জমি সংক্রান্ত বিরোধ, প্রবাসীকে ঘুমন্ত অবস্থায় গুলি করে হত্যা

গ্রেফতাররা হলেন- হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী শাহাদাত বেপারী (৪৫), মহিউদ্দিন বেপারী (২০) ও হায়াতুন ইসলাম (৪২)। গ্রেফতারের সময় উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল ও গোলাবারুদ এবং দেশীয় অস্ত্র। গ্রেফতাররা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।

জমি সংক্রান্ত বিরোধ, প্রবাসীকে ঘুমন্ত অবস্থায় গুলি করে হত্যা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: এলাকায় ট্রলার ঘাটের ইজারা, অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, আধিপত্য বিস্তার ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রবাসফেরত শ্যামল ব্যাপারীকে ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতাররা হলেন- হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী শাহাদাত বেপারী (৪৫), মহিউদ্দিন বেপারী (২০) ও হায়াতুন ইসলাম (৪২)। গ্রেফতারের সময় উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল ও গোলাবারুদ এবং দেশীয় অস্ত্র। গ্রেফতাররা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।

র‌্যাব জানায়, নিহত শ্যামলের নিকটাত্মীয়র সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে গ্রেফতার শাহাদাতের বিরোধ চলছিল। এ প্রেক্ষিতে ৫/৬ মাস আগে নিহত শ্যামলের নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিষয় এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রেফতার শাহাদাতের বাকবিতন্ডা ও ঝগড়া হয়। এর জের ধরে প্রবাসফেরত শ্যামল ব্যাপারীকে রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত অবস্থায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে তারা। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৪ জুন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়নের পূর্বরাখি এলাকায় গভীর রাতে প্রবাসফেরত শ্যামল নামক এক ব্যক্তি নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। এমতাবস্থায় কিছু দুর্বৃত্ত নৃশংসহভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে শ্যামলকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় লোকজন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবিতে এলাকায় মানববন্ধন করে। র‌্যাব এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার রাতে র‌্যাব গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এবং র‌্যাব-১৪ এর একটি আভিযানিক দল মুন্সিগঞ্জ সদর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, শাহাদাত বেপারীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের সন্ত্রাসী দল পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ১৪ জুন রাতে শ্যামলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এলাকায় ট্রলার ঘাটের ইজারা, নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, আধিপত্য বিস্তার ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে নিহত শ্যামলের নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে গ্রেফতার শাহাদাতের বিরোধ চলছিল। এ প্রেক্ষিতে ৫/৬ মাস আগে নিহত শ্যামলের নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিষয় এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রেফতার শাহাদাতের বাকবিতণ্ডা ও ঝগড়া হয়।

এর জের ধরে নিহত শ্যামলের সঙ্গেও গ্রেফতার শাহাদাতের বাকবিতণ্ডা ও ঝগড়া হয়। পরবর্তীতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে শাহাদাতের পরিকল্পনায় ও উপস্থিতিতে শ্যামলের ভাইদের স্থানীয় বাজারে ফার্মেসিতে কুপিয়ে জখম করে তার লোকজন। এ ঘটনায় নিহত শ্যামল বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় শাহাদাত ও তার ছেলে মহিউদ্দিনসহ অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

কমান্ডার মঈন আরও বলেন, শাহাদাত বেপারী গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে যায়। কিন্তু তার ছেলে মহিউদ্দিন বেপারী ও তার এক সহযোগী এই মামলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। পরবর্তীতে শাহাদাত বেপারী ও তার ছেলে আদালত থেকে মামলায় জামিন পায়। আত্মগোপনে থাকাকালীন শাহাদাত বেপারী শ্যামলকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শাহাদাত আগে থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র, ককটেল ও ধাড়ালো অস্ত্র সংগ্রহ করে রাখে। বেশ কয়েকজন সহযোগী ও সন্ত্রাসী বাহিনীর ১৫-২০ জন সদস্য শাহাদাতের নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৪ জুন রাত দেড়টার দিকে শাহাদাত ও তার লোকজন নিহত শ্যামলের বাড়ির চারদিক থেকে ঘেরাও করে হামলা চালায়।

তারা শ্যামলের ঘরে ঢুকে পা, বুক, পিঠ, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে ও এলোপাতাড়ি ধাড়ালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসহভাবে কুপিয়ে শ্যামলকে হত্যা করে। পরবর্তীতে তারা গুলি করে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ হত্যাকাণ্ডের পর তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। নিহত শ্যামল বেপারী ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে অবস্থান করে চাকরি করত। পরবর্তীতে দেশে ফিরে ২০১০ সালে পুনরায় মধ্যপ্রাচ্যের অন্য একটি দেশে চলে যায়। সে ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসে।

মূল পরিকল্পনাকারী কে এই শাহাদাত

শাহাদাত বেপারী এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য তার ছেলে মহিউদ্দিন বেপারীসহ ১৫-২০ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করত। সে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, মাদক কারবারিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম করে আসছিল। গ্রেফতার শাহাদাত বেপারী উগ্র প্রকৃতির লোক। এ হত্যাকাণ্ডের পর সে কিশোরগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকে। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় সে নিহত শ্যামলের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এ ঘটনার বিষয়ে তাদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করতে থাকে। আত্মগোপনে থাকাকালীন র‌্যাবের গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রায় ১০টি মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।

কে এই মহিউদ্দিন

মহিউদ্দিন বেপারী হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী শাহাদাত বেপারীর ছেলে। এলাকায় তার নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তোলে। এই গ্রুপটি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ইভটিজিং ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত।

এ হত্যাকাণ্ডের পর সে কিশোরগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকে। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাকালীন র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। এছাড়াও সম্প্রতি সে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি ঘটনায় কয়েকজনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখমের ঘটনা ঘটিয়েছে। তার বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রায় ৫টি মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে।

কে এই হায়াতুন

গ্রেফতার হায়াতুন গ্রেফতার শাহাদাতের সন্ত্রাসী গ্রুপের একজন সদস্য। সে শ্যামল হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার শাহাদাতের সহযোগী ছিল এবং এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। এ হত্যাকাণ্ডের পর সে কিশোরগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।