অসহনীয় দ্রব্যমূল্যে দিশেহারা ক্রেতা

রোজার নিত্যপণ্যের বাজার দাম বাড়তির কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ।

অসহনীয় দ্রব্যমূল্যে দিশেহারা ক্রেতা
নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয়, সাধারণ ক্রেতারা দিশাহারা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান শুরু। রমজান এলেই হালচাল পাল্টাতে থাকে নিত্যপণ্যের। বিশেষ করে রোজার নৈমিত্তিক কিছু সামগ্রীর। যার তালিকায় ছোলা, চিড়া, মুড়ি, বেশন, ভোজ্য তেল, চিনি, পিয়াজ, রসুন, আলু, খেজুর, কলা, রুহ্ আফজাসহ অন্যান্য ফলসমূহ। বাজারে আসা ক্রেতারা বলছেন, রোজার  কয়েক সপ্তাহ আগে বাজারে তেল, পিয়াজ, রসুন, ছোলাসহ অন্যান্য রমজানের প্রয়োজনীয় সামগ্রীগু হু হু করে দাম বাড়তে থাকে। এটা নিত্যনৈমিত্তিক কাণ্ড। অপরদিকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজার অন্য বছরের তুলনায় এবার স্বাভাবিক আছে। পিয়াজের আমদানি বন্ধ, এখন কাটিকাটা পিয়াজ নেই, বীজের পিয়াজ। তাই দাম বেশি মনে হচ্ছে। রোজার নিত্যপণ্যের বাজার দাম বাড়তির কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। ইফতারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে খেজুর। সারা বছরের তুলনায় যে পরিমাণ খেজুর বিক্রি হয়, তার বহুগুণ বিক্রি হয়ে থাকে রমজান মাসে। তবে বিগত বছরের তুলনায় বর্তমানে ফলের বাজারে খেজুরের দাম বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা, ডাকবাংলো, নিউমার্কেট, চিত্রালী ও দৌলতপুর খুচরা ফলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খেজুর আম্বার ১৫০০ টাকা, আজোয়া ১০০০ টাকা, মরিয়ম ৯০০ টাকা, শুকারী ৭৫০, মিফজল (বড়) ১৩০০ টাকা, মাঝারি ১২০০ টাকা এবং ছোট ১০০ টাকা, কাঁচা খেজুর ৫০০ টাকা, দাওয়াজ ৪০০ টাকা, দালাদা ৫৫০ টাকা, ফিড খেজুর ৫০০ টাকা, ইরানি মরিয়ম ১০০ টাকা, বরই খেজুর ৪০০ টাকা, বস্তা খেজুর ১৪০ টাকা আপেল সবুজ ৩২০-৩৫০ টাকা, ফুজি আপেল ২৬০-৩০০ টাকা, বেদনা ৩৫০-৪০০ টাকা, কমলা ২২০ টাকা, মালটা ২২০ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ইফতারের নিত্যপণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে- খুলনার ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারে রমজানের নিত্যপণ্যের মধ্যে সয়াবিন তেল ২ লিটার ৩৭০ টাকা, ১ লিটার ১৮৫ টাকা, মসুর ডাল দেশি ১৪০ টাকা, মোটা ১০০ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা, চিনি ১১৫ টাকা, আলু, ২৫ টাকা, ছোলার ডালের বেসন ১১০ টাকা, বুট ডালের বেসন ৮৫ টাকা, মুড়ি প্যাকেট ১/২ কেজি ৭০ টাকা, চিড়া প্রতি কেজি ৬০/৬৫ কেজি, পিয়াজ ৩৫ টাকা, রসুন দেশি (বাছাইকৃত) ১০০ টাকা, চায়না ১৫০ টাকা, রুহ আফজা বড় ৩৫০ টাকা, ছোট ২১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নিউমার্কেট বাজারে রমজানের নিত্যপণ্যের মধ্যে সয়াবিন তেল ৫ লিটার ৬৯০ টাকা, ২ লিটার ৩৭০ টাকা, ১ লিটার ১৮৫ টাকা, মসুর ডাল দেশি ১৪০ টাকা, মোটা ১০০ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা, চিনি ১১৫ টাকা, আলু ২০ টাকা, ছোলার ডালের বেসন ১০০ টাকা, বুট ডালের বেসন ৮০ টাকা, মুড়ি প্যাকেট ১/২ কেজি ৭০ টাকা, চিড়া প্রতিকেজি ৬০ কেজি, পিয়াজ ৩৫ টাকা, রসুন দেশি ৮০ টাকা, রুহ আফজা বড় ৩৫০ টাকা, ছোট ২১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

প্রাইভেট কোম্পানির চাকরিজীবী মঈনুল ইসলাম জানান, রমজান আসার আগেই প্রতিটি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে পিয়াজ, তেল, চিনি, বেসন, খেজুরের দাম অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। ফার্মের মুরগি বর্তমানে ২৫০ টাকা, গরুর গোস্ত ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তো ঈদের সময় ছাড়া তেমন কেনা পড়ে না। সবজির বাজারে ঢুকতে তো ভয় লাগে ৫০-৬০ টাকার নিচে কোনো সবজিই নেই। রোজার আগেই দুশ্চিন্তায় পড়েছি, কারণ হাতে গোনা গোনা বেতন পাই। ফুটপথ ব্যবসায়ী মামুন জানান, প্রতিবছরই গোটা রমজান মাসে পরিবারের ছেলেমেয়ে সকলে মিলে রোজা রাখি। গরিবের গোস্তের চাহিদা পূরণের শেষ সম্বল ব্রয়লার মুরগির বিকল্প নেই। বর্তমানে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ এমন দাম বেড়েছে, কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। ব্যবসায়ীরা একটা অজুহাত দেখিয়ে দিলে হয়। মুরগির খাবারের দাম বাড়তি। সোজা কথা শীতকালে মুরগি মরে যাওয়ার ভয়ে ব্যবসায়ীরা সস্তায় মুরগি বিক্রি করেছে। এখন রমজানকে সামনে রেখে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইচ্ছামতো দাম হাঁকাচ্ছে, মরণ আমাদের মতো সাধারণ মানুষের। 

এদিকে রমজান মাসে রোজাদার মুসল্লিদের একটি প্রধান খাবারের চাহিদা হলো কলা। কলা না হলে যেন রোজাদারদের খাদ্যের তালিকার ঘাটতি থেকে যায়। তবে এবার খুলনায় কলার বাজারগুলো বা রেল স্টেশন থেকে পর্যাপ্ত কলার আমদানি হচ্ছে এমনটি দেখা গেলেও কলার দাম আগের তুলনায় দ্বিগুণ। বর্তমানে এক ডজন মাঝারি আকারের কলার দাম ৮ থেকে ১০ টাকা। আর বড় সাইজের কলার ডজন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। মোট কথা এখন ছোট কলার দাম ৬ টাকার নিচে নেই। কলার দাম এত বৃদ্ধি পাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। বিশেষ করে বেকায়দায় পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: