বিশ্ব মিডিয়ায় ড. ইউনূসের রায়
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, প্রফেসর ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের আদালত।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়ার সংবাদ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ অন্যান্য দেশের আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো। সংবাদ প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা, চীনের সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, এবিসি, গালফ নিউজ, ফ্রান্স২৪, দ্য গার্ডিয়ান, ব্লুমবার্গ, এএফপি, বিবিসি, ইয়াহু নিউজ, রয়টার্স, হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো প্রভাবশালী গণমাধ্যম।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, প্রফেসর ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের আদালত। তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। ৮৩ বছরের ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যতা থেকে বের করে আনার জন্য তিনি ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। তাকে বিশ্বজুড়ে ক্ষুদ্রঋণের অগ্রদূত বলে বর্ণনা করে বার্তা সংস্থাটি। কারাদণ্ড পাওয়ার পর ইউনূসের বক্তব্য তুলে ধরেছে মার্কিন গণমাধ্যম এবিসি নিউজ। গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, প্রফেসর ইউনূস একজন অর্থনীতিবিদ। তিনিসহ তার কোম্পানির তিন কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। রায়ের পর ইউনূস বলেন, আমার বিরুদ্ধে এই রায় সব আইনি নজির ও যুক্তির পরিপন্থি। আমি বাংলাদেশের জনগণকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং আমাদের প্রতিটি নাগরিকের জন্য গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে এক কণ্ঠে কথা বলার আহ্বান জানাই।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশের আদালতের রায়ে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস কারাগারের মুখোমুখি’। খবরে লেখা হয়েছে, শ্রম আইন লঙ্ঘনের অপরাধে নোবেলজয়ী প্রফেসর ইউনূসকে দোষী সাব্যস্ত করেছে বাংলাদেশের আদালত।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনূস ছয় মাসের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন। গত সোমবার শ্রম আইনের একটি মামলার রায়ে তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়। যদিও তার সমর্থকরা এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করেছেন। প্রতিবেদনে ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার কৃতিত্ব দেয়া হয় ৮৩ বছর বয়সী ইউনূসকে। তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনূসের বিরুদ্ধে দরিদ্রদের ‘রক্ত চোষার’ যে অভিযোগ এনেছেন তাও উল্লেখ করা হয় ওই রিপোর্টে। রায়ের আগে প্রধান প্রসিকিউটর খুরশিদ আলম খান এএফপিকে বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি যে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্যরা শ্রম আইনের বাধ্যতামূলক প্রয়োজনীয়তা লঙ্ঘন করেছেন।
একই দৃষ্টিকোণ থেকে রিপোর্ট করে আল-জাজিরাও। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এক মাসের মধ্যে আপিলের শর্তে জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্টে ইউনূস সমর্থকদের এই রায়কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ দাবি করার বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়েছে। খবরে বলা হয়, শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে আইন লঙ্ঘনের দায়ে ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
সিবিএস জানিয়েছে, ইউনূস এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ৮৩ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যে অপরাধ করিনি তার জন্য শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এটাই আমার ভাগ্য, জাতির ভাগ্য। আমরা এই রায় মেনে নিয়েছি, কিন্তু এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো। চীনের সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট লিখেছে, প্রফেসর ইউনূস দরিদ্রদের মধ্যেও যারা দরিদ্র তাদের ব্যাংকার হিসেবে পরিচিত। এই গরিব মানুষেরাও যাতে তাদের খামার বা ব্যবসা বড় করতে বিনিয়োগ করতে পারে এবং নিজেদের উপার্জন বাড়াতে পারে, তার জন্যই কাজ করেছেন ইউনূস। কিন্তু তার জনপ্রিয়তার কারণে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শত্রু হয়ে উঠেছেন।
এর আগে প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর থেকেই উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল বিশ্ব নেতারা। গত আগস্টে এক খোলা চিঠিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৬০ নাগরিক ইউনূসের বিরুদ্ধে ‘অব্যাহত বিচারিক হয়রানির’ নিন্দা জানান। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে শতাধিক নোবেল বিজয়ী ছিলেন। ইউনূসের বিরুদ্ধে ‘বিচারিক হয়রানি’ বন্ধের আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও। ইউনূসের সাজা ঘোষণার পর মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে।