তলের ঘটনা রাজনৈতিক সংকট মিমাংসা করবে না: দুদু
প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের (পিএনপি) ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গণতন্ত্র রক্ষায় সু-শাসনের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ‘তলে তলে মিমাংসা হয়েছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই কথার প্রেক্ষিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, তলে-তলের কোনো ঘটনা দেশের রাজনৈতিক সংকট মিমাংসা করবে না।
বুধবার (৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের (পিএনপি) ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গণতন্ত্র রক্ষায় সু-শাসনের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সরকার নির্বাচনের তোড়জোর করছে উল্লেখ করে দুদু বলেন, তলে তলে আড়ালে আবডালে যেসব জিনিস হয়, সেটি ষড়যন্ত্র। কিছুদিন আগে নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এমন কিছু আমরা ভারতকে দিয়েছি, ভারত কখনোই তা ভুলতে পারবে না। কি দিয়েছেন তিনি বলেননি। যেহেতু বলেননি তাহলে সেটি তলে-তলের ব্যাপার। সেজন্য আমি বলি, তলে-তলের কোনো ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তির কারণ হবে না। তলে-তলের ঘটনা সংকট কাটাবে না। তলে-তলের ঘটনা রাজনৈতিক সংকট মিমাংসা করবে না।
তিনি আরও বলেন, তলে তলে না খেলে প্রকাশ্যে যিনি বাংলাদেশের অহংকার, যিনি তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, যিনি নির্বাচনে কখনো পরাজিত হননি, তাকে সামান্য চিকিৎসার সুবিধা দিন। তার পছন্দের জায়গায় চিকিৎসা নেওয়ার সুবিধা দিন। হাজী সেলিম, মায়া সাহেবের থেকে নিশ্চই সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বড়, অনেক উঁচু দরের মানুষ। এরা (হাজী সেলিম, মায়া) যদি বিদেশে চিকিৎসা পেতে পারে, জামিন পেতে পারে, তাহলে বেগম জিয়া কেন পাবে না?
দেশে কি দুইটি আইন চলছে- প্রশ্ন করে তিনি আরও বলেন, একটি আইন বিরোধী দলের জন্য, আরেকটি সরকারি দলের জন্য। এমন দেশ পৃথিবীর আর কোথাও আছে আমার জানা নেই।
দেশে ঘোরতর অন্ধকার সময় চলছে মন্তব্য করে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, এত খারাপ সময়ে বাংলাদেশ আগে কখনো নিপতিত হয়নি। বাংলাদেশে এখন কথা বলা যায় না। সত্য কথা যদি আপনি বলেন, তাহলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। এবার সে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, লেখক যেই হোক। এমনকি সে যদি দেশের বাইরেও থাকে, তাহলেও বিপদে পড়তে পারে, অর্থাৎ মামলা খেতে পারে। তার স্বজনরা যারা দেশে আছেন, তারা গ্রেফতারও হতে পারেন। তাদের মালামাল ক্রোক হতে পারে।
তিনি বলেন, এ এক বিচিত্র দেশ। যে দেশ গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছে, এক সাগর রক্ত দিয়েছে, মা-বোনরা আব্রু হারিয়েছে, লক্ষ লক্ষ সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, অধিকারের জন্য। কিন্তু ৫২ বছর পরে এসে সে দেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, অধিকার নেই। চাইলেই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন না। কেন্দ্রে গেলেই শুনবেন, আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।
কৃষকদলের সাবেক এই আহবায়ক বলেন, যে নেত্রী ১৬ টাকার চাল ১০ টাকায় খাওয়াবেন বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এসে ৬০-৮০ টাকা দামে চাল খাওয়াচ্ছেন। এটা কেমন দেশ, যারা অবলীলায় নিজেদের ওয়াদা ভুলে যান, খর্ব করে। এ কেমন দেশ, যেখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। আপনি ঘরে থাকেন বা বাইরে, আপনি ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন এ নিশ্চয়তা নেই।
তিনি বলেন, উদ্যোগ যত ছোট বা ক্ষুদ্র হোক না কেন, লক্ষ্য যদি ভালো হয়, তাহলে সাফল্য অবধারিত। আসুন বিএনপিসহ যেসব বিরোধী দল এখন রাস্তায় দেশের মর্যাদা, রাজনীতি, সমস্যা নিরসন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে, আন্দোলন করছে, সেই উদ্যোগে আমরা সবাই শরিক হই।
পিএনপির চেয়ারম্যান ফিরোজ মোহাম্মদ লিটনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব আলহাজ্ব আহম্মেদুর রহমান খোকনের সঞ্চালণায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম, কৃষক দলের নেতা রবিউল প্রমুখ।