মুশফিকের সেঞ্চুরি জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে জয়ের পথে বাংলাদেশ। আইরিশরা টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ২১৪ রানে অলআউট হয়।

মুশফিকের সেঞ্চুরি জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ
মুশফিকের সেঞ্চুরি জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ

প্রথম নিউজ, খেলা ডেস্ক: আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে জয়ের পথে বাংলাদেশ। আইরিশরা টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ২১৪ রানে অলআউট হয়। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের সংগ্রহ পৌঁছে ৩৬৯ রানে । এতে প্রথম ইনিংসে ১৫৫ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ। আর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দিশাহারা আয়ারল্যান্ড। গতকাল আইরিশরা ১৩ রানে হারায় ৪ উইকেট। দ্বিতীয় দিন শেষে তাদের সংগ্রহ  ছিল ২৭ রান ৪ উইকেট হারিয়ে।  ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে তখনও তাদের প্রয়োজন ১২৮ রান। অন্যদিকে বাংলাদেশের দরকার অবশিষ্ট ৬ উইকেট। গতকাল শেষ বিকালে দুটি করে উইকেট ভাগাভাগি করেন বাংলাদেশ দলের দুই বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম। নিজের স্পেলে ৭ ওভারের ১১ রান দের সাকিব। আর তাইজুল দেন ৭ ওভারে ৭ রান। এর আগে ব্যাট হাতে বাংলাদেশকে জয়ের ভিত গড়ে দেন মুশফিকুর রহীম।

চার নম্বরে নেমে দারুণ সেঞ্চুরি হাঁকান ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ খ্যাত ব্যাটার। তার সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে পথ দেখান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কিন্তু ১৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন তিনি। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে ১২৬ রান করেন মুশফিক। ১৬৬ বল খেলে ১৫টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকান তিনি। টেস্টে এটি তার ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি। অন্যদিকে ১৪ চারে ৯৪ বলে ৮৭ রান করেন সাকিব। এছাড়া মেহেদি হাসান মিরাজ ৫৫ ও লিটন দাস ৪৩ রান করেন।  আয়ারল্যান্ডের অফ-স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ১১৮ রানে ৬ উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় ইনিংসেও দুর্দান্ত তিনি। তবে এবার তার সঙ্গে বল হাতে দাপট দেখাচ্ছেন সাাকিব। তাইজুল ও সাকিবের শিকার দুটি করে উইকেট। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন ৩৪ রান তুলতে বাংলাদেশ হারিয়েছিল দুই উইকেট।

গতকাল দিনের শুরুতে ১৭ রান করে সাজঘরে ফিরে যান মুমিনুল হক সৌরভ। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন মুশফিক ও সাকিব আল হাসান। দুজনে মিলে খেলার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনেন। গড়ে তোলেন দেড় শতাধিক রানের জুটি। দু’জন চলতে থাকেন ব্যক্তিগত শতকের পথে। বিশেষ করে ব্যাট হাতে আগ্রাসী ভূমিকা রাখেন টাইগার অধিনায়ক। সম্মুখ থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি, প্রথম বল থেকেই তাকে দেখা যায় আক্রমণাত্মক মেজাজে।  দু’জনে মাত্র ১৮৮ বলে যোগ করেন ১৫৯ রান। মারমুখী ব্যাটিং অব্যাহত রেখে ৪৫ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩১তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাকিব। তবে আরো একবার সমর্থকদের হতাশ করেন সাকিব,  সেঞ্চুরি ছোঁয়ার সুযোগ আর সম্ভাবনা হাতছাড়া করে । ফেরেন ৯৪ বলে ৮৭ রান করে। তবে হতাশ করেননি মুশফিক। নিজের মতো করে খেলতে থাকেন এক প্রান্ত আগলে রেখে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যাটও হয়ে ওঠে আগ্রাসী, রান বাড়াতে থাকেন দলের।

একপর্যায়ে গিয়ে তুলে নেন  সেঞ্চুরিও। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন  লিটন দাস। তবে তিনিও দলকে উপহার দেন দারুণ হাতাশা। ব্যাট হাতে ৪১ বলে ৪৩ রানে থামেন লিটন। ভাঙে মুশফিকের সঙ্গে তার ৮৪ বলে ৮৭ রানের জুটি। শেষ পর্যন্ত দলীয় ৩৩১ রানের সময় আউট হন মুশফিক। দেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে এখন যৌথভাবে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক  তামিম ইকবাল ও মুশফিক। ৫ উইকেটে ৩১৬ রান চা-বিরতির পর নেমে বেশিদূর এগুনো যায়নি। মুশফিকের বিদায়ের খানিক পর ম্যাকব্রেইনের বলে বোল্ড হয়ে যান তাইজুল ইসলাম। টেকেননি শরিফুল ইসলাম, ইবাদত হোসেনও। ৩৫৪ রানে পড়ে যায় ৯ উইকেট। খালেদ আহমেদকে এক পাশে রেখে অবশ্য নিজের ফিফটিটা তুলে নেন মিরাজ। লেগ স্পিনার বেন হোয়াইটকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়ে থামেন মিরাজ। ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট ফিফটি করতে ৬৬ বল খেলেন মিরাজ। ৬ চারের সঙ্গে হাঁকান ২টি ছক্কা।

টেস্টে এ পর্যন্ত ৬৫ ইনিংসে সাকিব-মুশফিক জুটিকে সেরা। তারা এই ফরম্যাটে একসঙ্গে ব্যাটিং করে ২৮০২ রান করেছেন।  দেশের হয়ে টেস্টে আর কোনো জুটি এত রান তুলতে পারেনি। দুজনের জুটি থেকে যৌথভাবে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির সংক্যা ৫টি। আর একটি জুটি থেকেই সাকিবুমুশফিকের সমান ৫টি সেঞ্চুরি এসেছ্তেহাবিবুল বাশার ও জাভেদ ওমর। ২০০১ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে এই দুই সাবেক ৩২ ইনিংসে জুটি বেঁধে ১৩২১ রান তুলেছেন, সেঞ্চুরি ৫টি, ফিফটিও ৫টি। জুটিতে ব্যক্তিগত ফিফটিুসংখ্যায় অবশ্য সাকিবুমুশফিকের ওপরে কেউ নেই। সর্বোচ্চ ১৭টি ফিফটির দেখা মিলেছে দুজনের জুটিতে।