খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চিতে লবণাক্ত পানি দ্রুত অপসারণের পরামর্শ
প্রথম নিউজ, ঢাকা : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় কমির সদস্য গওহর নঈম ওয়ারা বলেছেন, রেমাল কোনো মারাত্মক সাইক্লোন (ঘূর্ণিঝড়) ছিল না। এটি ছিল মধ্যম মানের একটি ক্রান্তীয় বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়। তারপরও এর এত দীর্ঘ স্থায়িত্বকাল দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। কারণ এটি উপকূলে আঘাত হানার পর থেকে প্রায় ৫০ ঘণ্টা পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করেছে। একইসাথে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাঁধ সংলগ্ন নিচু এলাকা উপচে লোকালয়ে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে। এই মুহূর্তে খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে মিঠাপানির জলাশয় থেকে দ্রুত লবণাক্ত পানি অপসারণ করতে হবে। না হলে এটি বড় ধরণের প্রভাব ফেলবে।
শনিবার (১ জুন) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাপার আয়োজনে ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল পরবর্তী খাদ্য নিরাপত্তা : আশু করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গওহর নঈম বলেন, দীর্ঘ সময়ের এই ঝড়ে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং ২৭ হাজার মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার অচল হয়ে যায়। আমরা দেখেছি, এর আগে বাংলাদেশে আঘাত হানা বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড় দুই-ছয় ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অতিক্রম করে গেছে। কিন্তু এই ঝড় কেন এতটা সময় নিলো তা নিয়ে নানা ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, অনেকক্ষণ ধরে এক জায়গায় ঝড় থাকার ফলে ঝড়ের সঙ্গে পানি ঢুকছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় অনেকক্ষণ অবস্থান করলে দুইটা জোয়ার ধরে ফেলবে সেটা না বুঝতে পারা এবং সেই অনুযায়ী সতর্কবার্তা দিতে না পারাটা আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্মগত ত্রুটি। সবমিলিয়ে এবারের সাইক্লোনে বেড়িবাঁধের ক্ষতি এক দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতের সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। খুলনা অঞ্চলের তিন জেলায় ৬১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু এলাকায় পুরোপুরি এবং কিছু এলাকায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধ। নিচু এলাকায় লোকালয়ে নোনা পানি প্রবেশ করেছে। শত-শত গ্রামে চিংড়ির ঘেরসহ ফসলি জমিতে নোনা পানি প্রবেশ করেছে। বরিশাল অঞ্চলে কমপক্ষে ৪০০ জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ। নোয়াখালী এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে বহু স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে নোনাজল ঢুকে মিষ্টিজলের আধারগুলো নষ্ট করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ভাটার টানে পানি বেরিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।
তিনি বলেন, সামনের আমন মৌসুম ধরতে হলে মাঠ ও জলাশয় থেকে দ্রুত নোনাজল বের করার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাম্প করে এই পানি বের করার ব্যবস্থা করা যায়। জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনগণের মালিকানায় বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে বর্তমান নীতি কৌশল পরিবর্তন করে এটা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার। আরও বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ও বাপার জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিটির সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম, বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার, বাপার সহ-সভাপতি শহিদুল হক খান এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রসুল।