সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সবকিছুই ঘটেছে একটি অগণতান্ত্রিক বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফলে
প্রথম নিউজ, অনলাইন : শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সবকিছুই ঘটেছে একটি অগণতান্ত্রিক বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফলে। এই সহিংসতার পেছনে রাজনীতি জড়িত। এর সমাধান ঘটবে সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে। রোববার ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে নাগরিক প্রতিবাদ’ শীর্ষক এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সাম্প্রদায়িক যে সহিংসতাগুলো ঘটছে এর চেহারাটা সাম্প্রদায়িক হলেও এর চরিত্র রাজনৈতিক। এর সঙ্গে রাষ্ট্র জড়িত। বুধবার নড়াইলের দিঘলিয়ায় আকাশ সাহা নামের এক যুবকের কথিত ফেসবুক স্ট্যাটাসে সাম্প্রদায়িক হামলায় দোকান, মন্দিরের আসবাব ভাংচুর ও আগুন দেওয়ার প্রেক্ষিতে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। তিনি আরও বলেন, মাগুরায় যে আক্রমণ হলো তার আওয়াজটা আমাদের পরিচিত। বৃটিশ ও পাকিস্তানি আমলে ওই আওয়াজ আমরা শুনেছি, তখন রাষ্ট্র সেগুলোকে প্রশ্রয় দিয়েছে। বড় রাষ্ট্র শুধু ছোট হয়েছে। কিন্তু চরিত্রে এই রাষ্ট্রের কোনো বদল হয়নি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা কোন ধরনের রাষ্ট্র চেয়েছিলাম? স্বাধীনতার সময়ে আমাদের লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। সেই রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের অধিকার এবং সুযোগের সাম্যতা বজায় থাকবে। আমাদের রাষ্ট্রের উন্নয়ন হলেও অধিকাংশ মানুষ এই উন্নয়নের দ্বারা নিষ্পেষিত হচ্ছে। আগে মানুষ দরিদ্র ছিলো, বৈষম্য ছিলো। এখন যতো উন্নয়ন হচ্ছে, ততো বৈষম্য বাড়ছে। বৈষম্যের চিত্রগুলো ভয়াবহ। শতকরা ১০ জন মানুষ ধনী হচ্ছে, ৯০ জন বঞ্চিত হচ্ছে। সংখ্যালঘুরা নিপীড়িত হচ্ছে। নারী নির্যাতন ঘটছে। শিশু নির্যাতিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, যে নিপীড়ন চলছে, তার বিরুদ্ধে বুর্জোয়ারা কোনো রকম প্রতিক্রিয়া জানায় না। ‘বুদ্ধিজীবী ও নাগরিকেরা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন না দুটি কারণে। একটি হচ্ছে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো কথা বললে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পড়ে যাবেন, জামিন পাবেন না। আরেকটা আছে, প্রলোভন। এত সুবিধা তৈরি হয়েছে দেশে গত ৫০ বছরে। সেই সুবিধাগুলোর যে লোলুপতা, তা বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বত্র লোলুপতার রাজত্ব চলছে। সমাজ পরিবর্তনের চেষ্টা সর্বদলীয়ভাবে করতে হবে বলে মনে করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা নিন্দা করব, সরকারের কাছে আবেদন জানাব, নতুন আইন চাইব, পুরোনো আইন বাতিল চাইব, সবই চাইব। কিন্তু এগুলো যথেষ্ট নয়। এগুলো দিয়ে রাষ্ট্রের চরিত্রে পরিবর্তন আনা যাবে না। আমাদের দীর্ঘ ইতিহাসে রাষ্ট্র পরিবর্তন হয়নি, সেটা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। সঞ্চালনা করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, অভিনেতা মামুনুর রশীদ, চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মানবাধিকারকর্মী রানী ইয়েন ইয়েন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, আইনজীবী সারা হোসেন, ফারাহ কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ঊষাতন তালুকদার, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ্মাবতী দেবনাথ, নড়াইলের লোহাগড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার ভুক্তভোগী হ্যামলেট সাহা প্রমুখ।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews