আরেকবার নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
গতকাল ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গায় নবনির্মিত ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজিত মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, ফরিদপুর: বিএনপি হচ্ছে লুটেরার দল। অর্থ আত্মসাতকারী, অস্ত্র চোরাকারবারি হচ্ছে বিএনপি’র নেতা। আর জামায়াতে ইসলামী হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী। এ থেকে দেশকে বাঁচাতে আরেকবার নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নৌকা আপনাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। নৌকা পদ্মা সেতু- রেল সেতু দিয়েছে, রাস্তাঘাটের উন্নতি করেছে, নৌকা আপনাদেরকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় দিচ্ছে, নৌকাই এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। তাই নৌকা মার্কায় ভোট দিন যেন আওয়ামী লীগ সরকার আপনাদের সেবা করতে পারে। আমার দলই দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে।
গতকাল ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গায় নবনির্মিত ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজিত মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফের সঞ্চালনায় সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা রেল সেতু উদ্বোধনের পর বিশেষ ট্রেনে পদ্মা নদী পার হয়ে ভাঙ্গায় পৌঁছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি হচ্ছে লুটেরার দল। অর্থ আত্মসাতকারী, অস্ত্র চোরাকারবারি হচ্ছে বিএনপি’র নেতা। আর জামায়াতে ইসলামী হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধাপরাধের জন্য শাস্তি পেয়েছে। এরা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র নৌকা মার্কাই আপনাদের সব রকমের সহযোগিতা দেবে। তিনি বলেন, নদী ভাঙন থেকে ফরিদপুর এবং শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন এলাকাকে রক্ষা করার জন্য ইতিমধ্যে আমরা প্রকল্প গ্রহণ করেছি এবং তার কিছু কিছু বাস্তবায়নও শুরু করেছি। সারা দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি, বৃত্তি দিচ্ছি, প্রতি জেলায় স্কুল ও কলেজ সরকারিকরণ করে দেয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
আমরা আজকে বয়স্ক ভাতা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্ততা ভাতা দিচ্ছি, মাতৃত্বকালীন ভাতা দিচ্ছি, মাতৃদুগ্ধ প্রদানকারী কর্মজীবী মহিলাকে ভাতা দেয়া হচ্ছে, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিচ্ছি, তাদের জন্য বীরনিবাস করে দিচ্ছি, হিজড়া, বেদে, কুষ্ঠরোগী কেউ বাদ যাচ্ছে না। কমিউনিটি ক্লিনিকে ২০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভূমিহীনদের বিনা পয়সায় ঘর করে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সরকার উন্নয়নশীল দেশের কাতারে দেশকে এনেছে যেটি ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে। সারাবিশ্বে আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। কারণ বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র, অনেক চক্রান্ত কিন্তু আমার একমাত্র ভরসা বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ পাশে থাকলে যে অসাধ্য সাধন করা যায় সেটাই আমরা প্রমাণ করেছি ঐ পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্যদিয়ে। আজকে যেখানে রেল সেতুও আমরা চালু করলাম। এ সময় তার সরকার বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের অসামপ্রদায়িক চেতনায় গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ এবং ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র করছে। কারণ আমাদের ধর্মটা সম্পর্কে মানুষ যাতে সঠিকভাবে জানতে পারে। কেননা, এই দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান এক হয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই সব ধর্মের সব মানুষ এদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে এবং স্বাধীনভাবে ধর্ম-কর্ম করবে। তিনি পবিত্র কোরআন শরীফের সূরা কাফিরুন-এর ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদীন’ উদ্ধৃত করে বলেন, যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। আমরা তাদের সহযোগিতা করবো এবং সেটাতেই আমরা বিশ্বাস করি। অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশের অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছে, মানুষ হত্যা করেছে, মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও এর নির্মমতার শিকার হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা-মা-ভাই স্বজনদের কেউ বেঁচে নেই। আছে বাংলাদেশের জনগণ। তাদের জন্যই আমার কাজ। জিয়া-এরশাদ-খালেদা লুটপাট আর দুর্নীতিতে মত্ত ছিলেন। কেউ ভোট দিতে পারেনি। লুট করেছে তারা। আমরা সরকারে এসে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল কলেজ, রাস্তাঘাট করে দিয়েছি। তিনি বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটরের আমলে কেউ ভোট দিতে পারতো না। তখন তো কথাই ছিল, ১০টা হোন্ডা ২০টা গুণ্ডা নির্বাচন ঠাণ্ডা। এর আগে মাওয়ায় এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতির ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে জন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে। এই দেশ আমাদের, আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্মেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি- আমরা গড়ে তুলবো। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, আজকে যারা ভোটের কথা বলে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলে- আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই এদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। আর যারা নির্বাচনের ধোঁয়া তুলে আমাদের প্রতিদিন ক্ষমতা থেকে হটায় তারা কখনো অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। কারণ তাদের প্রতিষ্ঠাই হয়েছে একজন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত দিয়ে। যারা ভোট চুরি করা ছাড়া কোনোদিন ক্ষমতায় আসে নাই। জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণের অন্যতম উক্তি ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, বিদেশি অর্থায়ন বন্ধের পর আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আজকে তা করে দেখিয়েছি। আবারো প্রমাণ করেছি বাঙালি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ তাকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে ড. ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, সামান্য একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে পারবে না বয়সের কারণে, সেটা বলার জন্য বিশ্বব্যাংক তার পক্ষে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপরই আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো।
এদিকে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার পর প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু দিয়ে একটি বিশেষ ট্রেনে চড়ে প্রমত্তা পদ্মা নদী পার হয়েছেন। এটি দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির পথে আরেকটি মাইলফলক। নতুন ট্রেন সার্ভিসটি উদ্বোধনের পর, প্রধানমন্ত্রী তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে মাওয়া থেকে একটি বিশেষ ট্রেনযোগে এসে ভাঙ্গার ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে এক মহাসমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্ল্লাহসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।