ধানমণ্ডি সড়কের গাছ কাটা বন্ধের দাবি মেয়রকে স্মারকলিপি

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে আয়োজকরা নগর ভবনে গিয়ে মেয়র বরাবর স্মারকলিপি দেন।

ধানমণ্ডি সড়কের গাছ কাটা বন্ধের দাবি মেয়রকে স্মারকলিপি

প্রথম নিউজ, অনলাইন : রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকার সড়ক বিভাজকের গাছ কাটা বন্ধ ও কেটে ফেলা গাছের জায়গায় নতুন গাছ রোপণের দাবি করেছে সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন কমিটি। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে আয়োজকরা নগর ভবনে গিয়ে মেয়র বরাবর স্মারকলিপি দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, লেখক পাভেল পার্থ, নগরবিদ আমিন মোহাম্মদ খান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের সমন্বয়কারী আমীরুল রাজীব বলেন, সাত মসজিদ সড়কে আগ্রাসী প্রজাতির গাছ খুব একটা নেই। গাছগুলো কোনোভাবেই সড়ক ও নাগরিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়। গাছগুলো রেখেই সড়ক সম্প্রসারণ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। রাতের আঁধারে গাছগুলো কাটা হয়েছে। সড়ক সম্প্রসারণের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারদের কাছে গাছ কাটার অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে সঠিক অনুমোদনপত্র দেখাতে পারেননি।

অবৈধভাবেই গাছগুলো কাটা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের ভাষ্য, গাছগুলো সড়কদ্বীপের জন্য বেমানান ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাহলে এই সড়কে যদি ভুল করে গাছ লাগানো হয়ে থাকে, সে ভুল করা কর্মকর্তাকে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সে রাস্তায় সর্বসাকুল্যে ৩০টি গাছ রয়েছে। প্রায় ৬০০’র মতো গাছ কাটা হয়েছে। সাতমসজিদ সড়কের ঐতিহ্য হিসেবে এই গাছগুলো রক্ষায় আমরা কাজ করছি। রাতে সবাই মিলে পাহারা দিচ্ছি। আমাদের দাবি একটাই, এই সড়কের গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। আবার নতুন করে গাছ রোপণ করতে হবে।

 সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের নগরপিতারা কিছুদিন পর পর বিদেশে যান। তারা বিদেশে গিয়ে কী নিয়ে আসেন সেটাই প্রশ্ন। নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। গত ৫দিন যে তাণ্ডব দেখেছি তা দায়িত্বজ্ঞানহীন এক নগর প্রশাসনের মাধ্যমে হয়েছে। যারা নাগরিকদের কথা শোনেন না। তাদের যা ইচ্ছা তাই করেন। কারণ তাদের তো ভোটের প্রয়োজন নেই। ভোট চাইতে আসতে হবে না। আমরা নগর প্রশাসন থেকে স্বস্তি, শান্তি আশা করি। আমাদের নগর প্রশাসনে যারা রয়েছেন তারা বলেন বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাচ্ছে। আসলে তারা সিঙ্গাপুরেই বাস করেন। নগরবাসী নয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে বেশকিছু দাবি উত্থাপন করা হয়। 

সেগুলো হলো- সাত মসজিদ সড়কদ্বীপে গাছ কাটা অবিলম্বে বন্ধ করা এবং কেটে ফেলা গাছগুলোকে স্থানীয় প্রজাতি দ্বারা প্রতিস্থাপন করা; গাছ রোপণ করে তা আবার কেটে ফেলার রেওয়াজ বন্ধ করতে হবে; নগরে বনায়ন, গাছ রক্ষা ও কাটার প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে; সিটি করপোরেশন এলাকায় যেকোনো প্রকল্প গ্রহণে পরিকল্পনা প্রতিবেদন তৈরি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট এবং সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনার শাখার যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; পার্ক, উদ্যান, সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের উন্নয়ন পরিকল্পনার নকশা জনগণের কাছে উপস্থাপন করে এলাকাবাসীসহ পেশাজীবী, পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদসহ, উদ্যানতত্ত্ববিদদের যথাযথ মতামত গ্রহণ সাপেক্ষে পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে; বিদ্যমান গাছ ও সবুজকে অক্ষুণ্ন রেখে উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে হবে; নগর এলাকায় গাছ কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর আর বন অধিদপ্তরের যথাযথ ভূমিকা প্রতিপালনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।