জালিয়াতির অভিযোগে ট্রাম্পকে ৩৫ কোটি ডলার জরিমানা
প্রথম নিউজ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রায় সাড়ে ৩৫ কোটি ডলার জরিমানা করেছেন দেশটির একজন বিচারক। তবে সুদসহ এই অংক দাঁড়াতে পারে ৪৫ কোটি ডলার। সম্পত্তির মূল্য সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যকে এই জরিমানা দিতে হবে ট্রাম্পের।
নিউইয়র্কের কোনো ব্যাংক থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য ঋণ নেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছেন বিচারক আর্থার এনগোরন। পাশাপাশি ট্রাম্প তার কোম্পানির পরিচালকও থাকতে পারবেন না বলে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। এই রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে ফ্লোরিডায় নিজ রাজ্য থেকে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, নিউইয়র্কের একজন কুটিল বিচারক মাত্র রায় দিয়েছেন যে একটি নিখুঁত প্রতিষ্ঠান গঠন করার দায়ে আমার ৩৫ কোটি ডলার জরিমানা দিতে হবে। আমার মতে, দেশের জন্য এটি অত্যন্ত দুঃখজনক একটি দিন।
শুক্রবার দেওয়া রায়ে বিশাল অঙ্কের জরিমানার আদেশের পেছনের কারণ হিসেবে ট্রাম্পের আগের দুর্নীতির অভিযোগগুলো উল্লেখ করেন বিচারক এনগোরন। রায়ে তিনি লেখেন, অভিযুক্তদের ওপর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ শাস্তি আরোপিত না হলে তাদের জালিয়াতি চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিচারক নির্দিষ্ট করে ট্রাম্প অর্গ্যানাইজেশনের ২০২২ সালের কর ফাঁকির মামলার কথা উল্লেখ করেন। ওই মামলায় উঠে এসেছে যে, প্রতিষ্ঠানটি তাদের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে কয়েক দশক ধরে নিয়মের বাইরে গিয়ে সুবিধা দিয়ে আসছিল। পরে বিচারক এনগোরন মন্তব্য করেন, এখানে যে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তা বিবেককে নাড়া দেয়।
তবে জরিমানা করা হলেও ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল হয়নি। সেরকম পরিস্থিতিকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক অঙ্গনে ‘কর্পোরেট মৃত্যুদণ্ড’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। লাইসেন্স বাতিল না করে ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানের ওপর দুই ধাপের নজরদারির সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন বিচারক। একটি হলো, স্বাধীন একটি নজরদারি প্রতিষ্ঠান তিন বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির রিপোর্ট আদালতকে জানাবে। আর নিয়মের প্রতিপালন হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে স্বাধীন একজন পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
জালিয়াতির মাধ্যমে যে পরিমাণ অর্থের কারচুপি করেছেন ট্রাম্প সেই অর্থের ওপর সুদ দেওয়ার সিদ্ধান্তও জানানো হয়েছে। এর ফলে জরিমানার চূড়ান্ত অঙ্ক প্রায় ৪৫ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে। এর পাশাপাশি ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িতরা পরের তিন বছরের জন্য নিউইয়র্কের কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে পারবেন না বলে রায়ে বলা হয়েছে।
ট্রাম্পের পাশাপাশি তার দুই পুত্রও অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন। তাদেরও ৪০ লাখ ডলার করে জরিমানা দিতে হবে। ডোনাল্ড জুনিয়র আর এরিককে দুই বছরের জন্য নিউইয়র্কে ব্যবসা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পর দুই ছেলেই অবশ্য এই রায় প্রত্যাখ্যান করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। ডোনাল্ড জুনিয়র এই রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আর এরিক বিচারককে ‘নিষ্ঠুর ব্যক্তি’ বলে মন্তব্য করেছেন।
অভিযুক্তদের আরেকজনকে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা অ্যালান ওয়াইজেলবার্গ। তাকে ১০ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়েছে। সিভিল কোর্টের মামলায় নিউইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস অভিযুক্ত চার ব্যক্তি এবং ট্রাম্প অর্গ্যানাইজেশনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এনেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তারা নিজেদের সম্পদের অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে মিথ্যা নথি তৈরি করেছেন যেন সুবিধাজনক সুদে বড় অঙ্কের অর্থ ঋণ করতে পারেন। তার মামলায় তিনি ৩৭ কোটি ডলার জরিমানা দাবি করেছেন।
শুক্রবার তিনি বলেছেন, এই দেশে মানুষ ভেদে নিয়ম ভিন্ন হতে পারে না। সাবেক প্রেসিডেন্টরাও এই নিয়মের বাইরে নন। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে বিচারক এনগোরন ট্রাম্পকে ব্যবসায় কয়েক লাখ ডলার জালিয়াতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন। এক ঘটনায় বিচারক জানতে পারেন যে, আর্থিক নথিতে ট্রাম্প টাওয়ারের পেন্ট হাউজের আকৃতি যতটুকু দেখিয়েছেন, তা আসলে তার চেয়ে তিনগুণ বড়। সেই ধারাবাহিকতায় গত বছরের শেষদিকে ৪৩ দিন ধরে চলে বিচারকাজ। বিচার চলাকালীন সময়ে ৪০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয় যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ট্রাম্পকে কি পরিমাণ জরিমানা করা হবে।
বিচারক এনগোরন তার রায়েও সাক্ষীদের বক্তব্য বেশ কয়েকবার তুলে এনেছেন। কম সুদে বেশি ঋণ নেওয়ার জন্য অভিযুক্তরা আর্থিক প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের যখন বিশেষজ্ঞ ও সাক্ষীদের দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তখন তারা সত্য গোপন করে গেছেন। এই জরিমানা বাদেও একটি মানহানির মামলায় লেখক ই জন ক্যারলকে প্রায় সাড়ে আট কোটি ডলার জরিমানা দেওয়ার কথা রয়েছে ট্রাম্পের।