হিন্দুত্ববাদী পপ: মুসলিমবিদ্বেষী গান গেয়ে জনপ্রিয় কৃষ্ণবংশী

আল-জাজিরার রিপোর্ট

হিন্দুত্ববাদী পপ: মুসলিমবিদ্বেষী গান গেয়ে জনপ্রিয় কৃষ্ণবংশী
হিন্দুত্ববাদী পপ: মুসলিমবিদ্বেষী গান গেয়ে জনপ্রিয় কৃষ্ণবংশী

প্রথম নিউজ,অনলাইন ডেস্ক:  ‘ইনসান নাহি হো সালো, হো তুম কসাই; বহুত হো চুকা হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই’। এই গানের অর্থ হচ্ছে, তোমরা মানুষ নও, তোমরা কসাই; অনেক হিন্দু-মুসলিম ভ্রাতৃত্ব হয়েছে। এগুলি হল ভজন বা ধর্মীয় গানের লাইন যা গেয়েছেন গায়ক প্রেম কৃষ্ণবংশী। তিন বছর আগে তিনি গানটি ইউটিউবে পোস্ট করেছিলেন এবং তারপর থেকে সেটি হাজার হাজার বার দেখা হয়েছে। ভারতে ক্রমশ বিদ্বেষমূলক রাজনীতি দেখা যাচ্ছে। আর তাতে উৎসাহিত হয়ে এ ধরনের গান লিখছেন কৃষ্ণবংশীর মতো শিল্পীরা। এই গান এখন হিন্দুত্ববাদী মিছিলগুলোর অংশ হয়ে গেছে। হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলির সমাবেশে মুসলিম বিরোধী গানগুলি বাজানো হয়। মূলত ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো যা হিন্দি বেল্ট নামে পরিচিত, সেখানেই এই সংস্কৃতি বেশি দেখা যায়।  খুঁজে দেখা গেছে, ইউটিউবসহ অন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এরকম ডজন ডজন মিউজিক ভিডিও রয়েছে। যেসব হিন্দু ডানপন্থীরা এসব গান পছন্দ করেন এবং শেয়ার করেন। উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউয়ের স্নাতক প্রকৌশলী কৃষ্ণবংশী বলিউডের গায়ক হতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু প্রচন্ড প্রতিযোগিতার কারণে তার সেই স্বপ্ন সত্যি হয়নি। এরপর তাই তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য লাইভ পারফরম্যান্স এবং বিভিন্ন ইভেন্টে গান করতেন। তবে ২০১৪ সালে ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি বদলে যায়। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বিভক্ত হয়ে পড়ে ভারতীয় সমাজ। মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বাড়তে থাকে মানুষের মধ্যে। তাদের উপরে আক্রমণ প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘৃণা ছড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে সংগীত, কবিতা এবং সিনেমার মতো বিষয়গুলোও। 

সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ভারতে একাধিক ধর্মীয় সহিংসতা দেখা গেছে। অনেক এলাকায় ডানপন্থী দলগুলি মুসলিম পাড়ায় মিছিল করেছে এবং মসজিদের সামনে উচ্চস্বরে ইসলামফোবিক গান বাজিয়েছে। এসব কর্মকান্ড দাঙ্গায় উস্কানি সৃষ্টি করে। এ ধরনের গান লেখেন কৃষ্ণবংশী। তিনি মূলত হিন্দি এবং ভোজপুরি ভাষায় গান করেন। তার ভক্তদের বেশিরভাগই উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা। এটি প্রায় ২০ কোটি মানুষের একটি রাজ্য। এর ক্ষমতায় রয়েছেন বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ, যিনি বিভিন্ন বক্তব্যে মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করেছেন। বিভিন্ন গানে কৃষ্ণবংশী উস্কানি দিয়ে বলেন, যে মুসলমানরা দেশ বিরোধী তাদের পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিত। তার একটি গানে বলা হয়েছে, মুসলিমরা শেষ পর্যন্ত হিন্দুদের নামাজ পড়তে বাধ্য করবে যদি হিন্দুরা তাড়াতাড়ি সচেতন না হয়। 

যদিও কৃষ্ণবংশীর দাবি, এসব গানের মধ্যে ঘৃণার কোনো উপাদান নেই। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, আমি মনে করি না আমার সঙ্গীত ইসলামফোবিক। আমার সঙ্গীত সত্যকে নির্দেশ করে। কিন্তু তারপরেও কেউ যদি মনে করে যে এসব গানের মাধ্যমে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে তাহলে আমার কিছু করার নেই। সম্প্রতি, উত্তরপ্রদেশ সরকার মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের প্রশংসা করে গান লেখার জন্য কৃষ্ণবংশীকে পুরস্কৃত করেছে। তিনি যেসব গান লিখেছেন তার অনেকগুলোতেই মোদি এবং আদিত্যনাথের মতো হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের গুণগান গাওয়া হয়েছে। 

এছাড়া গানগুলি মুঘল এবং উপমহাদেশের অন্যান্য মুসলিম শাসকদের সম্পর্কেও নেতিবাচক কথা বলে। এতে মুসলিম শাসকদের আগ্রাসনকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন কৃষ্ণবংশী। দাবি করেন, অস্ত্রের মুখে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করা হয়েছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom