অবৈধ অভিবাসন ইউরোপের সীমান্তরক্ষী হতে না চাওয়া তিউনিসিয়ার সঙ্গে ইইউয়ের চুক্তি

অবৈধ অভিবাসন ইউরোপের সীমান্তরক্ষী হতে না চাওয়া তিউনিসিয়ার সঙ্গে ইইউয়ের চুক্তি

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : অবৈধ অভিবাসন রোধে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। দীর্ঘ আলোচনার পর রোববার (১৬ জুলাই) এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং এর অধীনে ইইউয়ের কাছ থেকে বিপুল অংকের আর্থিক সহায়তাও পাবে দেশটি।

বিপুল ওই আর্থিক সহায়তা তিউনিসিয়াকে তার বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে। সোমবার (১৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিউনিসিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোববার একটি ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যার মধ্যে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ইউরোপের উদ্দেশ্যে নৌকায় করে যাত্রা করা অভিবাসীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার জেরে উত্তর আফ্রিকার দেশটির সীমান্ত আরও কঠোর করা।

কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর এবং তিউনিসিয়াকে ইউরোপের ১ বিলিয়ন ইউরো আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলো। আর্থিক এই সহায়তা তিউনিসিয়া তার বিপর্যস্ত অর্থনীতি, রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন পুনরুদ্ধার এবং অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় ব্যাবহার করতে পারবে। অবশ্য বেশিরভাগ তহবিলই অর্থনৈতিক সংস্কারের ওপর নির্ভরশীল।

ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট টুইটারে বলেছেন, ‘এতে মানব পাচারকারীদের ব্যবসায়িক মডেলকে ব্যাহত করার বিষয়টি রয়েছে। এছাড়া সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা এবং নিবন্ধন ও প্রত্যাবর্তনের উন্নতি করার বিষয়টিও এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করার প্রচেষ্টাকে জোরদার করার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’


ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডের লিয়েন বলেছেন, অবৈধ অভিবাসন রোধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তিউনিসিয়াকে ১০০ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ দেবে। চুক্তিটি সামষ্টিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, গ্রিন এনার্জি স্থানান্তর এবং বৈধ অভিবাসনকে উৎসাহিত করবে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিউনিসিয়া থেকে ইউরোপ অভিমুখে অভিবাসীদের বহনকারী নৌকার সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টাকারী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য এই রুট ২০১৭ সালের পর চলতি বছরে সবচেয়ে প্রাণঘাতীও হয়ে উঠেছে।

মূলত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপ অভিমুখী বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রা শুরুর প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে তিউনিসিয়া। আর এটিই তিউনিসিয়ার জন্য অভূতপূর্ব অভিবাসন সংকট সৃষ্টি করেছে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, ‘আমরা খুবই সন্তুষ্ট, এটি তিউনিসিয়া এবং ইইউয়ের মধ্যে সত্যিকারের অংশীদারিত্ব তৈরির দিকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা অভিবাসন সংকটকে সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম।’

চলতি বছর ইতালিতে অবৈধ অভিবাসীদের আগমন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ জুলাই পর্যন্ত নৌকায় করে ৭৫ হাজারেরও বেশি অভিবাসী ইতালিতে পৌঁছেছেন। গত বছরের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৯২০ জন।

অবশ্য গত মাসে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ বলেছিলেন, তার দেশ ইউরোপের সীমান্তরক্ষী হয়ে উঠবে না।

এছাড়া গত মাসে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স বলছিল, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আফ্রিকান ইউনিয়নকে বর্ণবাদী বলে প্রেসিডেন্ট সাইদ সাব-সাহারান অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউনের ঘোষণা দেওয়ার পর বিপজ্জনকভাবে ভূমধ্যসাগর পারাপার বেড়ে গিয়েছিল।