সরকারের দুর্নীতি, আত্মঘাতী চুক্তি ও অপরিণামদর্শী পরিকল্পনার মাশুল দিচ্ছে জনগণ: বিএনপি
আজ শনিবার দুপুরে গুলশাণে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, আত্মঘাতী চুক্তি ও অপরিণামদর্শী পরিকল্পনার জনগণ মাশুল দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার দুপুরে গুলশাণে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মহা বিপর্যয় বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার গত দেড় দশক ধরে উন্নয়নের যে ঢোল বাজিয়ে আসছে তন্মধ্যে একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল বিদুু্যুৎ খাত। দাবি করা হচ্ছে যে ২০২২ সালে এসে ক্যাপাসিটিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে এবং সর্বোচ্চ উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। গত ১০ জুলাই ২০২২ ইং সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১১ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার উচ্ছ¡াস উদযাপন করা হ'ল ঘটা করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এত নজিরবিহীন অর্থ ব্যয় করেও কেন পুনরায় দেশের জনগণকে লোডশেডিংই বরণ করতে হচ্ছে, আজ কেন তবে বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে সাশ্রয়ী হওয়ার নসিহত দেয়া হচ্ছে, কেন আজ অন্ধকারাচ্ছন্ন দেশের বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাত, কেন সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে, কেন বিদ্যুৎ খাত আজ অর্থনীতির জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে? এর উত্তর একটাই, সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি আর হরিলুটের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। গত এক যুগ ধরে দায়মুক্তি আইন করে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে বিনা টেন্ডারে (ঁহংড়ষরপরঃবফ ড়ভভবৎ) বিনা প্রতিযোগিতায় যেসব অপরিণামদর্শী, অসম ও আত্মঘাতী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার চুক্তি করা হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায় ও সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের অবৈধ অর্থ লুটপাটের সুযোগ করে দেয়ার জন্য, স্বল্প সময়ের কথা বলে যেসকল রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, প্রয়োজন না থাকা সত্তে¡ও সেগুলো আবার আগের শর্তেই নবায়ন করা হয়েছে এবং হচ্ছে, চাহিদা না থাকা সত্বেও নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, বিদ্যুৎ না কিনেই অলস বসিয়ে বসিয়ে বিদেশী এবং দেশীয় সরকারঘনিষ্ঠ বিশেষ বিশেষ রাঘববোয়ালদের মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে এ পর্যন্ত যে বিপুল অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে এবং সামনে আরো বেশি পরিশোধ করা হবে, দেশীয় গ্যাস উত্তোলন না করে আমাদানিকৃত জ¦ালানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ যে অপরিণামদর্শী তথাকথিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, এখন তারই মূল্য বা মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। এখন শহরে দুই-তিন ঘণ্টা এবং গ্রামঞ্চলে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ফিরে যেতে হচ্ছে হারিকেন আর মোমবাতির জগতে। শিল্পে ও কৃষিতে উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ওপর চরম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সরকারের বিশেষ আইনে স্থাপিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর দুই-তিন বছরের পর বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও প্রয়োজন ছাড়াই তা এখনো চালু আছে। বেশ কিছু রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ছাড়াই সরকারকে এ পর্যন্ত ৯০ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের পকেটেই গেছে ৬০ হাজার কোটি টাকা (সমকালঃ ২৫ জুলাই, ২০২২)। আবার এক হিসেবে গত এক যুগে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গচ্চা গেছে প্রায় ৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। গত ৩ বছরেই ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের পকেটে গেছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। স¤প্রতি পিডিবি কর্তৃক বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বিদ্যুতের চাহিদা সঠিকভাবে নির্ধারণ না করেই চাহিদার অনেক বেশি পাওয়ার প্ল্যান্টের সাথে চুক্তি করে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীদের লুট করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই সরকারের নীতি একটাইÑ তা হচ্ছে জনগণের সম্পদ লুট করে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করা এবং বিদেশে সেই সম্পদ পাচার করা।
