ঈদের পর নিত্যপণ্যে বাড়তি দামে দিশেহারা ক্রেতা
ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হলেও, সেই দামেও বিক্রি হচ্ছে না। কারসাজি করে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া চিনি ১৪০ টাকা করা হলেও বাজারে পণ্যটি মিলছে না। প্রতিকেজি আলুর দাম ১৫ ও পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতার ২৫ টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। এছাড়া ঈদে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া গরুর মাংস এখনও একই দামে বিক্রি হচ্ছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: ঈদের পর বাজারে সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। এর মধ্যে দশ পণ্য-চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মাংস ও সব ধরনের সবজির বাড়তি দামে দিশেহারা ক্রেতারা। ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হলেও, সেই দামেও বিক্রি হচ্ছে না। কারসাজি করে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া চিনি ১৪০ টাকা করা হলেও বাজারে পণ্যটি মিলছে না। প্রতিকেজি আলুর দাম ১৫ ও পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতার ২৫ টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। এছাড়া ঈদে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া গরুর মাংস এখনও একই দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ও দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. ইমজামামুল হক বলেন, বাজারে এলে অস্বস্তি লাগে। সবকিছুর দাম অনেক বেশি। আয় বাড়ে না, কিন্তু বাজারে ব্যয় বাড়ছে। বিক্রেতারা সবকিছু সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে রেখেছে। কিন্তু বাজারে কোনো ধরনের পণ্যের সংকট নেই। তবে চিনি ও সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আবার দাম বাড়ানো হয়েছে। দেখার যেন কেউ নেই।
এদিকে দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের দামে আবার দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও মিলছে না ভোজ্যতেল। বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। ভোজ্যতেল ছাড়াও পাইকারি বাজারে চিনি ও পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর যেন ‘মহোৎসব’ চলছে। স্বাভাবিক হয়নি চিনির দামও। একই সঙ্গে লাগামহীনভাবে বাড়ছে চালের দাম। মিলপর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারি আড়ত ও খুচরা বাজারে চালের মজুত পর্যাপ্ত। ভোক্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও দেশে উলটো পরিস্থিতি। দেশে দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
শুল্ক সুবিধা প্রত্যাহার হওয়ায় বৃহস্পতিবার সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম আবার বাড়ানো হয়েছে, যা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ১৭ নভেম্বর দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৭৬ টাকা, এক লিটার বোতলের সয়াবিন তেল ১৯৯ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৯৬০ টাকা এবং এক লিটার সুপার পাম তেলের দাম ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
একাধিক বাজারে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে সরকার নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি হচ্ছে না। অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৭৬ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ১৮২ টাকা দামে। এক লিটার বোতলের সয়াবিন তেল ১৯৯ টাকা সরকার নির্ধারণ করলেও বিক্রি হচ্ছে ২০৫ টাকায়। আর ৫ লিটারের বোতল ৯৬০ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯৬৮ টাকা দামে। এক লিটার সুপার পাম তেলের দাম ১৩৫ টাকার বদলে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে।
বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাজারে পর্যাপ্ত ভোজ্যতেলের মজুত থাকলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে দাম কত, আমদানিতে খরচ হলো কত, সরবরাহ চেইনে বিক্রি হচ্ছে কত টাকায়, মজুত থাকলে কী পরিমাণ রয়েছে, পণ্যটিতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার রয়েছে কিনা এসব জিনিস মনিটরিং করা উচিত। দেশে মনিটরিং মানে খুচরা বা পাইকারি ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়। একে মনিটরিং বলে না।
ভোজ্যতেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দামও। গত ১৫ মার্চ থেকে ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। দেশীয় পেঁয়াজ চাষিদের উপযুক্ত দাম পেতে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের নির্দেশ দেয়। আমদানি বন্ধের জের ধরে দেশের বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। কয়েক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকার বেশি। ভালোমানের বড় আকারের পেঁয়াজ চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫২ টাকা থেকে ৫৫ টাকা দরে। অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৪২ টাকা দরে। তিন দিন আগেই পাইকারি বাজারে ভালোমানের বড় আকারের পেঁয়াজের দাম ছিল ৩২ টাকা থেকে ৩৫ টাকা কেজি। আর মাঝারি আকারের অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে দাম ছিল কেজি প্রতি ২৮ টাকা। আর খুচরা বাজারে বর্তমানে ভালোমানের পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৬২ টাকা পর্যন্ত। কিছু কিছু দোকানে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। আর ছোট আকারের (নিম্নমানের) পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার বেশি দামে।