ময়মনসিংহে শতবর্ষী স্কুলগুলোর মরণদশা, শিক্ষার্থী কেবল কাগজে-কলমে
শিক্ষার্থীর চেয়ে স্কুলে শিক্ষকদের উপস্থিতিই থাকে বেশি। তাই অলস সময় কাটে শিক্ষকদের। এমন মরণদশা ময়মনসিংহ নগরীর শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর।
প্রথম নিউজ, ময়মনসিংহ: এক সময় যে বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো এখন সেখানে নেই কোলাহল। শিক্ষার্থীর অভাবে খাঁ খাঁ করছে শ্রেণিকক্ষ। শিক্ষার্থীর চেয়ে স্কুলে শিক্ষকদের উপস্থিতিই থাকে বেশি। তাই অলস সময় কাটে শিক্ষকদের। এমন মরণদশা ময়মনসিংহ নগরীর শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর।
অনেক ইতিহাস বহন করা বিদ্যালয়গুলোতে দিন দিন জীর্ণতা বাসা বেধেছে। এক সময়ের জৌলুসময় স্কুলগুলো শিক্ষকদের উদাসীনতা, শিক্ষক ও কমিটির দ্বন্দ্বে এখন রুগ্ন। শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। ভাড়া করা শিক্ষার্থী দিয়ে টিকে আছে প্রতিষ্ঠানগুলো আর এভাবেই বেতন জুটছে শিক্ষকদের। শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহের প্রাচীন শিক্ষালয়গুলোর দুরবস্থা মানতে পারছেন না সচেতন নাগরিকরা।
গত এক সপ্তাহ ঘুরে ১৪০ বছরের পুরোনো সিটি কলেজিয়েট স্কুল, ১২০ বছরের পুরোনো অ্যাডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন, ১২০ বছরের পুরোনো মৃত্যুঞ্জয় স্কুল এবং ৯৬ বছরের পুরোনো রাধা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা যায় বেহাল চিত্র। অথচ কয়েক দশক আগেও স্কুলগুলোর জৌলুস ছিল, ভরপুর ছিল শিক্ষার্থীতে। কিন্তু শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ ও কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, আশপাশে নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় তাল মেলাতে না পারায় দিন দিন শিক্ষার্থী খরা শুরু হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
বর্তমানে কাগজ-কলমে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে নেই। নগরীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেড়ে ওঠা নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে প্রাচীন স্কুলগুলোতে ভর্তি দেখিয়ে সরকারি বই নেওয়া হয় শুধু। আবার বোর্ড পরীক্ষাগুলোও দেওয়ানো হয় এসব প্রতিষ্ঠান থেকে। ফলে স্কুলগুলোতে পরীক্ষার সময় ছাড়া শিক্ষকরা পার করেন অলস সময়। শিক্ষার্থীদের কোলাহল থাকে না বছরজুড়ে। শিক্ষকদের সক্ষমতা থাকলেও পাঠদান করাতে না পারার আক্ষেপ রয়েছে অনেক শিক্ষকের।
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম র্যাংলার আনন্দমোহন বসুর পৈত্রিক ভিটায় প্রায় এক একর জমিতে ময়মনসিংহ নগরীর প্রাণকেন্দ্রে ১৮৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় সিটি কলেজিয়েট স্কুলটি। শুরুতে আনন্দমোহন ইন্সটিটিউশন নাম দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। এটিতে প্রথম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পাঠ চালু হয়। কিন্তু এটি ডিগ্রি পর্যন্ত উত্তীর্ণ করা হলে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি শাখা স্থানান্তরিত হয় কাঁচিঝুলিতে বর্তমান আনন্দমোহন কলেজে। স্কুল আলাদা রাখতে গিয়ে তৎকালীন নিয়ম অনুযায়ী একই শহরে এক ব্যক্তির নামে দুটি প্রতিষ্ঠান থাকার সুযোগ ছিল না। ফলে আনন্দমোহন বসুর কোলকাতার সিটি কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শাখা হিসেবে ১৯০১ সালে ময়মনসিংহে নিজ ভিটের শিক্ষালয়টির নাম দেওয়া হয় সিটি কলেজিয়েট স্কুল। এই শাখার প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন গিরিশ চন্দ্র চক্রবর্তী। নব্বই দশক পর্যন্ত ময়মনসিংহ নগরীর নামকরা এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ও ফলাফল ছিল অভাবনীয়।
কিন্তু ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এখন জৌলুস হারিয়েছে। অথচ শিক্ষা নগরী হিসিবে পরিচিত এই শহরে সিটি কলেজিয়েট স্কুলটির বিপরীত দিকেই বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি চারদিকে সাফল্যের সৌরভ ছড়াচ্ছে। এক সময় ময়মনসিংহ শহরে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান সিটি কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখর থাকতো। শিক্ষার্থীদের ঠাঁই দেওয়ার জায়গা মিলত না। কিন্তু এখন চিত্র উল্টো।
স্কুল কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৩১৪ জন। এমপিও ভুক্ত শিক্ষক আছেন ৯ জন, খন্ডকালীন শিক্ষক ২ জন এবং কর্মচারী আছেন ৫ জন। কাগজপত্রে ৩১৪ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে স্কুলটিতে তার নমুনা দেখা যায়নি। সম্প্রতি হওয়া নতুন ভবনের দুটি কক্ষে গত ৯ জুলাই গিয়ে শিক্ষার্থী পাওয়া যায়- একটিতে একজন এবং অপর শ্রেণিতে পাওয়া যায় ৩ জন। অথচ নব্বই দশকেও স্কুলটিতে প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠ নিতো। প্রতিযোগিতা করতো নগরীর অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে।
শিক্ষকরা জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে কাগজে কলমে ভর্তি থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে পাঠ নেয় শিক্ষার্থীরা। তাদের প্রতিষ্ঠান থেকেই পরীক্ষায় অংশ নেয়। সে কারণে নিয়মিত শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম। বিদ্যালয়টির সিনিয়র শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম পুরো স্কুলটি ঘুরে ঘুরে দেখান। ১৯৯১ সালে স্কুলটিতে যখন যোগদান করেন, তখন এটি শিক্ষার্থীতে ভরপুর ছিল। বর্তমানে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ায় খুব আক্ষেপ প্রবীণ এই শিক্ষকের। কিছুদিন পর অবসরে যাবেন তিনি। শিক্ষার্থী বাড়ার সম্ভবনা সম্পর্কে বলেন, আমি মরলে শিক্ষার্থী বাড়তে পারে। তিনি বলেন, নব্বই দশকের শেষের দিকে হরিজন পল্লীর শিক্ষার্থী ভর্তি করলে ভালো পরিবার তাদের সন্তানদের ভর্তি বন্ধ করে দেয়। এর প্রভাবে সঙ্গে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে অবস্থা দিনদিন অবনতির দিকে যায়।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক টিআইএম বদরুদ্দৌলা সিদ্দিক (ফরহাদ) বলেন, ২০১২ সালে যোগদানের পর থেকে স্কুলটিকে কাঠামোতে আনার জন্য কাজ করছি। আগে এখানে স্কুল চলাকালীন মাদকসেবীদের আড্ডা হতো। এখন নেই। আগে স্কুলের সংখ্যা কম ছিল তাই শিক্ষার্থী বেশি ছিল। কিন্তু এখন আশপাশে স্বীকৃতি ছাড়া স্কুল হওয়ায় এখানে শিক্ষার্থী কমে গেছে।
১৯০৩ সালে স্থাপিত হয় অ্যাডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন। ময়মনসিংহ নগরীর সেহরা মুন্সিবাড়ি এলাকায় এ প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সুযোগ রয়েছে ১২০ বছরের পুরোনা বিদ্যালয়টিতে, আছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম। আবাসিক দশজন শিক্ষার্থী থাকার সুযোগ রয়েছে। যদিও রয়েছে ৮ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের সামনের বিশালাকৃতির মাঠ শিক্ষার্থীদের পদস্পর্শের জন্য ব্যাকুল। তিনতলা ভবনের বিশাল বিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি কক্ষই থাকে শিক্ষার্থী শূন্য।
গত বুধবার সকাল সোয়া ১০টায় বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শিক্ষার্থীকে স্কুলের বারান্দায় পিটি করানো হচ্ছে। তারপর বিকেল ৩টায় গিয়ে দেখা যায়- শিক্ষকদের মিলনায়তনে আড্ডায় মশগুল শিক্ষকরা। বিদ্যালয়টিতে ১৭ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারি কয়েক লাখ টাকা সরকারি বেতন পান প্রতি মাসে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যান জানতে চাইলে অপ্রস্তুতি পরিস্থিতিতে পড়ে ও কোন ক্লাসে কত শিক্ষার্থী তা বলতে অনিহা প্রকাশ করেন। তবে খাতাপত্রে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রাথমিক শাখায় ৮৮ জন এবং মাধ্যমিকে ২৮১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানের। কাগজে কলমে এমন শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে শিক্ষার্থী খুবই নগন্য। নন এমপিও ভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভর্তি দেখিয়ে চলছে স্কুলটি জানিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষক। যারা ভর্তি আছে তারাও স্কুলে ঠিক মতো আসে না। অথচ আশির দশকে স্কুলটিতে শিক্ষার্থী ছিল হাজারের উপর।
অবিভক্ত ভারতে ১৯০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠা হয় মৃত্যুঞ্জয় স্কুল। বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও আইনজীবী প্রয়াত অনাথ বন্ধু গুহ তার বাবা মৃত্যুঞ্জয় গুহের নামে শহরের ব্রহ্মপুত্র পাড়ে আদালতপাড়ায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। অমীয় ভূষণ গাঙ্গুলি ছিলেন এর প্রথম প্রধান শিক্ষক। খ্যাতিমান শিক্ষকদের পাঠদানে কড়াকড়ি চরিত্রের এই স্কুলটিতে আশির দশক পর্যন্ত ছাত্র সংখ্যা এবং ফলাফল ছিল ঈর্ষণীয় অবস্থানে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও রাজনীতিক প্রয়াত আবুল মনসুর আহম্মদ ছিলেন এই স্কুলের প্রথম মুসলিম ছাত্র। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ও নিয়ন্ত্রণে ছিল মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের কার্যক্রম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক বজলুর রহমান, কথা সাহিত্যিক রাহাত খান, সংসদের বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদের বাবা খান বাহাদুর উমেদ আলী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রধান ড. অরবিন্দ গোস্বামী, সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানসহ অবিভক্ত ভারতের বহু খ্যাতিমান সাহিত্যিক, রাজনীতিক, সাংবাদিক, আইনজীবী ও পদস্থ কর্মকর্তা এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন।
প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যবস্থা রয়েছে স্কুলটিতে। আশির দশকে স্কুলটিতে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী থাকলেও নব্বই দশকের শেষ দিক থেকে কমতে থাকে শিক্ষার্থী। বর্তমানে কাগজপত্রে স্কুলটিতে প্রথম থেকে দশম এবং কারিগরি শাখায় নবম-দশম শ্রেণি মিলে শিক্ষার্থী আছে ৫১৭ জন। এর মধ্যে বাইরের নন এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীও রয়েছে অনেক। স্কুলটিতে জেনারেল শাখায় ১৬ শিক্ষক, ভোকেশনাল শাখায় ১১ জন শিক্ষক, প্রাথমিক শাখায় ১০ জন শিক্ষক এবং ৪ জন কর্মচারী রয়েছেন। স্কুলটিতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বেড়েছে দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের।