তিনি বলেন, গত ২৫ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিক লিখেছে, “অলস বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চার্জ গলার কাঁটা”। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাত্র ৪৩% ব্যবহার করা হয়। অবশিষ্ট ৫৭% অলস বসিয়ে কেন্দ্র ভাড়া দেয়া হয়। গড় চাহিদার অতিরিক্ত স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহের জন্য সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ না কিনেই বিদায়ী অর্থবছরের নয় মাসে বিল পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এই খাতে ব্যয় হয়েছে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮%। ক্রমেই ক্যাপাসিটি চার্জের বিল বেড়েই যাচ্ছে। বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন কম হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে বিনা টেন্ডারে বিশেষ দায়মুক্তি আইন করে ২০১০ সালে আপতকালীন ও স্বল্প সময়ের কথা বলে ১৯ টি উচ্চমূল্যের রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। সেই আপৎকালীন 'স্বল্প মেয়াদ' আজও শেষ হয়নি। দুই-তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়ে এখনও ডজনখানেক কেন্দ্র চালু রাখা হয়েছে। এমনকি জ¦ালানি সংকটের কারণে সরকার যখন ঘোষণা দিয়ে ৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছিল তখনও ৪টি উচ্চব্যয়ের কুইক রেন্টালের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। অথচ এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বেশিরভাগ সময়ই বসিয়ে রাখা হচ্ছে। প্রথমদিকে কাজ পাওয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের কিছু পূর্ব যোগ্যতার কথা থাকলেও পরে সরকারের ঘনিষ্ঠজনেরা, এমনকি বিদ্যুৎখাত অনভিজ্ঞ ফার্নিচার, লবন এবং সিমেন্ট ব্যবসায়ীরাও বিদ্যুৎ খাত ব্যবসায় নেমে পড়ে যা বিদ্যুৎখাতে বিপর্যয় ডেকে আনে। প্রাথমিকভাবে ২/৩ বছরের চুক্তি করায় বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা হয়। বলা হয়েছিল- মেয়াদ বেশি হলে এই দাম কম হতো। কিন্তু পরে এসব কেন্দ্রের মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো হয়। তিন থেকে ৫ বছরের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ১০/১২ বছর চুটিয়ে ব্যবসা করছে। তবে বিদ্যুতের দাম কমেনি। তাছাড়া চুক্তির সময় অনেক কেন্দ্রের প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর বেশি করে ধরে বিদ্যুতের দর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওহংঃরঃঁঃব ঋড়ৎ ঊহবৎমু ঊপড়হড়সরপং ঋরহধহপরধষ অহধষুংরং (ওঊঊঋঅ) বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের ওপর, æইধহমষধফবংয চড়বিৎ জবারব-ি ঙাবৎ ঈধঢ়ধপরঃু, ঈধঢ়ধপরঃু চধুসবহঃং, ঝঁনংরফরবং ধহফ ঞধৎরভভ ধৎব ঝবঃ ঃড় জরংব ঊাবহ ঋধংঃবৎ” শিরোনামে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস পড়ে আছে (প্রথম আলো, ১৮ মে, ২০২০)। প্রথম আলো ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সংখ্যায় লিখেছিল, “চাহিদা নেই, তবু নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র।” অর্থাৎ বিষয়টি নতুন নয়। সচেতন মহল অনেকদিন ধরেই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছিল কিন্তু চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী। ক্যাব এর জ্বালানি উপদেষ্টাসহ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিতেই দায়মুক্তির বিশেষ আইনে দরপত্র ছাড়াই রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, বর্তমানের বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতার মধ্যেই আরও বিদ্যুৎকেন্দ্র আসছে, এতে অলস খরচ আরও বাড়বে। বর্তমানে ১৩ হাজার ৩৮৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৫টি কেন্দ্র নির্মাণাধীন। ২০২৬ সালের মধ্যে এসব কেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরেই তিন হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসতে পারে। নির্মাণাধীন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বেসরকারি খাতের রয়েছে ৯ হাজার মেগাওয়াট। খাতসংশ্নিষ্টরা বলছেন, এই কেন্দ্রগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ গ্যাসভিত্তিক। এখনই গ্যাস সংকটে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। আগামীতে গ্যাসের উৎপাদন আরও কমার শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে চালু হলেও অনেক কেন্দ্রকে জ্বালানির অভাবে বসে থাকতে হতে পারে। এখনই চাহিদার অতিরিক্ত সাত হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। আগামী চার বছরে আরও ১৩ হাজার মেগাওয়াটের কেন্দ্র উৎপাদনে এলে বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়বে। কারণ, চার বছরের মধ্যে চাহিদা সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট বাড়তে পারে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ না কিনেও অতিরিক্ত টাকা পরিশোধের অঙ্ক অনেক গুন বেড়ে যাবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০১৬ সালের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্য স্থির করা হয়। সেখানে আমদানি ও নিজস্ব গ্যাস ৩৫ শতাংশ, আমদানি নির্ভর কয়লায় ৩৫ শতাংশ, তেল, বিদ্যুৎ আমদানি ও নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে বাকি ৩০% বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। এদিকে এ মহাপরিকল্পনা অনুসারে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হবে প্রকৃত চাহিদার চেয়ে ৫৮% বেশি। আর অলস পড়ে থাকা এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিপুল পরিমাণ কেন্দ্র ভাড়া গুনতে হবে, যার বোঝা জনগণকেই বহন করতে হবে। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন, অযোগ্য কোম্পানিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প প্রদান, প্রতিযোগিতা ছাড়া বিনা টেন্ডারে অতিরিক্ত দরে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি এবং স্বল্প মেয়াদের রেন্টাল ও কুইকরেন্টালগুলোর মেয়াদ বাড়িয়ে বিদ্যুৎ খাতে বছরের পর বছর খরচ বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি চার্জ একটা স্বীকৃত পদ্ধতি। কিন্তু বাংলাদেশে যা হয়েছে তা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে লাভবান করার জন্য করা হয়েছে। প্রথমত, ক্যাপাসিটি চার্জ অনেক বেশি ধরা হয়েছে। দ্বিতীয়ত অপ্রয়োজনে চুক্তি করা হয়েছে। বিশেষ করে কুইক রেন্টালের ক্ষেত্রে রীতিমত লুটপাট করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো ক্যাপাসিটি চার্জ সাধারণত যে পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে ধরা হয়। কিছু কিছু সময় বিদ্যুতের চাহিদা গড় চাহিদার চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। এই বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র রিজার্ভ রাখার সুযোগ আছে। কিন্তু এই রিজার্ভে রাখা কেন্দ্রগুলো যখন বসে থাকবে তখন শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ পাবে। অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জ পাইয়ে দিতে দুর্নীতির মাধ্যমে অনেক অদক্ষ প্ল্যান্টের ক্যাপাসিটি আবার অনেক বেশি দেখানো হয়েছে। উৎপাদন ক্ষমতার কত অংশ রিজার্ভ রাখা হবে তার সঠিক হিসাব নিকাশ করতে হবে। কোনোরকমেই অতিরিক্ত হওয়া যাবে না। একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা প্রতি বছর যাচাই করে ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করার সুযোগে বড় ধরনের জালজালিয়াতির কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে চলছে। আর এই খরচ মেটানো হচ্ছে জনগণের পকেট কেটে। গত ১২ বছরে আট দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ান হয়েছে। আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জনগণের কাছে জবাবদিহীতা না থাকলে যা হওয়ার তাই করে চলেছে সরকার।
ক্যাপাসিটি চার্জ অযৌক্তিক, অনৈতিক, জনস্বার্থবিরোধী এবং রীতিমত অপরাধ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বেশির ভাগই আসলে পুরনো। উৎপাদন সক্ষমতা যতটুকু দেখানো হয় ততটুকু নেই। অথচ বলা হচ্ছে, উৎপাাদন ক্ষমতা প্রকৃত চাহিদার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। তাহলে এ ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কেন এখনো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে না। আর কেনই বা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বসিয়ে রেখে জনগণের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে গুটিকয়েক বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীর পকেটে দেয়া হচ্ছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে ভিয়েতনামে যুেেদ্ধর সময় কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। তখন এ জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হতো। কিন্তু আমাদের পরিস্থিতি তো ভিয়েতনামের মতো নয়। তা সত্তে¡ও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে যে অর্থ দেয়া হচ্ছে তা অযৌক্তিক, অনৈতিক, জনস্বার্থবিরোধী এবং রীতিমত অপরাধ। সরকার টাকা চুরির সুবিধার্থে গঁষঃরষধঃবৎধষ ঋরহধহপরহম ওহংঃরঃঁঃব গুলোর কম সুদের খড়ধহ উপেক্ষা করে বর্তমানে পারস্পরিক স্বার্থে উচ্চ সুদের নরষধঃবৎধষ ষড়ধহ গ্রহণেই বেশি আগ্রহী। গত এক দশকে দেশে বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানিগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে খাতটিতে মোট দায়দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। দেশের বিদ্যুৎ খাতে মোট দায়দেনার বৃহদাংশই তৈরি হয়েছে বিদেশী ঋণে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে গিয়ে। বিশেষ করে রাশিয়ান ঋণ নিয়ে ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকায় ২৪০০ মেগাওয়াট রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পটি কতটুকু আর্থিক সাশ্রয়ী এবং মানুষের জীবন জীবিকার প্রশ্নে এর ঝুঁকি নিয়ে রয়েছে মিলিয়ন ডলার য়ঁবংঃরড়হ. একই প্রশ্ন রয়েছে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং রামপাল, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়েও। টিআইবি'র এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে দুইটি কয়লাভিত্তিক এবং একটি এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কেবল জমি ক্রয়, অধিগ্রহণজনিত ক্ষতির কারণেই ৩৯০ কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। ৩৭টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে এ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা। তন্মধ্যে উডএঊ এর তথ্য অনুযায়ী ৬৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সরকারঘনিষ্ঠ রাঘববোয়ালদের ১২টি কোম্পানি পকেটে ঢুকিয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। চলছে হরিলুট। এ কোম্পানিগুলোর নাম আপনারা সকলেই জানেন- সামিট গ্রæপ, এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল, এরদা পাওয়ার হোল্ডিংস, ইউনাইটেড গ্রæপ, কেপিসিএল, বাংলাক্যাট, ওরিয়ন গ্রæপ, হোসাফ গ্রæপ, মোহাম্মদী গ্রæপ, ম্যাক্স গ্রæপ, সিকদার গ্রæপ এবং এপিআর এনার্জি (সমকাল- ২৫ জুলাই/ ২২)। এদের মধ্যে সামিট গ্রæপের নামতো সবার মুখে মুখে। বিদ্যুৎ খাতের টাইকুন। সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীদের অন্যতম। এদিকে ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রে বিদেশী মালিকানা বা বিদেশী অংশীদারিত্ব থাকায় এ টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বৈদেশিক মুদ্রায় দেনা পরিশোধ করতে হচ্ছে। কুইক রেন্টালের নামে চলছে কুইক লোপাট।
দেশে যখন ওভারক্যাপাসিটি তখন ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি কেন?
এদিকে ভারত থেকে বিদ্যুৎ কিনতেও দিতে হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ। ভারত থেকে বর্তমানে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। এ জন্য গত তিন অর্থবছরে প্রায় ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে। আদানি গ্রæপের ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কথা রয়েছে। বাংলাদেশে যখন প্রায় ৬০ শতাংশ ওভারক্যাপাসিটি রয়েছে ঠিক সে সময় ভারত থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ আমদানি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। ১৬০০ মেগাওয়াটের আদানি গোড্ডা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ বছরে প্রায় ১১.০১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে। এই বিদ্যুৎ আমদানির ৪০% যায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে। বিদ্যুৎ কম এলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। অফধহর এড়ফফধ ঈড়ধষ চড়বিৎ চষধহঃ: অহ ধপযরষষবং যববষ ড়ভ ঃযব ঢ়ড়বিৎ ংবপঃড়ৎ ড়ভ ইধহমষধফবংয শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী এই প্ল্যান্টকে ইউনিট প্রতি ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে ৩ টাকা ২৬ পয়সা যদিও বাংলাদেশে এই ধরনের প্ল্যান্টের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ ২ টাকা ৮৩ পয়সা। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে আদানী পাওয়ার ১৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। ইধহমষধফবংয ডড়ৎশরহম এৎড়ঁঢ় ড়হ ঊীঃবৎহধষ উবনঃ এবং ভারত ভিত্তিক এৎড়ঃিয ডধঃপয এর যৌথ গবেষণায় বলা হয় আদানি গোড্ডার বিদ্যুৎ আমদানিকৃত অন্যান্য বিদ্যুতের চেয়ে ৫৬.২%, আমদানিকৃত কয়লা বিদ্যুতের চেয়ে ৩৬.৯%, ও দেশীয় কয়লা বিদ্যুতের চেয়ে ৪.৩% বেশি ব্যয়বহুল হবে। চুক্তির ২৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে আদানি গ্রæপকে এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি পরিশোধ করতে হবে যা দিয়ে ৩টি পদ্মা সেতু, ৯টি কর্ণফুলী টানেল কিংবা ২ টি মেট্রোরেল নির্মাণের এর জন্য যথেষ্ট। আদানির এই কো¤পানিকে প্রায় ৩ বছরে মোট ভাড়া দেয়া হয়েছে ৫৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। আর পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতিসহ খরচ পড়েছে ৩০ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এ কেন্দ্রটি থেকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হচ্ছে না এবং হবে না। তাই এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বিরাট বোঝা হয়ে আছে যা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে।
‘দায়মুক্তি’ আইন: স¤প্রতিক সময়ে সর্বাধিক আলোচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংকট এবং এর ফলে সৃষ্ট মানুষের দুর্ভোগ। কিন্তু পরিহাস হলো, এই সংকট ও মানুষের দুর্ভোগের জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। এর কারণ ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রæত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন, ২০২১’। এ আইন অনুযায়ী বিদ্যুতের জন্য জ¦ালানি আমদানি অথবা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অথবা বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে অন্য কোনো কার্যক্রম, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতের কাছে প্রশ্ন উপস্থাপন করা যাবে না। এ আইনের আওতায় বিনা দরপত্রে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ ক্রয়, দফায় দফায় অতিরিক্ত ম‚ল্যে চুক্তি নবায়ন, অতি উচ্চম‚ল্যের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি, বিনা দরপত্রে গ্যাস-বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ, অবকাঠামো নির্মাণ করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ আইন অনুসারে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানিসংক্রান্ত কেনাকাটার সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনা যাবে না। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে এ আইনকে যুক্তিসংগতভাবেই ‘দায়মুক্তি’ আইন বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু এই দায়মুক্তি আইনেরও শেষ আছে। যথাসময়ে এই খাতে স¤পাদিত সকল দুর্নীতির তদন্ত করে অবশ্যই দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে ইন্ শা আল্লাহ।
অবহেলিত নবায়নযোগ্য শক্তি: সরকার প্রণীত মহাপরিকল্পনায় পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন অতি নগণ্য। ক্রম ক্ষয়িষ্ণু জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর প্রকল্পগুলো জ্বালানি খাতের জন্য ভবিষ্যতে ঝুঁকির সৃষ্টি করবে। ২৫৫৬৬ মেগাওয়াট মোট উৎপাদন সক্ষমতার মধ্যে, নবায়নযোগ্য শক্তি (জবহবধিনষব ঊহবৎমু) মাত্র ৮৯১ মেগাওয়াট।
গুরুত্ব পায়নি গ্যাস উত্তোলন
বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্র অনুযায়ী গ্যাস ভিত্তিক উৎপাদিত বিদ্যুৎ ১৫৯৯৬ মে:ও: এর জন্য আনুমানিক ২৫০০-২৭০০ এমএমসিএফডি গ্যাস প্রয়োজন। বাস্তবে ৯০০-১০০০ এমএমসিএফডি গ্যাস জ্বালানি বিভাগ হতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে আইপিপি-এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা অন্যায়ভাবে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দশ বছরে ইঅচঊঢ-এর মাধ্যমে ঙভভ-ংযড়ৎব গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগায়নি। এমনকি বিদ্যমান গ্যাস ফিল্ডসম‚হের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের মাধ্যমেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০% অধিক গ্যাস সরবরাহ করা যেত, তাও করা হয়নি। অথচ প্রতিবেশী রাাষ্ট্র মিয়ানমার ইতোমধ্যে ঙভভ-ংযড়ৎব গ্যাস উত্তলনের মাধ্যমে দেশকে জ¦ালানি সংকট হতে রক্ষা করছে। অথচ সরকার সমুদ্রবিজয় নিয়ে উৎসব করলেও ঙভভ-ংযড়ৎব গ্যাস উত্তোলনে সম্পূর্র্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এভাবে গ্যাসের কৃত্তিম অভাব সৃষ্টি করে দুর্নীতির মাধ্যমে দলীয় ব্যবসায়ীদের আমদানিকৃত এলএনজি নির্ভর প্ল্যান্ট নির্মাণ করে অবারিত দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে সরকার। রক্ষক তথা জনস্বার্থ রক্ষা করার পবিত্র দায়িত্ব যাদের উপর, তারাই যখন ভক্ষক হয়ে সব লুটে-পুটে খায়, তখন পরিস্থিতি যা হবার তাই হচ্ছে। খেসারত দিতে হচ্ছে এখন নিরপরাধ জনগণকে। এদিকে ভোক্তাদের টাকায় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য গঠন করা গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) থেকে এলএনজি আমদানিতে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে সরকার। এই টাকাটা আসলে ঋণের নামে নিয়ে নেওয়া হলো। ভোক্তারা এটিকে বৈধ মনে করে না'। আর্থিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এই অবৈধ কাজটি করেছে সরকার।
জ্বালানিখাতের দুরবস্থা: আমদানিকৃত এলএনজি নির্ভরতা বৃদ্ধি: বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে গ্যাস বাপেক্সের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে ১ টাকা ৩ পয়সায় কিনতে পাওয়া যায়, সেই গ্যাস এলএনজি হিসেবে স্পট মার্কেট থেকে কিনতে গিয়ে খরচ হচ্ছে ৮৩ টাকা। দেশে প্রতি বছর ৫০ লাখ টন ফার্নেস ওয়েল আমদানি করা যায়। এরমধ্যে ৪৫ লাখ টনই বেসরকারি খাতে আমদানি করা হচ্ছে। যার দাম দেওয়া হচ্ছে লিটারে ৯২ টাকা করে। অথচ পুরো তেল সরকারি সংস্থা বিপিসি আমদানি করলে বছরে অন্তত আট হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। এই টাকা এখন দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট হচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৭ জেলায় গ্যাস সরবরাহের জন্য রাষ্ট্রায়াত্ত¡ সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি গঠন করার পাশাপাশি পাইপলাইন নির্মান করা হয়। কিন্তু এসব কোন কাজেই আসছে না। ওই এলাকার মানুষ গ্যাস না পেলেও শত শত কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে ইতোমধ্যে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে বছরভিত্তিক চাহিদা প্রক্ষেপণে যে মহাত্রæটি হয়েছে তার মাশুল জনগণকে দিতে হবে কেন? প্রকৃতপক্ষে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে কোন ভুল নয়, এই মহাপরিকল্পনা রাষ্ট্রীয় স¤পদ হরিলুটের এক মহা বøæপ্রিন্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। সরকার জ¦ালানি নিরাপত্তার নামে দীর্ঘমেয়াদী চাহিদা ও সরবরাহের যে দৃশ্যপট এঁকেছে তার কোনোটাই এখন ঠিক থাকছে না। সম্ভাব্য এই দৃশ্যপটকে সামনে রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্রসমূহ স্থাপনের চুক্তি করা হয়েছে। কিন্তু উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালনের জন্য কোনো প্রয়োজনীয় সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়নি। আবার বিতরণ লাইন না থাকায় সঞ্চালনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরও সেই বিদ্যুৎ ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানো যাচ্ছে না। উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ নেটওয়ার্ক ও গ্রাহক সংযোগ- এই চারটি মৌলিক স্তর সুষ্ঠু ও সমন্বিতভাবে সম্পাদিত না হওয়ায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রাহক পর্যায়ে না পৌঁছে বরং অপচয় হচ্ছে। ২০০৯ ও ২০২২ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইন যেখানে মাত্র ৬৯% ও বিতরণ নেটওয়ার্ক ১৪০% বেড়েছে, সেখানে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে ৪১৭%। উৎপাদন পরিকল্পনায় পরিণামদর্শিতার অভাবে মহাপরিকল্পনাটি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অদূরদর্শী পরিকল্পনার ঃরঢ় ড়ভ ঃযব রপবনবৎম হচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দৃষ্টান্ত। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে উৎপাদনে গেলেও সঞ্চালন লাইনের নির্মাণ শেষ না হওয়ায় কেন্দ্রটি সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। কিন্তু কোন বিদ্যুৎ না দিলেও এ পর্যন্ত ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে চীনা ঋণে বাস্তবায়নাধীন পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি পরিশোধ করা হয়েছে। প্রশ্ন হ’ল সঞ্চালন লাইনের কাজটি সম্পন্ন করা হলো না কেন? বিদ্যুৎ না কিনেও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে ৫ হাজার কোটি টাকা কেন পরিশোধ করা হলো ? অনেকেই মনে করেন ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্যুৎ না কিনেও যোগসাজশে অর্থ লুটের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এ জাতীয় অন্যসব অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রর বেলায়ও একইভাবে যোগসাজশে অর্থলোপাট