প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে গাজী গ্রুপের টায়ার তৈরির কারখানায় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনের ঘটনায় অন্তত ১৭৬ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত ১৭৬ জন নিখোঁজের তালিকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, ‘স্বজনরা দাবি করছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা নিখোঁজ রয়েছেন, যারা গত রাতে লুটপাটের সময় এই কারখানায় এসেছিলেন।’ তবে তারা কেউ কারখানার শ্রমিক নন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জানা যায়, রবিবার (২৫ আগস্ট) রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে স্থানীয়দের মাধ্যমে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিস। ঢাকা ফুলবাড়িয়া ফায়ার স্টেশন, ডেমরা, কাঁচপুর, আদমজী ইপিজেড ও কাঞ্চন ফায়ার স্টেশন থেকে একে একে যোগ দেয় ১২টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও কাজ করছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে লাগা আগুনে এখনো পুড়ছে কারখানাটি। এ সময়ে থেমে থেমে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে, যাতে কেঁপে ওঠে আশপাশের এলাকা।
স্থানীয়রা বলছে, সাবেক মন্ত্রী ও গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেফতারের পর থেকে কারখানাটিতে গণহারে লুটপাট চলে। আগুন লাগার সময়ও লুট করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন ভেতরে আটকা পড়েছেন বলে দাবি করেন তারা। ফুলবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক রেজাউল করিম (প্রশিক্ষণ) বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করছে।
অবকাঠামোগত ও ভেতরে থাকা টায়ার উৎপাদনের দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা জটিল হয়ে পড়েছে। এদিকে আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কিছুই ধারণা করা যাচ্ছে না। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলে কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
জানা যায়, বেশির ভাগ নিখোঁজদের বাড়ি উপজেলার মিকুলী, রূপসী কাজিপাড়া, ছাতিয়ান, মুগরাকুল, কাহিনা, বরপা, মাসাবো, তারাব, বরাব, চনপাড়া, মুড়াপাড়াসহ আশ-পাশের এলাকায়। বরপা এলাকার ইকবাল হোসেন বলেন, আমার বন্ধু আলী আসাদ, আবু সাঈদ, স্বপন খাঁন, শাহিনসহ ৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
তারা কারখানার ওই ভবনে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢুকে আর বের হননি। মোবাইল ফোনে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কথা হয়েছে। তখন বলেছে তারা ভবনে আটকা পড়েছে। এরপর আর ফোনে পাওয়া যায়নি। কোনাপাড়া এলাকার রাবেয়া খাতুন জানান, তার মেয়ের জামাই হযরত আলী গাজী টায়ার কারখানায় মালামাল নিতে এসেছিলেন। এখন আর তার খোজ পাচ্ছেন না। তিনি শুনেছেন, আলী ওই ভবনে সেখানে আটকা পড়েছেন।
মাসাবো এলাকার আসাদ মিয়া বলেন, তার ছোট ভাই বাবু মিয়া কসাইয়ের কাজ করেন। বন্ধুদের সঙ্গে গাজীর কারখানা থেকে মাল নিতে আসেন। রাত ১০টা পর্যন্ত কথা হয় তাদের মধ্যে। এরপর থেকে আর কথা হয়নি।
বরপা এলাকার সুরাইয়া বেগম বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমার নাতি নিরব ও তার বন্ধু মিল্লাত মিলে টায়ার কারখানায় প্রবেশ করে। পরে যেই ভবনে আগুন লেগেছে ওই ভবনে আটকা পড়ে। এখন আর খোঁজ পাচ্ছিনা। ভয়াবহ এই আগুনে কারখানার আশ-পাশের মার্কেট, হাটবাজার, শিল্প কলকারখানা এবং এলাকাবাসী চরম আতঙ্কে রয়েছেন। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃংখলাবাহিনী, বিএনপি নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষক) রেজাউল করিম বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নিখোঁজদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগুন নেভানোর পর নিখোঁজদের ব্যপারে বলা যাবে। বেলা সারে ৪ টা পর্যন্ত সজনরা আমাদের কাছে ১৭৬ জন নিখোঁজের তালিকা দিয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, দলীয় নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ অপরাধ করলে সাংগঠনিকভাবে দল থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গাজী সাহেব অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার করা হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের রুটি রোজগারের জায়গা এই কারখানা। কারখানা ধ্বংস করলে এখানে কর্মরত ২০ থেকে ২৫ হাজার শ্রমিক কর্মচারী কোথায় যাবে?
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, কেউ কোনো প্রকার অরাজকতা, লুটপাট, আইনশৃংখলার অবনতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে আইনশৃংখলা বাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। প্রচলিত আইনে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।