শত্রুর জন্যও ন্যায় নিশ্চিত করতে হবে
প্রথম নিউজ, ঢাকা : পৃথিবীতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা ইসলামের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। মুসলমানদের একটি প্রধান ও আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য ন্যায়পরায়ণতা। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সব পর্যায়েই একজন মুসলমানের দায়িত্ব হলো ন্যায় আচরণ করা করা। সুবিচার করা। জুলুম ও বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহ ন্যায়-বিচার, সদাচরণ ও আত্মীয়দের দানের নির্দেশ দেন, আর তিনি নিষেধ করছেন অশ্লীলতা, অপকর্ম আর বিদ্রোহ থেকে। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। (সুরা নাহল: ৯০)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, হকদারদের হক তাদের কাছে পৌঁছে দিতে। তোমরা যখন মানুষের মাঝে বিচার করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে কত উত্তম উপদেশই না দিচ্ছেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন। (সুরা নিসা: ৫৮)
ইসলামে ন্যায় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ ধর্ম, বর্ণ, বন্ধু, শত্রু নির্বিশেষে সবার জন্য। কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য নয়। শুধু ইসলামের অনুসারী বা মুসলমানদের জন্য নয়। শান্তিপূর্ণ অমুসলিমদের জন্য তো বটেই কোনো জাতি বা গোষ্ঠী মুসলমানদের শত্রু হলেও ইসলাম তাদের প্রতি প্রতিও ন্যায় আচরণ করার নির্দেশ দেয়, জুলুম ও বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে। বিদ্বেষ ও শত্রুতাবশত জুলুম বা বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের সাক্ষ্যদাতা হিসেবে আল্লাহর পথে দৃঢ়ভাবে দন্ডায়মান থাক, কোন সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা তোমাদেরকে যেন এতটা উত্তেজিত না করে যে তোমরা ইনসাফ করা ত্যাগ করবে, সুবিচার কর, এটা তাকওয়ার নিকটবর্তী, তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। (সুরা মায়েদা: ৮)
কোনো মুসলমান, নিজের বন্ধু, প্রিয়জন বা নিজের দলের মানুষ যদি জুলুম করে, কোনোভাবেই তার জুলুমের সহযোগী হওয়া যাবে না। সে মুসলমান বলে বা নিজের দলের লোক বলে শত্রুর ওপর তার জুলুম ও বাড়াবাড়ি সমর্থন করা যাবে না। পাস্পরিক সহযোগিতা ন্যায়ের ক্ষেত্রে, অন্যায়ের ক্ষেত্রে নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর। (সুরা মায়েদা: ২)
নিজের ভাই, বন্ধু যদি জুলুম করে তাহলে তাকে বাঁধা দেওয়া, জুলুম থেকে বিরত করা আবশ্যক। জালিম অবস্থায় মুসলমান ভাইকে বাধা দেওয়াই তার সহযোগিতা গণ্য হয়। আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন বললেন, অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত হোক তোমার মুসলিম ভাইকে সাহায্য করো। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো অত্যাচারিতকে সাহায্য করব, অত্যাচারীকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি? আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে অত্যাচার থেকে নিবৃত্ত করো, এটাই অত্যাচারীর প্রতি তোমার সাহায্য।