করা হয়েছে এবং হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী বিশেষ প্রয়োজনে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস রাখা হচ্ছে আদর্শ নিয়ম। চলতি শতকের শুরুর দিক পর্যন্ত বাংলাদেশেও এর বড় ব্যতিক্রম ছিল না। জাপানে ১০ শতাংশ অলস বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এটা বেশি হলে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান জবাবদিহিহীন সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে অলস বিদ্যুৎকেন্দ্র রেখেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। আর বসিয়ে বসিয়ে তাদেরকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করে যাচ্ছে। এ অর্থ জনগণের অর্থ। এই ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎ খাত দেউলিয়া হচ্ছে।
জ্বালানি আমদানি, লোডশেডিং ও ডলার সংকট: বাংলাদেশের পরিকল্পনা বিভ্রম ও সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে বিদ্যুৎ খাতে যে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তার সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে জ্বালানি আমদানি সঙ্কট। সরকার দেশের জন্য প্রয়োজনীয় জ¦ালানির ব্যাপারে কাতার বা ওমানের সাথে পুরো জ¦ালানি চাহিদা মেটানের মতো দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তি না করে এর অংশ বিশেষ সিঙ্গাপুরভিত্তিক স্পট জ¦ালানি বাজার থেকে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে সাত ডলারে যে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে তা এখন স্পট মার্কেট থেকে ৩৮ ডলারে পর্যন্ত কিনতে হচ্ছে। এতে চাপ বাড়ছে ডলারের রিজার্ভে। স¤প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়ন হয়েছে। ডলার কিনতে এখন লাগে ১২০ টাকা। দেশে ডলার সংকট সামলাতে গিয়ে স্পট মার্কেটের এই জ¦ালানি কেনা বন্ধ করে দেয়ার ফলে বিদ্যুৎ ঘাটতি বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় লম্বা সময়ের জন্য অন্ধকার বা লোডশেডিংয়ে পড়তে হচ্ছে সকলকে। জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, লোডশেডিং করে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রক্ষা হলেও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বিতরণ কোম্পানিগুলো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কবলে পড়বে। ঋণের ভারে ন্যুব্জ পিডিবি আরো রুগ্ন হয়ে পড়তে পারে। লোডশেডিংকে সাময়িক সমাধান হিসেবে দেখা হলেও লÐভÐ করে দিতে পারে বিদ্যুতের ব্যবস্থাপনাকে। কেননা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখলেও ক্যাপসিটি চার্জ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পিডিবি। বরং বেশি উৎপাদন হলে বেশি বিক্রি হতো এবং এতে গড় করে উৎপাদন খরচ কিছুটা হলেও কমে আসত। পাশাপাশি সরকারের দেয়া ভর্তুকিও সামাল দেয়া যেতো। বর্তমানে শীতকালে ৪-৫ মাস বিদ্যুৎ উৎপাদনে অতিরিক্ত ক্ষমতা স্ট্যান্ডবাই রাখতেই হলে তা বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর গায়ে না দিয়ে সরকারি কেন্দ্রে রাখা গেলে অলস সময়ের জন্য কোনো মূল্য পরিশোধ করতে হতো না। প্রশ্ন হলো, সরকারতো ইচ্ছা করে বড় বড় সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে হয় অচল না হয় আধা সচল করে রেখেছে। অথচ বড় বড় সরকারি কেন্দ্রগুলোকে ওভারহলিং করে সচল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল বিএনপি। কিন্তু ২০০৯ এ ক্ষমতায় এসে প্রথম এক বছর ইচ্ছা করে সরকার বিদ্যুৎ সেক্টরের উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতিকে দুর্বিষহ করে তোলে যেন বিনা টেন্ডারে অধিক ব্যয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ সুগম হয়। যেমন, কাপ্তাই জল-বিদ্যুৎ প্রকল্পের সধরহঃবহধহপব ও উন্নয়নে কোন মনযোগই দেয়নি সরকার। এর ফলে সব দিক দিয়ে ারধনষব এই প্রজেক্টের বর্তমান অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ২৪২ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এই প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ৩৫ মেগাওয়াটে নেমে এসেছে। ৪টি ইউনিটের মধ্যে মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে (আমাদের সময়, ২৯ মে ২০২২)। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারের তরফে অর্থ সংকট থাকলেও কুইক- রেন্টালের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেয়া কিংবা বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে দশগুণ বেশি দামে গ্যাস কেনার জন্য বর্তমান আওয়ামীলীগ লুটেরা সরকারের অর্থের অভাব হয় না। কারণ এর একটা বিরাট অংশ যে তারাও পায় নিভৃতে, কোন টেন্ডার, মাঠপর্যায়ের কর্মযজ্ঞ ও জটিলতা ছাড়াই। বিদ্যুৎ খাত এখন সরকারের দুর্নীতি ও টাকা পাচারের প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে।
বিএনপি'র সময় চচজ প্রণয়ন করা হয় স্বচ্ছ ক্রয়-প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য: বিএনপি'র সময় প্রতিযোগিতাম‚লক খোলা টেন্ডারের মাধ্যমে আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্রয়ের জন্য সরকারি ক্রয় নীতিমালা (চচজ-২০০৩) প্রণীত হয়। যা ছিল জবাবদিহিতাম‚লক। স্বচ্ছ ও বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে খোলা টেন্ডারে ঠিকাদার নির্বাচনের মাধ্যমে ইঊঝঞ ইটণ নিশ্চিত করাই ছিল এর লক্ষ্য। কিন্তু আওয়ামী সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে এই ক্রয় নীতিমালা তোয়াক্কা না করে বিনা টেন্ডারে ঁহংড়ষরপরঃবফ ড়ভভবৎ এর মাধ্যমে স্বজনপ্রীতি করে নীতিনির্ধারকদের অনভিজ্ঞ ঘনিষ্ঠজনদের অর্থ লোপাটের দীর্ঘমেয়াাদী পরিকল্পনা নিয়ে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেয়। ১৯৯৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক্রমে বাংলাদেশে চড়বিৎ জবভড়ৎসং ঈড়সসরংংরড়হ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল ৩৫% বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ বেসরকারি খাতে দেয়া হবে। কিন্তু বর্তমানে সরকার দুর্নীতি করার জন্য ৫৭% বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছে। অবশিষ্ট অংশ করবে সরকারি উদ্যোগে। যেহেতু সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যুৎ একটি সরকার প্রদত্ত গণসেবা, সেই সেবার ম‚ল্য যেন সহনীয় অবস্থায় থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (ইঊজঈ) গঠন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অন্যান্য কমিশনের ন্যায় ইঊজঈ শুধু সরকারের ইচ্ছায় এবং আদেশে পরিচালিত হয়। ফলে ইঊজঈ রাবার স্ট্যাম্প প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ঈড়হংঁসবৎং অংংড়পরধঃরড়হ ড়ভ ইধহমষধফবংয সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের বিরোধীতা সত্তে¡ও নামমাত্র গণশুনানির খোলসে বিদ্যুতের ম‚ল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে বারবার। এর ফলে সাধারণ মানুষের পকেট কাটার বন্দোবস্ত করা হয়েছে ইঊজঈ’র মাধ্যমে। অথচ এ ইঊজঈ গঠন করা হয়েছিল জনস্বার্থ রক্ষার্থে। যেহেতু ইঊজঈ’র পক্ষে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যয়কৃত অর্থ অডিটিং এর ম‚লত কোনো অংংবৎঃরাব ভ‚মিকা নেই, এই সুযোগে ২০১৩-১৪ থেকে গত অর্থবছর পর্যন্ত বেসরকারি বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের আইপিপি এবং কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলোকে ৬১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা কেন্দ্র ভাড়া বা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিয়েছে সরকার। এই একই সময় ২ লাখ ৯৩ হাজার ২৯৪ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনেছে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (স‚ত্রঃ প্রথম আলো, ২৬ জুন ২০২০)। এসব কেন্দ্র প‚র্ণ সক্ষমতা তো দ‚রে থাক, ৩০ শতাংশও চালানো সম্ভব হয়নি। অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে অর্থ দেয়া হয়েছে। অথচ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সরকারি হলে শুধু কর্মকর্তাদের বেতন ছাড়া আলাদা কোনো খরচের দরকার পড়ত না। বর্তমানে বিদ্যুতের ৫২ শতাংশ উৎপাদনই বেসরকারি খাতে হয়। ১৪ বছর আগে বেসরকারি খাত ছিল ২৫ ভাগের কম। ১৯৯৬ সালে ছিল শ‚ণ্য।
বর্তমানে সরকার চৎবঢ়ধরফ সবঃবৎ থেকে কেন অর্থ কেটে নিচ্ছে তা কেউই জানে না। আবার যে ঠবহফড়ৎ থেকে চৎবঢ়ধরফ পধৎফ ক্রয় করা হয় তাকে ১০০০ টাকায় ১০ টাকা দিতে হয়। আপনি চৎবঢ়ধরফ পধৎফ এ ১০০০ টাকা পরিশোধ করে ঁষঃরসধঃবষু বিদ্যুৎ পাচ্ছেন ৭৪০ টাকার। ১০ টাকা নিয়ে যাচ্ছে ঠবহফড়ৎ, আর ২৫০ টাকা রহস্যজনকভাবে কোথায় যাচ্ছে তা ব্যবহারকারীরা জানে না। সাধারণ জনগণের পকেট কাটছে সরকার। আপনারা জানেন, বিদ্যুৎ বিক্রি হয় বাকিতে, যার বিল পেতে ৩ মাস সময় লেগে যায়। অনেকের বছরের পর বছর বিদ্যুৎ বিল বকেয়াও থাকে। কিন্তু চৎবঢ়ধরফ’র গ্রাহক নগদ টাকা দিয়ে বিুদ্যুৎ কেনে। তাই বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময় রাষ্ট্র এ সকল নাগরিককে ১০% রেয়াত সুবিধা দিয়েছিল। অথচ বর্তমান সরকার জনগণকে সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে।
এক নজরে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ খাতে সরকারের অদক্ষতা ও অপরিণামদর্শিতা!
সরকারের অপরিণামদর্শী ও অদক্ষ পরিকল্পনার কারণে বিদ্যুৎ খাতে আজকের এই অমানিশা।
চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি সক্ষমতা স¤পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন । যার ফলে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে।
বিশেষ দায়মুক্তি আইন করে রাষ্ট্রীয় স¤পদ লুটের বন্দোবস্ত পাকাপোক্তকরণ।
নিজস্ব গ্যাস উত্তোলনের যথাযথ উদ্যোগ না নিয়ে আমদানি নির্ভরতা বৃদ্ধি করায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জ¦ালানি নিরাপত্তার জন্য হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে।
স্বল্প উৎপাদন ব্যয়ের ইধংবষড়ধফ চড়বিৎ চষধহঃ অদক্ষতার কারনে সময়মত অপারশনে না আসায় সামগ্রিক উৎপাদন ব্যয় বেশি হচ্ছে।
চড়বিৎ ঝুংঃবস গধংঃবৎ চষধহ ২০১৬ অনুযায়ী অধিকাংশ কার্যক্রম গ্রহন করা হচ্ছে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাইট সিলেকশনের ক্ষেত্রে লোড বিবেচনা না করে, প্রভাবশালীদের খুশী করার জন্য অনুমোদন দেয়া হচ্ছে, ফলে উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। উৎপাদনের সাথে যথাযথ সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োজনীয় সঞ্চালন, বিতরণ ও গ্রাহক পর্যায়ে বণ্টন নেট-ওয়ার্ক নির্মাণ করা হয়নি। যার ফলে উৎপাদিত বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে, মানুষ সুফল পাচ্ছেনা।
ট্যারিফ নির্ধারণে প্রকৃত ব্যয় বিবেচনা না করে বিশেষ মহলকে সুবিধা দেয়ার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে অধিক ব্যয় বিবেচনা করা হচ্ছে।
অধিকাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র বৈদেশিক ঋণে নির্মিত হওয়ায় ডলারে দায় পরিশোধ করায় রিজার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
একক ক্রেতা হিসেবে ইচউই উৎপাদিত সকল বিদ্যুৎ ক্রয় করে। ইচউই কে প্রতিমাসে প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়। কোন বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকলেও প্রতি মেগাওয়াটের বিপরীতে মাসে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে হয় যা আত্মঘাতী।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার বিগত এক দশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দৃশ্যমান উন্নয়নের নামে ৪০টিরও অধিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ বিদেশী ঋণ নিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে একই সঙ্গে জনগণের কাঁধে ঋণের বোঝাও বেড়েই চলছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বার্ষিক নীট বিদেশী ঋণ গ্রহণের (অর্থাৎ গৃহীত ঋণ থেকে পরিশোধ বাদ দিয়ে) পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। কিন্তু গত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক নীট বিদেশী ঋণ গ্রহণের প্রাক্কলন করা হয় ৯৭ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরেও যে ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। বিভিন্ন দাতা সংস্থার ঋণ, সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট ও লাইন ক্রেডিটের আওতায় এসব ঋণ বাড়ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৮০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে চলছে মেগা দুর্নীতি। প্রায় সবগুলো প্রকল্পই ধীরগতিতে চলায় জনভোগান্তির পাশাপাশি প্রকল্প ব্যয়ও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিদেশী ঋণের ওপর নির্ভরতাকে আরও বাড়িয়ে অর্থনীতিকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। শ্রীলংকায়ও দেখা গিয়েছে ৫ বছরের প্রকল্প ৭ বছরেও শেষ হয়নি। যদিও পঞ্চম বর্ষ থেকেই ঋণ পরিশোধ শুরু হয়ে গেছে। এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রধান ২০টি প্রকল্প নির্মাণে ৪২.৮৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশী ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ, স্থানীয় মুদ্রায় যা ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। ৪০টি প্যাকেজের আওতায় এই ঋণ নেয়া হয়েছে। ২০২৪ সাল নাগাদ ১৩টি প্যাকেজের আওতায় নেয়া ৩২ বিলিয়ন ডলার ঋণের সুদ পরিশোধ শুরু হবার কথা। ২০২৪-২৬ সালের মধ্যে ঋণ পরিশোধের বড় চাপ আসবে এবং দিন দিন তা আরো বাড়তেই থাকবে। তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়া হবে বড় চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যেই চলমান রিজার্ভের টালমাটাল অস্থিরতা, ব্যাংকিং খাতে চরম অরাজকতা ও অব্যবস্থাপনা, তীব্র জ্বালানী সংকট, ডলার ঘাটতির কারণে আমদানি ব্যয় নির্বাহের সংকট, বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে উৎপাদন ব্যহত হয়ে সম্ভাব্য রফতানি সংকট, সব মিলিয়ে অর্থনীতি এক মহাসংকটে নিপতিত হয়েছে। এহেন সংকটকালে যেখানে দরকার ছিল প্রশাসন পরিচালন ব্যয়ে লাগাম টানা, বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জের মতো অপব্যয় বন্ধ করা, অপ্রয়োজনীয় রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি বাতিল করা; সেটি না করে সরকার জ্বালানি আমদানি বন্ধ করে দিয়ে এখন জনগণের ওপর লোডশেডিং চাপিয়ে দিয়েছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বিধায় এ অবৈধ সরকার জনকল্যাণের প্রতি কোন দায়দায়িত্বও বোধ করে না। এদিকে বর্তমানে জ¦ালানি সংকটের কথা বলে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে রাখার যে ঘোষণা দেয়া হলো তাতে ঐ কোম্পানিগুলোর বরং লাভ, কেননা কোনোরকম উৎপাদনের ঝামেলা ও ঝঞ্ঝাট ছাড়াই বসে বসে তারা ক্যাপাসিটি চার্জতো পেতেই থাকবে। অথচ এই বোঝা বহন করতে হচ্ছে জনগণকে। তাই জনগণের উচিত এখনই সোচ্চার হওয়া, বর্তমান কর্তৃত্ববাদী জবাবদিহীহীন সরকারের গুম, খুন, অমানুষিক অত্যাচার, অনাচার, নিশিরাতের ভোট ডাকাতি ও রাষ্ট্রীয় কোষাগার লোপাট, সর্বগ্রাসি দুর্নীতি এবং সাগরচুরি ও হরিলুটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারাদেশে লোডশেডিং এর নামে চলছে জনভোগান্তি। শহরের চেয়ে গ্রামে এ ভোগান্তি অনেক বেশি। গ্রামে লোডশেডিং এতো বেশি লম্বিত হচ্ছে যে, বিদ্যুৎ কখন থাকে এখন সেটাই যেন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি শিল্পসহ সকল উৎপাদন খাত দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে, এখন বিদ্যুতের লোডশেডিংজনিত জনদুর্ভোগ মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে যুক্ত হয়েছে। মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। চরমভাবে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সাধারণ জনগণের। আমরা বিদ্যুৎ খাতের এই বিপর্যয়, রিজার্ভের সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাসের দায় নিয়ে বর্তমান অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগের দাবী জানাচ্ছি। তা না হলে দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে জনগণই এ সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews