কারও মুখ তো আঠা দিয়ে বন্ধ করে দিতে পারি না

পিটার হাসকে হত্যার হুমকি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কারও মুখ তো আঠা দিয়ে বন্ধ করে দিতে পারি না

প্রথম নিউজ, অনলাইন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রোববার বলেছেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী সরকার বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। তবে কারও মুখ আঠা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া যায় না। ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকির বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চাইলে মন্ত্রী সেগুনবাগিচায় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফরিদুল আলম ৬ই নভেম্বর এক কর্মী সমাবেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে হত্যার হুমকি দেন। আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হলে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন দূতাবাস। এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তরফেও প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। 

ওয়াশিংটন বলছে, মার্কিন কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি অগ্রহণযোগ্য। পিটার হাসকে লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক বক্তব্যের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে যথাযথভাবে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। ভিয়েনা সনদ অনুসারে মার্কিন কূটনৈতিক মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে জানিয়ে ওয়াশিংটন আশা করে এই বাধ্যবাধকতা অনুসারে বাংলাদেশ সরকার কাজ করবে। 

ওয়াশিংটনের আহ্বান বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী এখানে অবস্থানরত সকল বিদেশি কূটনীতিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে এবং তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সকল কূটনীতিকের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। আমরা যথাযথভাবে ভিয়েনা কনভেনশন অনুসরণ করে যাচ্ছি। 

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশের মন্তব্যে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী মোমেন বলেন, যদিও আমার বলা উচিত না তারপরও বলছি। আপনি যদি রাজনীতিবিদ হন, তাহলে এক দল না এক দল আপনার সম্পর্কে বক্তব্য দেবে। আমরা যারা পাবলিক লাইফে, আমাদের সম্পর্কে পাবলিক বক্তব্য দেবে। আর যদি আপনি রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন তাহলে কেউ আপনাকে তিরস্কার করবে না। 

মন্ত্রী বলেন, কে কোথায় কী বললো, আমার কাছে সেই এভিডেন্স তো আমাদের কেউ দেয়নি। সবার আগে এভিডেন্স প্রয়োজন। এ সময় ড. মোমেন বলেন, আমরা মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাস করি, ফ্রিডম অব স্পিচ, ফ্রিডম অব মিডিয়ায় বিশ্বাস করি, কারও মুখ তো আঠা দিয়ে বন্ধ করে দিতে পারি না। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি গর্হিত কাজ করে, তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেবো, নিচ্ছিও। বাংলাদেশ সব কূটনীতিককে নিরাপত্তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা অক্ষরে অক্ষরে ভিয়েনা সনদ মেনে চলি, আপনারাও এটা মেনে চলেন। আপনারা এসব লঙ্ঘন করে আবার বড় বড় কথা বলেন। ফরিদুলের আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীও এক সমাবেশে পিটার হাসকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দিয়েছিলেন।

সাংবাদিকরাই যুক্তরাষ্ট্রকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ডেকে নিয়ে এসেছেন-পররাষ্ট্রমন্ত্রী: এদিকে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা যুক্তরাষ্ট্রকে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ডেকে নিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। রোববার সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আমেরিকাকে একপায়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ডেকে নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিকরাও তো মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দেন- এমনটা জানালে মন্ত্রী বলেন, না। আমরা না, আপনারা তাদের নিয়ে আসেন, তাদের কাছে যান। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি প্রস্তাব রেখে বলেন, যেসব বিদেশি নির্বাচন নিয়ে অনেক বেশি কথা বলে, তারা একটি রাজনৈতিক দল খুলুক। এটা হচ্ছে অ্যাম্বাসেডর পার্টি অথবা অন্যকিছু। পার্টি খুলে কূটনীতিকদের একটি অঙ্গীকার করতে হবে যে, যারা তাদের সমর্থন করবে তাদের দেশে দেশে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। দেখবেন তাদের দলে অনেকেই যোগদান করবে। তারা শুধু নিশ্চয়তা দেবে যে, তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, বিদেশিরা দল করলে আমাদের অসুবিধা নেই, আপত্তিও নেই।