হঠাৎ ব্যাপকহারে বিরোধী নেতাকর্মীদের ধরপাকড়!
গত ৩ দিনে ঢাকা থেকে অন্তত ২২ নেতাকর্মীকে আটক করে নতুন ও পুরাতন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিএনপি’র এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৯শে জুলাই থেকে ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশ থেকে দলটির ৫৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: হঠাৎ করে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশেষ করে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতিদিনই গ্রেপ্তার করছে পুলিশ ও ডিবি। গত ৩ দিনে ঢাকা থেকে অন্তত ২২ নেতাকর্মীকে আটক করে নতুন ও পুরাতন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিএনপি’র এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৯শে জুলাই থেকে ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশ থেকে দলটির ৫৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর সর্বশেষ ৫ দিনে আরও অর্ধশতাধিকসহ এখন পর্যন্ত ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেশির ভাগ অভিযান পরিচালনা করছে সাদা পোশাকের পুলিশ।
গ্রেপ্তার বা আটকের পর শুরুতে স্বীকার করছেন না সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। আদালতে তোলার পরে স্বজনরা গ্রেপ্তারের তথ্য পাচ্ছেন। সাদা পোশাকের পুলিশ তুলে আনাতে নেতাকর্মীদের স্বজনদের মধ্যে অজানা এক আতঙ্ক বিরাজ করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি রাজনৈতিক তৎপরতা ও কর্মসূচি বেড়ে গেছে। দলটির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন।
নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য দলের হাইকমান্ড থেকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান ও হয়রানির কারণে অনেকে সমস্যায় পড়ছেন। নামে-বেনামে মামলা দিয়ে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করেছে। রাতের বেলা অনেক নেতাকর্মী বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না। তবে পুলিশ ও ডিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না, বরং যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারের পর আইনি প্রক্রিয়া মেনে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হচ্ছে।
সূত্রমতে, ধরপাকড় শুধু রাজধানী ঢাকাতেই হচ্ছে না। সারা দেশে একইভাবে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এতে করে দলটির সারা দেশের নেতাকর্মীরা এক আতঙ্কের মধ্যে আছেন। শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিএনপি’র নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ১৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। ওইদিন রাত ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে নয়াপল্টনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তানভীর আহমেদ রবিন শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে কার্যালয় থেকে বের হন।
এরপর মোটরসাইকেলে করে নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে রওয়ানা হন। তখন আগে থেকে কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশে অবস্থান করা গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘিরে ফেলে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়। উপস্থিত অনেক লোক এ ঘটনা দেখেছেন। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সেটা নিশ্চিত হয়েছি। কিন্তু ডিবি পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলে তা স্বীকার করেনি। তুলে নিয়ে গিয়ে স্বীকার না করার এই ব্যাপারটি মনুষ্যত্বহীন কাজ। অথচ এ কাজটি তারা ধারাবাহিকভাবে করছে। তিনি আরও বলেন, এই সরকার আগামী নির্বাচনও একতরফা করতে চায়। সে কারণে বিএনপিসহ বিরোধী দল নির্মূলের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাদের বেছে বেছে টার্গেট করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
এর আগে গত শুক্রবার ছাত্রদলের ৬ নেতাকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। প্রথমে শুক্রবার আজিমপুরের বাসা থেকে সাদা পোশাকে তুলে নেয়া হয় ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুমিনুল ইসলাম জিসানকে। তুলে নেয়ার পর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর ছাত্রদলের ৫ জন নেতা খোঁজ নিতে জিসানের আজিমপুরের বাসায় গেলে তাদেরকেও সাদা পোশাকে তুলে নেয়া হয়। এরপর থেকে তাদের কারোরই সন্ধান মিলছিল না। শনিবার দিনভর নিখোঁজদের পরিবার, বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা এ নিয়ে পৃথক পৃথক বিবৃতি দেন। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে আল্টিমেটামও দেন। তবে পুলিশ, ডিবি ও র্যাবের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। পরে শনিবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় ওই ৬ ছাত্রদল নেতাদের ৩টি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সেদিন এক জায়গায় মিলিত হয়ে নাশকতা করার পরিকল্পনা করছিলেন।