১২২ বছরের পুরোনো স্কুলটিতে গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টার দিকে গিয়ে অল্প কিছু শিক্ষার্থী পাওয়া যায়। সহকারী প্রধান শিক্ষকের কক্ষে পড়ে আছে চকচকে নতুন বই। নবম শ্রেণির ব্যবসায়ীক উদ্যোগ ক্লাস নিচ্ছিলেন শিক্ষক খোরশেদ আনোয়ার। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রুকুন উদ্দিন বলেন, ২০১০ সালের আগে স্কুলটিতে প্রতি ক্লাসে ৮ থেকে ১০ জনের বেশি ছাত্র ছিলো না। এখন ছাত্র অনেক বেড়েছে। শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার কারণ স্কুলের পাশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়া, শিক্ষকদের গ্রুপিং, পাঠদানে অনিহা অন্যতম কারণ। এছাড়া এলাকার মানুষও সহযোগিতা প্রবণ নয়। এলাকার কোনো শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি করায় না অভিভাবকরা। তবে এখন বাড়ি বাড়ি শিক্ষকরা নিয়মিত গিয়ে শিক্ষার্থী বাড়ানো হচ্ছে। কেউ অনুপস্থিত থাকলে ফোন করে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
জমিদার অঘোরবন্ধু গুহ তার মা রাধা সুন্দরীর নামে ৯৬ বছর আগে ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রাধা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে ৮ জন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারী রয়েছেন স্কুলটিতে। প্রধান শিক্ষকসহ বেশ কয়েকটি পদ শূণ্য। কাগজপত্রে বিদ্যালয়টিতে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী আছে ২১০ জন। এর মধ্যে প্রাথমিকে ৬২ জন এবং মাধ্যমিকে ১৪৮ জন। কিন্তু বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে নিয়ে শ্রেণি কক্ষের অবস্থা দেখতে গেলে, দুইটি শ্রেণিকক্ষে দুজন ছাড়া বাকি ক্লাস ফাঁকা পাওয়া যায়। সপ্তম শ্রেণিতে লিসা হরিজন ও দশম শ্রেণিতে ঝুমা আক্তার নামে দু’জন শিক্ষার্থী পাওয়া যায়। কিছুক্ষণ স্কুলে অবস্থান করার পর দেখা যায়, বেলা ১১ টার দিকে আরও তিনজন শিক্ষার্থী আসে। যানজটে দেরি হয়েছে বলে জানায় তারা। তাদের মধ্যে সপ্তম শ্রেণির তায়েবা আক্তার নীলা জানায়, তাদের ক্লাসে বড়জোড় ৭ জন ছাত্রী ক্লাসে আসে। শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান নূর ও সাবিকুন নাহার জানায়, তাদের ক্লাসে শিক্ষার্থী আসে ৪ জন। স্কুলে সহপাঠী না থাকায় তাদেরও স্কুলে আসতে মন চায়না জানায় শিক্ষার্থীরা।
গণিতের শিক্ষক প্রবীর কুমার সাহা বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন ২০০৩ সালে। কিন্তু এখানে এসে তার তীক্ত অভিজ্ঞতা। ৩-৪ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদান করতে ভালো লাগে না। এটিকে দুর্ভাগ্য বলছেন তিনি। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টিতে দুর্বল শিক্ষার্থী বেশি। কলোনীর বাচ্চারা ভর্তি হতো। দরিদ্র ও নিম্ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ায় অন্য শিক্ষার্থীরা আস্তে আস্তে সরে যেতে শুরু করে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজীম উদ্দিন বলেন, প্রথম থেকে দশম শ্রেণির অনুমোদনের কাগজ হারিয়ে গেছে। সে কারণে প্রাথমিকের শিক্ষক নেই একজনও। এতে শিক্ষার্থী খুব কম। ২০০২ সালের দিকে বিদ্যালয়টিতে ধস শুরু হয়। কমিটির সঙ্গে দ্বন্দ্বে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক স্কুল ছেড়ে চলে গেলে আর ঘুরে দাঁড়ানো যায়নি। তবে আমরা উন্নতির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। ময়মনসিংহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহছিনা খাতুন বলেন, শিক্ষার্থী ছাড়া প্রতিষ্ঠান চলবে, এটি হতে পারে না। সম্প্রতি আমি যোগদান করেছি। ইতোমধ্যে বিষয়গুলো নিয়ে আমার টিম কাজ করছে। কীভাবে এসব সমস্যার সমাধান করা যায় সেই চেষ্টা করছি।