২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের খসড়ায় অনুমোদন

বুধবার (১০ মে) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য আয়-ব্যয়ের এ খসড়া পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের খসড়ায় অনুমোদন

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: প্রায় ৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ বাড়লেও নতুন কোন চমক থাকছে না। নতুন বাজেটে বাড়তি বরাদ্দের বেশির ভাগই ব্যয় হবে সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকির দায় মেটাতে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বুধবার (১০ মে) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য আয়-ব্যয়ের এ খসড়া পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থি ছিলেন। এছাড়া পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমসহ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত অর্থ বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপিত করা হয় বাজেটের খসড়া। এটাই চূড়ান্ত নয়। বাজেটে আরও  কাটছাট হতে পারে। নতুন কিছু যোগ হতে পারে আবার কিছু বাদ যেতে পারে।  কোন খাতের বরাদ্দ বাড়তে পারে আবার কোন কোন খাতের বরাদ্দ কমতেও পারে। আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের আগে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে মূলস্ফীতি, ভর্তুকি এবং দেশি-বিদেশি ঋণের বাড়তি সুদ পরিশোধকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফলে এসব খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হচ্ছে। এর ফলে নতুন বাজেটে নতুন চমক রাখার সুযোগ কম। তাই এবার অনেকটা সংকোচনমূলক ও গতানুগতিক বাজেট হচ্ছে। সরকারের চলমান কৃচ্ছ্রসাধনের চেষ্টা আগামী অর্থবছরেও থাকবে। অন্যান্য নির্বাচনী বছরের বাজেটে যেভাবে জনতুষ্টি অর্জনের জন্য নতুন কর্মসূচি নেওয়া হয়, এবার তেমনটি থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। যদিও গত এপ্রিল মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং গড় মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

সূত্র জানায়, আগামী সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির আওতায় নতুন করে ৭ লাখ ৩৫ হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়বে ৫ লাখ ৩৫ হাজার। এছাড়া বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়বে ১ লাখ করে। একই সঙ্গে বয়স্ক ভাতার উপকারভোগীদের মাসিক ভাতার পরিমাণ ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতদের মাসিক ভাতার পরিমাণ ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে চলতি বাজেটের চেয়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। যার একটি অংশ ব্যয় হবে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন পরিশোধে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৪১ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ছে বিদেশি ঋণ ও সুদ পরিশোধে। কয়েকটি মেগা প্রকল্পে নেওয়া বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ শুরু হওয়ার পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, লাইবর রেট অত্যধিক বেড়ে যাওয়া, ইউএস ট্রেজারির সুদহার বাড়ার কারণে আগামী অর্থবছরে বিদেশি ঋণ ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হতে পারে ২৪ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।

এছাড়া দেশের বাজারে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বাড়ার সঙ্গে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী আগামী জুলাই থেকে ব্যাংক ঋণের সুদের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার করা হলে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধেও ব্যয় বাড়বে। তাই এ খাতে ৭৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী বাজেটে সুদ বাবদ প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এটি আগামী বাজেটের প্রাক্কলিত জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। চলতি বাজেটে জিডিপির ১ দশমিক ৮০ শতাংশ ধরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকি ও নগদ প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এটি বেড়ে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। বিপুল ভর্তুকির মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ থাকছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল; পরে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

সব ধরনের সারের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়ানোর ফলে আগামী অর্থবছর কৃষি খাতে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কমবে বলে হিসাব করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ফলে সংশোধিত বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছর এ খাতের ভর্তুকিতে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। আগামী অর্থবছর কৃষি খাতে ভর্তুকিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকতে পারে বলে জানা গেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ খুব বেশি বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে এ খাতে বরাদ্দ প্রায় ৭ শতাংশ বাড়িয়ে আগামী বাজেটে মোট ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হচ্ছে। চলতি এডিপির আকার ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি টাকা।