সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে : খন্দকার মোশাররফ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আজ সারা দেশের মানুষ একটি আওয়াজ তুলেছে, একটাই তাদের দাবি এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে দেশেকে ও জনগণকে রক্ষা করতে হবে।

সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে : খন্দকার মোশাররফ
আলোচনা সভায় বক্তারা।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আজ সারা দেশের মানুষ একটি আওয়াজ তুলেছে, একটাই তাদের দাবি এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে দেশেকে ও জনগণকে রক্ষা করতে হবে। এই সরকারকে বিদায় দিতে হবে। আমরা এ সরকারকে বিদায় দেওয়ার লক্ষেই আমরা ১০ দফা দিয়েছি। ১০ দফা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করলে দেখবেন, এই ১০ দফার সার কথা হচ্ছে, এই সরকারকে যতশিগগির সম্ভব বিদায় দেয়া।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ কেন এই সরকারকে বিদায় দিতে চাচ্ছে, কারণ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র হত্যা করেছে। গত ১২ বছর দিনের ভোট রাতে করে এই সরকার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। গণতন্ত্র হত্যা করার কারণে তাদের কারো প্রতি দায়দায়িত্ব নেই।’
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অডিটোরিয়ামে দেশবরেণ্য আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক আহ্বায়ক, সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের জীবদ্দশায় ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই অবস্থায় দেশের মানুষ উপলব্ধি করেছে যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, যারা আইনের শাসন দলীয়করণ করে ধ্বংস করেছে, তারা এইগুলো মেরামত করতে পারবে না।

তিনি বলেন, এক লাখ মামলায় দেশের প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ আসামি। মরহুম খন্দকার মাহবুব হোসেনও একাধিক মামলার আসামি। এ সরকারের সময় ৬০০ মানুষ গুম হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে। এজন্য র‌্যাব-পুলিশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জাকর।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আজ যে সরকার ক্ষমতায় আছে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। তিনি বলেন, আমাদের এখন দেশ আছে। জনগণ আছে। কিন্তু গণতন্ত্র নেই। আইনের শাসন নেই। দেশে সার্বভৌমত্ব নেই।

তিনি বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন আইন জগতের দিকপাল ছিলেন। তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন, চার বার সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি হন। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। মহান আল্লাহ তাকে বেহেশতবাসী করবেন, এই দোয়া করি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আইন ও রাজনৈতিক জগতে খন্দকার মাহবুব হোসেনের চলে যাওয়া আমাদের খুবই ক্ষতি করেছে। উনার সাহসিকতার যে প্রতিভা আজকের দিনে আমাদের খুবই বেশি প্রয়োজন ছিল।

তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক আদালতে আদেশ দেয়ার ১৮ মাস পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলার রায় পাল্টানো আমাদের গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ভোটের অধিকার ধ্বংস করেছে। এ বিষয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী লিখেছেন, এটা একটা ক্রিমিনাল অ্যাক্ট। এরপরও সেই অর্থে আইন জগতে কোনো ঝড় দেখিনি। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাকে যেভাবে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়, এরপর কি বিচারকরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন। এরপরও বিচার অঙ্গনে কোনো ঝড় উঠতে দেখিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রুল অফ ল’ নয়, রুল বাই ল’তে চলছে।
‘আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে হলে আইন অঙ্গনে একটি বড় ধরনের আন্দোলন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই,’ বলেন তিনি।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ১০ দফা বা ১২ দফা নয়, এখন দরকার এক দফা। একটি অবৈধ অনির্বাচিত সরকারকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করতে হবে। এজন্য জনগণের সাথে আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিতে হবে। সরকারকে বলতে হবে, আপনারা নির্বাচিত নন, আপনারা বিদায় নেন।
তিনি বলেন, আমাদের গণতন্ত্র চর্চার দারুণ অভাব আছে। আইনজীবীদের চিন্তা করতে হবে, গণতন্ত্রের জন্য কি কি প্রয়োজন। পুলিশ দিয়ে রাজনীতি করা, এটা পাকিস্তানেও ছিল না। রাজনীতির প্রথম অর্থ হল নিঃস্বার্থ হতে হবে। আপনি রাজনীতি করে বড়লোক হবেন, কোটিপতি হবেন। এটা রাজনীতি নয়। চরিত্রবান হতে হবে। জনগণের ভালোবাসা পেতে হবে এবং জনগণকে সাহায্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। রাজনৈতিক পরিবর্তন না হলে আন্দোলন করে কিছু পরিবর্তন আসবে না।

তিনি বলেন, ‘খন্দকার মাহবুব হোসেন আমার মামা ছিলেন। তার সাফল্যে আমি আশ্চর্য হয়েছি। তবে বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে তিনি এ পর্যায়ে এসেছেন।’
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে এবং আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ও বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সভায় বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বর্তমান সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির, আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নুরুল আমিন বেপারী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব ও বাংলাদেশ পিপল্স লীগের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গরীব নেওয়াজ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে খন্দকার মাহবুব হোসেনের স্ত্রী ড. ফারহাত হোসেন, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ সহস্রাধিক আইনজীবী অংশ নেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: