ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক কেন্দ্র পরিদর্শনের অনুমতি পুতিনের
ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্বাধীন পরিদর্শকদের একটি দলকে পরিদর্শনের অনুমতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্বাধীন পরিদর্শকদের একটি দলকে পরিদর্শনের অনুমতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনীয় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ইউরোপের সর্ববৃহৎ পারমাণবিক স্থাপনা এবং সামরিক আগ্রাসন শুরুর পরই গত মার্চ মাসের শুরুতে এটি দখল করে নেয় রুশ সেনারা।
শনিবার (২০ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আলজাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাধীন পরিদর্শকদের একটি দলকে ইউক্রেন হয়ে মস্কো-অধিকৃত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রে যেতে দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কার্যালয় থেকে দেওয়া তথ্য অনুসারে, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) কর্মীদের রাশিয়ার মধ্য দিয়ে সাইটটিতে ভ্রমণ করার বিষয়ে নিজের ‘দাবি পুনর্বিবেচনা করেছেন’ পুতিন। এর আগে রাশিয়ান এই নেতা নিজেই সতর্ক করেন যে, সেখানে যুদ্ধ একটি ‘বিপর্যয়’ ডেকে আনতে পারে।
ম্যাক্রোঁর কার্যালয় সুনির্দিষ্ট করে বলেছে, আইএইএ টিমকে রাশিয়া হয়ে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে নিজের দাবি ছেড়ে দিয়ে পুতিন বলেছেন, তারা ইউক্রেন হয়ে আসতে পারে।
এদিকে দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দখলে রাখা রুশ বাহিনীকে গ্রিড থেকে সুবিধা বিচ্ছিন্ন না করার এবং লক্ষাধিক ইউক্রেনীয়দের সম্ভাব্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ না করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস।
জাপোরিঝিয়া প্ল্যান্টের চারপাশে রাশিয়া ও ইউক্রেনের লড়াই চলছে এবং হামলার জন্য উভয় পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করছে। এতে করে চেরনোবিলের চেয়েও খারাপ বিপর্যয়ের আশঙ্কা বেড়েছে সেখানে।
ক্রেমলিন এর আগে এক বিবৃতিতে বলেছিল, জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থার কর্মকর্তাদের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ পরিদর্শন করার মাধ্যমে ‘বাস্তব পরিস্থিতির মূল্যায়ন’ করতে সম্মত হয়েছেন পুতিন এবং ম্যাক্রোঁ।
ক্রেমলিন আরও বলেছে, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণ বড় আকারের বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে জোর দিয়ে বলেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
আলজাজিরা বলছে, পুতিনের সাথে কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে ইউক্রেনের ওপর ‘নিষ্ঠুর আক্রমণের’ জন্য অভিযুক্ত করেন।
ফ্রান্সের এই প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনে আগ্রাসন ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন এবং পুতিনের সাথে সংলাপকে দীর্ঘসময় ধরে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তবে রুশ আগ্রাসন অব্যাহত থাকার সাথে সাথে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ক্রমবর্ধমান সমালোচক হয়ে উঠেছেন তিনি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি-অধিকৃত দক্ষিণ ফ্রান্সে মিত্রবাহিনীর অবতরণের ৭৮তম বার্ষিকী স্মরণে একটি বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে নৃশংস আক্রমণ শুরু করার পর থেকে ইউরোপীয় মাটিতে যুদ্ধ আবারও ফিরে এসেছে।’
পুতিন তার ‘সাম্রাজ্যবাদী ইচ্ছা’ ইউরোপের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন বলেও এসময় অভিযোগ করেন ম্যাক্রোঁ।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে সীমান্তে আড়াই মাস সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ঘোষণার দু’দিন আগে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
এরপর গত মার্চের শুরুতে যুদ্ধের প্রথম দিকেই রাশিয়ার সামরিক বাহিনী জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয়। যদিও এই স্থাপনা এখনও ইউক্রেনীয় প্রকৌশলীরা পরিচালনা করছেন। এরপর চলতি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে আবারও হামলার ঘটনা ঘটে।
এর সপ্তাহখানেক পর স্থাপনাটিতে আবারও হামলার ঘটনা ঘটে। এসব হামলার জন্য ইউক্রেন রাশিয়াকে দায়ী করলেও হামলার দায় পাল্টা ইউক্রেনের ঘাড়েও চাপিয়ে আসছে মস্কো। আর এতে করে সেখানে পারমাণবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews