার্ভে যোগ হতে পারে তৃতীয় কিস্তির টাকা। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ বছরের জুন নাগাদ দেশের নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। আর বর্তমানে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। এ শর্ত পূরণ না হলেও তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার বিষয়ে  কোনো সংশয় নেই।