আদানির নামও উচ্চারণ করলেন না মোদি
সংবাদমাধ্যমকে রাহুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে আমি খুবই সাধারণ কয়েকটা প্রশ্ন করেছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম আদানির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কী। একটি প্রশ্নেরও জবাব তিনি দেননি। এতে সত্যটাই প্রকাশিত।
প্রথম নিউজ, ডেস্ক: বাজেট অধিবেশনের শুরু থেকে যাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক স্তরে ওঠা অভিযোগকে কেন্দ্র করে সংসদ উত্তাল, সেই শিল্পপতি গৌতম আদানির নামও উচ্চারণ পর্যন্ত করলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বিতর্কে অংশ নিয়ে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মোদি তাঁর নয় বছরের রাজত্বের সাফল্যের খতিয়ান দেওয়ার পাশাপাশি বোঝালেন, আগের ১০ বছরের কংগ্রেস শাসন দেশকে কীভাবে ডুবিয়ে গেছে। সেই অতল থেকে তিনি কীভাবে দেশকে টেনে তুলে বিশ্বের সমীহ আদায় করছেন। কিন্তু একবারের জন্যও আদানি প্রসঙ্গে ঢুকলেন না।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আধঘণ্টা কেটে গেলে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করেন। পরে ফিরে এসে সারা ক্ষণ ‘আদানি, আদানি’ স্লোগান দিতে থাকেন। তাতে প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বিচলিত হননি। আদানি প্রসঙ্গেও ঢোকেননি। বরং তাঁর আমলে সড়ক, রেল, বন্দর, বিদ্যুৎ, অবকাঠামোর কী বিপুল উন্নতি হয়েছে, তার উদাহরণ দিয়ে গেছেন যেসব ক্ষেত্রে আদানি গোষ্ঠী গত ১০ বছরে অবদান রেখেছে। বিরোধীদের পাল্টা বিজেপি সদস্যরাও কিছু সময় ‘মোদি মোদি’ স্লোগান দেন।
আদানি গোষ্ঠী প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী নির্দিষ্টভাবে যেসব প্রশ্ন রেখেছিলেন, সেসবের একটিরও ধারেকাছে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হাঁটেননি। তার বদলে তিনি তাঁর ৯ বছরের শাসনামলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, প্রযুক্তি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, পানীয় জল, পাকা শৌচাগার, রান্নার গ্যাস, বিনা পয়সায় গরিবদের খাদ্য বিতরণের তালিকা পেশ করেন। সেই সঙ্গে কংগ্রেসসহ বিরোধীদের কটাক্ষ করে বলেন, ‘এত কাল যাঁরা শাসন করেছেন এবং এখন ভাবছেন আবার তাঁদের সুযোগ আসবে, তাঁদের আত্মবিশ্লেষণ করা দরকার। মোদিকে গালাগাল না করে তাঁরা বরং আত্মনিরীক্ষা করুন।’ রাহুল গান্ধীর উদ্দেশে ভারত জোড়ো যাত্রার নাম না করে মোদি বলেন, ‘পদব্রজে আমিও দেশ ঘুরেছি। দেখেছি, দেশের মানুষ ইতিবাচকতা পছন্দ করে। নেতিবাচক মনোভাব নয়। শুধু মোদিকে গালি না দিয়ে আত্মনিরীক্ষা করুন।’
আদানি প্রসঙ্গে না ঢুকে তিনি বলেন, ‘মোদির বিরুদ্ধে শুধু শুধু অভিযোগ করে কোনো লাভ হবে না। ১৪০ কোটি ভারতবাসী মোদির রক্ষাকবচ। মিথ্যা অভিযোগ করে, গালি দিয়ে মোদির প্রতি তাঁদের ভরসা টলানো যাবে না। মোদি নিজের জীবন বাজি রেখে এই দেশবাসীর মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।’
প্রতিবছর বাজেট অধিবেশনের শুরু হয় সংসদের যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দিয়ে। তারপর সেই ভাষণের ওপর আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। এবার আদানির কারচুপি নিয়ে হিনডেনবার্গের রিপোর্ট আসার পর থেকেই বিরোধীরা ওই বিষয় নিয়ে সরব। তাঁদের দাবি, সংসদে আলোচনা ও যুগ্ম সংসদীয় কমিটি গঠন করে অথবা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির গড়ে দেওয়া কমিটিকে দিয়ে অভিযোগগুলোর তদন্ত করতে হবে। এ দাবিতে তিন দিন অধিবেশন ভন্ডুল হয়ে যাওয়ার পর বিরোধীরা সংসদ চলতে দিতে রাজি হন। সেই বিতর্কে রাহুলসহ অন্য বিরোধী নেতাদের ভাষণে প্রাধান্য পায় আদানি প্রসঙ্গ।
মোদি-আদানি সম্পর্কের বহু উদাহরণ দাখিল করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রাহুল সরাসরি কয়েকটি প্রশ্ন রেখেছিলেন। কিন্তু মোদি তাঁর দীর্ঘ ১ ঘণ্টা ৭ মিনিটের ভাষণে একটিবারের জন্যও আমদানির নাম উচ্চারণ করেননি। যদিও দেশের উন্নতির খতিয়ান দিয়ে বলেছেন, তাঁকে মিথ্যা গালি দিয়ে, অনর্থক অভিযোগ করে লাভ নেই। তিনি বলেন, ‘খবরের কাগজ বা টেলিভিশন মোদির ভরসা জোগায়নি। মোদি দেশের জন্য প্রাণপাত করে। দেশের দরিদ্রের কথা ভাবে। সে জন্যই দেশবাসী মোদিকে ভরসা করে। সেই ভরসা কতখানি, তা বিরোধীদের ভাবনাচিন্তার বাইরে।’
মঙ্গলবার রাহুলের ভাষণের যে যে অংশে মোদি-আদানির সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছিল, সেগুলোর কোনো কোনোটি সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হয়। তার প্রতিবাদে বুধবার রাহুল টুইট করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীজি, গণতন্ত্রের স্বর আপনি মুছে দিতে পারবেন না। মানুষ সরাসরি আপনাকে প্রশ্ন করছে। জবাব আপনাকে দিতেই হবে।’ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশও টুইট করে বলেন, ‘আদানি কেলেঙ্কারির সঙ্গে মোদির যোগসাজশ নিয়ে রাহুল গান্ধীর বক্তব্য মুছে দেওয়ার মধ্য দিয়ে লোকসভায় গণতন্ত্রকে সমাধিস্থ করা হলো। ওম শান্তি।’
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: