রাশিয়াকে হুমকি দেওয়া যাবে না, বৈশ্বিক সংঘর্ষের হুঁশিয়ারি পুতিনের
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : পশ্চিমা দেশগুলোকে বৈশ্বিক সংঘাতের ঝুঁকি সৃষ্টির জন্য অভিযুক্ত করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, কাউকেই বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশকে হুমকি দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের বার্ষিকীতে তিনি এই সতর্কতা উচ্চারণ করেন। বৃহস্পতিবার (৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার বৈশ্বিক সংঘাতের ঝুঁকি সৃষ্টির জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে অভিযুক্ত করেছেন এবং বলেছেন, কাউকে বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশকে হুমকি দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।
রয়টার্স বলছে, টানা দুই বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়ান সৈন্যরা ইউক্রেনের পশ্চিমা-সমর্থিত বাহিনীর বিরুদ্ধে সাফল্যের সঙ্গে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে প্রেসিডেন্ট পুতিন ‘অহংকারী’ পশ্চিমা অভিজাত দেশগুলোকে নাৎসি জার্মানিকে পরাজিত করার ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ভুলে যাওয়ার এবং বিশ্বজুড়ে সংঘাত সৃষ্টি করার অভিযোগ এনেছেন।
পুতিন বৃহস্পতিবার মস্কোর রেড স্কোয়ারে বলেন, ‘আমরা জানি এই ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার অত্যধিকতা কোন দিকে নিয়ে যায়। রাশিয়া বিশ্বব্যাপী সংঘর্ষ প্রতিরোধে সবকিছু করবে। তবে একই সাথে, আমরা কাউকে আমাদের হুমকি দেওয়ার সুযোগ দেব না। আমাদের কৌশলগত বাহিনী সবসময় যুদ্ধের প্রস্তুতির অবস্থায় থাকে।’
২০২২ সালে রুশ সেনাবাহিনীকে ইউক্রেনে পাঠিয়েছিলেন পুতিন। সেই থেকে এই যুদ্ধ এখনও চলছে। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধকে তিনি পশ্চিমের সাথে (রাশিয়ার) লড়াইয়ের অংশ হিসাবে নিয়েছেন।
ইউক্রেন এবং পশ্চিমারা বলছে, পুতিন সাম্রাজ্যবাদী ধাঁচে ভূখণ্ড দখলের কাজে নিয়োজিত। তারা চলমান এই যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও বর্তমানে ক্রিমিয়া উপদ্বীপসহ ইউক্রেনের প্রায় ১৮ শতাংশ এবং পূর্ব ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে রাশিয়া।
রাশিয়া বলেছে, এসব ভূখণ্ড এক সময় রাশিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল এবং এখন এগুলো আবারও রাশিয়ার অংশ।
উল্লেখ্য, সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ২৭ মিলিয়ন লোককে হারিয়েছিল। যার মধ্যে ইউক্রেনের লাখ লাখ মানুষও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাৎসি বাহিনীকে বার্লিনে হটিয়ে দেওয়া হয় এবং সেখানেই যেখানে হিটলার আত্মহত্যা করেছিলেন।
এরপর ১৯৪৫ সালে রাইখস্ট্যাগের ওপরে লাল সোভিয়েত বিজয় ব্যানার উত্থাপিত হয়েছিল।
এদিন পুতিন বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শিক্ষা ভুলে যেতে চাইবে। তবে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের সাথে জড়িত সমস্ত মিত্রদের সম্মান জানিয়েছে রাশিয়া। তিনি জাপানি সামরিকবাদের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের লড়াইয়ের কথাও উল্লেখ করেন।
তার ভাষায়, ‘তবে আমরা মনে রেখেছি- মস্কো এবং লেনিনগ্রাদ, রজেভ, স্ট্যালিনগ্রাদ, কুরস্ক এবং খারকিভের কাছে, মিনস্ক, স্মোলেনস্ক এবং কিয়েভের কাছে, মুরমানস্ক থেকে ককেশাস এবং ক্রিমিয়া পর্যন্ত ভারী, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধগুলোতে মানবজাতির ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।’
প্রসঙ্গত, ১৯৪৫ সালের ৮ মে রাত ১১টা ০১ মিনিটে নাৎসি জার্মানির নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ কার্যকর হয়। আর তাই ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই দিনটিই ‘ইউরোপে বিজয় দিবস’ হিসাবে চিহ্নিত।
তবে মস্কোতে সেদিন ইতোমধ্যেই ৯ মে তারিখ শুরু হওয়ায় এই দিবসটিই সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘বিজয় দিবস’ হয়ে ওঠে।