ধেয়ে আসছে উজানের পাহাড়ি ঢল, সতর্ক থাকার আহবান

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ভারতের গজলডোবা ভেঙে ও অবিরাম বর্ষণে পাহাড়ি ঢল নেমে আসতে পারে তিস্তা নদীতে।

প্রথম নিউজ, গাইবান্ধা: ধেয়ে আসছে উজানের পাহাড়ি ঢল। তিস্তা ও যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্লাবিত হতে পারে।  জনসাধারণ ও নদী তীরবর্তী জনপদের মানুষকে সতর্ক থাকার জন্য মাইকে বার্তা প্রচার করা হচ্ছে গাইবান্ধার চার উপজেলায়। ফলে আতঙ্কিত লোকজন বুধবার থেকেই নিরাপদে যেতে শুরু করেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ভারতের গজলডোবা ভেঙে ও অবিরাম বর্ষণে পাহাড়ি ঢল নেমে আসতে পারে তিস্তা নদীতে। তিস্তা নদীর পানিতে প্লাবিত হতে পারে গাইবান্ধাসহ উত্তরের কয়েক জেলার নদী তীরবর্তী এলাকা। প্রবলবেগে পানি আসছে- এই খবরে গাইবান্ধার তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র নদীর ১৬৫ চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।

সাধারণ মানুষের মধ্যে বন্যাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় গাইবান্ধার তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র নদীর চরাঞ্চল ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গাইবান্ধা সদরসহ ৪ উপজেলার ১৬৫টি চরাঞ্চলের ৫ লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।

ব্রহ্মপুত্র নদীর চরের বাসিন্দা ও কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির বলেন, পাহাড়ি ঢলে এর আগে ২ দফা বন্যায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। আবার পাহাড়ি ঢল নামতে পারে- এই খবর শুনে চরাঞ্চলের মানুষ তাদের ঘরবাড়ি গোছাতে শুরু করেছে। চরাঞ্চলের মানুষ মাইকিং শুনে তারা অনেকেই নদীর পাড় হয়ে গাইবান্ধা শহর ও বাঁধের অপর প্রান্তে খুঁটি বসাতে শুরু করেছে।

সাঘাটা থেকে সুন্দরগঞ্জ পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে অনেক পরিবার ঘরের টিন খুলে নিয়ে এসে ছাপরা তুলতে দেখা গেছে। অনেকে নদী পার হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। গরু ছাগল হাঁস মুরগি নিয়ে চরাঞ্চলের ঘরবাড়ি রেখে জীবন বাঁচাতে আশ্রয় কেন্দ্র ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। আকাশের অবস্থা দেখে আর পাহাড়ি ঢল আসছে সেই আতঙ্কে সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়েছেন বুধবার বিকালে। নদীর বাঁধ ও বাঁধের পাশের স্কুল কলেজগুলোতে লোকজন আসতে শুরু করেছে। তিস্তা নদীর মিন্টু মিয়ার চরের বাসিন্দা ফজলু মিয়া বলেন, মাইকিং শুনে তার তিন মেয়ে, স্ত্রী আর গবাদি পশু নিয়ে জীবন বাঁচাতে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন।

পোড়ার চরের বাসিন্দা রেজা মেম্বর বলেন, নিজের নৌকা বলে আমার না হয় সুযোগ হলো কিন্তু চরের এতো মানুষ কোথায় যাবে। এলাকায় উঁচু আশ্রয় কেন্দ্র নেই মানুষে কোথায় যাবে। আল্লাহ ভরসা করে আছেন পোড়ার চরের ৩ শতাধিক পরিবার।

গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে ৪টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মানুষ, গবাদি পশুসহ সম্পদ রক্ষা ও রেসকিউ করার জেলা প্রশাসন থেকে ৪টি বড় নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুকনো খাবার, পানি, ওষুধসহ সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।