দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে মনিপাল হাসপাতাল
প্রথম নিউজ, ঢাকা : ডিজিটাল রোবোটিক্স প্রোগ্রাম, সার্জারিতে রোবটের ব্যবহার, অঙ্গ প্রতিস্থাপনে অগ্রগতি ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত প্রোটোকলসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসক, নার্সিং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, মিডিয়া কর্মী, নারী সংগঠন এবং বিভিন্ন শিল্প সংস্থা কর্মীদের চিকিৎসা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিতে চায় ভারতের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান মনিপাল হাসপাতাল। এই কোর্সগুলো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা যাবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ভারতের মনিপাল হাসপাতালের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মনিপাল হাসপাতাল কিছু শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রোগ্রামগুলোর লক্ষ্য হলো সবার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করা।
মনিপাল হসপিটাল আয়োজিত প্রশিক্ষণ কোর্সগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে; ডিজিটাল রোবটিক্স প্রোগ্রাম, সার্জারিতে রোবোটের ব্যবহার, অঙ্গ প্রতিস্থাপনে অগ্রগতি, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত প্রোটোকল, এসিএলএস এবং বিএলএস প্রশিক্ষণ, হাতের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত অভ্যাস, সুচের আঘাত থেকে প্রতিরোধ, বায়ো-মেডিকেল ওয়েস্ট প্রশিক্ষণ, ব্যারিয়ার নার্সিং টেকনিক, নিরাপদ ইনফিউশন সম্পর্কিত অনুশীলন, ডকুমেন্টেশনের ক্ষেত্রে সেরা অনুশীলন ও চাপজনিত ঘা প্রতিরোধ।
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এছাড়া আরও সচেতনতামূলক আলোচনা এবং কর্মশালা এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কৌশল, প্রবীণদের কার্ডিয়াক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার সমাধান, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, মাথাব্যথা এবং উচ্চ রক্তচাপে করণীয়, ব্যক্তিগত ফিটনেস লেভেল পর্যবেক্ষণ, স্তন ক্যান্সার সচেতনতা এবং নারী স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো।
মনিপাল হাসপাতালের আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার এভিপি মি. ভিকাস তায়েব বলেন, গত কয়েক বছর ধরে, আমরা রোগীদের আরও ভালো সেবা প্রদানের জন্য আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতি উন্নত করার এবং প্রতিরোধমূলক অনুশীলনের ওপর জোর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছি। স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি সাধন হচ্ছে, চিকিৎসকরা নিজেদেরকে সাম্প্রতিক অগ্রগতির সঙ্গে নিজেদের ভালোভাবে দক্ষ করে তুলছেন কি না তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি জানান, এ উদ্যোগ শুধুমাত্র আমাদের বিশেষজ্ঞদেরই নয়, সমগ্র বিশ্বের সব চিকিৎসা কর্মীদের যেকোনো পরিস্থিতি নিখুঁতভাবে পরিচালনা করতে এবং রোগীদের প্রয়োজনগুলোকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত করার জন্য সতর্কতার সঙ্গে ডিজাইন করা হয়েছে। এই প্রোগ্রামগুলো বাংলাদেশের মেডিকেল সদস্যদের তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এবং হাসপাতালের প্রক্রিয়াগুলোকে আরও কার্যকর করতে সহায়তা করবে।
মনিপাল হাসপাতালের আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার এভিপি মি. ভিকাস তায়েব বলেন, ভালো কোনো বিষয় প্রচারে মিডিয়ার অনেক বড় ভূমিকা থাকে। বাংলাদেশের মিডিয়ার সঙ্গে এক হয়ে আমরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যারা জড়িত আছেন তাদের জন্য কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মায়নুল হাসান সোহেল বলেন, মনিপাল হাসপাতাল দীর্ঘ ৭০ বছর যাবৎ স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশ যখন এক ছিল তখন থেকে এই হাসপাতাল চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। মনিপাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির যারা সদস্য আছেন তাদেরকে হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করবেন। এজন্য আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের বাংলাদেশের অনেক রোগী ভারতের ভিসা পেতে কিছু জটিলতায় পড়তে হয়। পাশাপাশি সম্প্রীতি অবহেলা জনিত কারণে ভারতে বাংলাদেশি একজন রোগী মারা গেছেন। এ বিষয়ে মনিপাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর কামনা করছি। বাংলাদেশের থেকে ভারতে চিকিৎসা সেবা ভালো হবে এমন একটা আস্থার জায়গা আমাদের মাঝে তৈরি হয়েছে। তবে কমবেশি খারাপ অভিজ্ঞতাও আমাদের রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের রোগীদের ভারতের ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যদি ভারতীয় অ্যাম্বাসিকে কোনো নির্দেশনা দেয় তাহলে আমাদের রোগীদের জন্য উপকার হবে।
বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, আমরা যারা হেলথ সেক্টর নিয়ে কাজ করি তাদের অনেক বিষয় জানার এবং বোঝার থাকে। আজকে মনিপাল হাসপাতাল ঘোষণা করেছে তারা বাংলাদেশের চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্য সেবার সঙ্গে যারা জড়িত আছেন তাদেরকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। এ প্রশিক্ষণটা আমাদের স্বাস্থ্য সেবায় যারা জড়িত আছেন তাদেরকে প্রসিদ্ধ করবে। আমি মনে করছি এই সাব কন্টিনেন্টে মনিপাল হাসপাতাল নেতৃত্বের অবস্থানে আছেন। আমি মনিপাল হাসপাতালকে একটা সুপারিশ করব, পাবলিকে হেলথ বিষয়ে একজন সাংবাদিকদের যা যা জানা দরকার এসব বিষয়ে যদি আপনাদের বিশেষজ্ঞরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন তাহলে আমরা সাংবাদিকরা উপকৃত হব। আমি আশা করব মনিপাল হাসপাতালের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এসময় কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের মনিপাল হাসপাতালের আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার আঞ্চলিক প্রধান রাম গোপাল বর্ধন, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার চিফ ম্যানেজার ডা. অরুণ চক্রবর্তী, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার এভিপি মি. ভিকাস তায়েব, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মায়নুল হাসান সোহেল ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি।