সরকার গুম করে ভয় দেখিয়ে রাষ্ট্র চালাচ্ছে: মির্জা ফখরুল
আজ মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: গুমের ঘটনায় জাতিসংঘের অধীনে স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম করে ভয় দেখিয়ে রাষ্ট্র চালাচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এই দাবি জানান। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিনের যৌথ উদ্যোগে বেলা ১২টা থেকে এক ঘন্টার মানববন্ধন করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এতে শতাধিক গুম পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনের ছবি নিয়ে নিয়ে মানবন্ধনে অংশ নেন। গুম হওয়া, বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড, রাজনৈতিক নিপীড়ন বন্ধের দাবি জানিয়ে নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন প্ল্যার্কার্ড বহন করে। মানববন্ধন কর্মসূচির অনুষ্ঠানস্থলে গুম ও বিচারবর্হিভূত হত্যার নিহতদের দৃশ্য নেতা-কর্মীরা অভিনয় করে প্রদর্শন করে যা নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি কাড়ে। ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইলে নাইটেঙ্গল মোড় পর্যন্ত রাস্তায় একপাশে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গুমের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ জানায়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রধান(হাইকমিশনার মিশেল ব্যাসেলে) কিছুদিন আগে এখানে এসেছিলেন, তিনি পরিস্কারভাষায় বলে গেছেন বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গুমের অভিযোগ আছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। আমরাও আজকে এই গুম দিবসে গুম পরিবারের সাথে একাত্ম হয়ে দাবি করছি, ঘোষণা করছি যে, আপনারা(সরকার) এখানে জাতিসংঘের অধিনে অবিলম্বে স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। অন্যথায় ওই সমস্ত সরকার প্রধান যারা অতীতে গুম কেের্ছ তাদের যেভাবে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে আপনাদেরকেও সেভাবে বিচারের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, আজকে গুম হওয়া পরিবার যারা এসেছে এখানে তাদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। একটা কথা পরিস্কার করে বলতে চাই, তোমরা একা নাও, তোমাদের সঙ্গে সারা বাংলাদেশের মানুষ আছে, তোমাদের জন্য সারা বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করবে। আজকে আমাদের এই সন্তানদের(গুম হওয়া পরিবার) এদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য, তাদের বাবাকে, তাদের ভাইকে, তাদের ছেলেকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদেরকে আরো বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, আমাদেরকে দূর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে।
‘লাঠিয়াল বাহিনীতে কাজ হবে না বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনই ভয় পেয়ে গেছে। আমাদের যে আন্দোলন হচ্ছে সারা দেশে, এতেই কিন্তু এখনই ভয় পেয়ে েেগ্ছ। আবার সেই লাঠিয়াল বাহিনী নামিয়ে দিয়েছে। কোনো লাঠিয়াল বাহিনীতে কাজ হবে না। মানুষ জেগে উঠেছে। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি তরুন যুবকদেরকে সবাই এেিগ্য় আসুন দেশকে রক্ষা করবার জন্য, আমার এই শিশুর বাবাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য, ভাইদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এমন আন্দোলন গড়ে তুলি যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ, এই দুঃশাসন, ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক সরকার, মানবতার সরকার, জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।
সরকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কিছুক্ষন আগে গজারিয়াতে আমাদের বিএনপির নেতা-কর্মীরা এই গুম দিবসের অনুষ্ঠান করছিলো। যেখানেও পুলিশ তাদের ওপর আক্রমন করেছে। সারা দেশে তারা একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। ভয় দেখিয়ে, গুম করে, খুন করে এরা রাষ্ট্র চালাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন এদের মিথ্যাচার। এতো মিথ্যাচার করে যে একে গোয়েবেলসীয় কায়দায় মিথ্যাচার করে যে, ওদের একটি বিশেষ নোবেল পুরস্কার দিতে হবে মিথ্যাচারের জন্য। এখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের যিনি প্রধান তিনি কিছুদিন আগে এসেছিলেন। তিনি সকলের সঙ্গে কথা বলেছেন। কথা বলার পরে তিনি মন্ত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। মন্ত্রীদের বলেছেন যে, এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, প্রতিটি ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন এবং সেগুলোকে তিনি এডড্রেস করতে বলেছেন। র্যাব যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে সে বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন। পরে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার একটা প্রেস কনফারেন্স করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, এখানে গুম হচ্ছে, গুমের অভিযোগ আছে। সব শেষে তিনি বলেছেন যে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী তারা জাতিসংঘের শান্তি মিশনের কাজ করে। এই শান্তি মিশনের কাজ করা কোনো কর্মকর্তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা তা দেখাও কিন্তু কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এই ইংগিত করে এই কথাগুলো সাধারণ কথা নয়।
তিনি বলেন, এই সরকারের যে অহেতুক যে ঔদ্যর্ত যেটা প্রকাশ করার জন্য তারা কি করেছে? অভিযুক্ত একজন পুলিশ অফিসারকে জাতিকে অপমান করে তিনদিনে একটা ভিসা নিয়ে জাতিসংঘের প্রোগ্রামে গেছে এবং এটা প্রচার করছে কি? যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে কোনো কথাই বলেননি। ডাহা মিথ্যা কথা। আপনারা জনগণকে প্রতারণা করছেন। অবশ্যই জাতিসংঘের যে প্রধান এখানে এসেছিলেন তিনি পরিস্কারভাষায় বলে গেছেন যে, বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গুমের অভিযোগ আছে, তার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের প্রত্যেকটি গুমের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জড়িত। প্রত্যাকটি গুমের পেছনে আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী। এখন তাদের মুখ থেকেই এ কথা বেরিয়ে আসছে। আজকের এই দিবসটি আন্তর্জাতিক গুম দিবস। সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিকামী মানুষ এই দিবসটি পালন করছে। বিভিন্ন দেশের স্বৈরাচার দানবীয় সরকারের বিরুদ্ধে যারা রাষ্ট্রকে এবং বিরোধী পক্ষকে নির্মূল করার জন্য এই গুমের মত কর্মসূচি নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই আজকের এই দিবস। গুম এবং বিচারবর্হিত হত্যা মানবতার সবচেয়ে ভয়াবহতম অপরাধ। এই অপরাধ করেছেন শেখ হাসিনা। এই অপরাধ করেছেন আওয়ামী লীগ সরকার। আজকে ইলিয়াস আলী কেন হারিয়ে যাবে? চৌধুরী আলম কেন হারিয়ে যাবে? এটা তো পারিবারিক কোন বিরোধ নয়। সাইফুল ইসলাম হিরু, সুমন, জাকির কেন হারিয়ে যাবে, বিএনপি সরকারের সাবেক একজন মন্ত্রী যিনি বারবার এমপি হয়েছেন তাকে বিদেশে গুম করা হয়েছে। এর সঙ্গে শেখ হাসিনা জড়িত। এটার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকার জড়িত। না হলে এ পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ গুম হবে কেনো।
তিনি বলেন, কয়দিন আগে একজন মন্ত্রী বলেছেন, মাঝ সমুদ্রে অনেকে জাহাজ ডুবিতে মারা গেছে। সলিল সমাধি হয়েছে। এটা কিন্তু সত্যি কথা বলেছেন। গুয়েতেমালা, আর্জেন্টিনা, চিলিতে এখানে সামরিক লোকেরা তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গুম করার জন্য বিমানে করে নিয়ে ওইসব নেতাদের আটলান্টিকের মাঝে ফেলে দিতো। এটার সঙ্গে পরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য মিলে যায়। আপনারা আমাদের নেতাদের কোথায় ফেলেছেন,...ভারত মহাসাগরে ফেলেছেন। এইটা এখন খোলাসা করে বলুন। এই যে আয়নাঘরের কথা। এটাও স্বীকার করেছে এই আওয়ামী লীগের একজন প্রধান নেতা। তার নাম হানিফ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ১/১১ সরকার হলো বিএনপি জামায়াত সরকার। অথচ শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, আমাদের আন্দোলনের ফসল ফখরুদ্দিন- মঈন উদ্দিন সরকার। এই হানিফ সাহেব বলেছেন, ১/১১ সরকারের সময় আয়নাঘর করা হয়েছে। তার মানে এই আয়নাঘর আপনারা করেছেন। এখানে বিএনপিসহ অসংখ্য মানুষকে যে নিপীড়ন,নির্যাতন করা হয়েছে এটি আওয়ামী লীগ জানে এবং তাদের পরামর্শে করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিনের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ, গুম হওয়া ছাত্রদলের সাইফুর রহমান সজীবের বাবা শফিকুর রহমান, পারভেজ রেজার মেয়ে হৃদি, সেলিম রেজার পিন্টুর বোন নদী, সোহেলের মেয়ে সাফা, সাজেদুল ইসলাম সমুনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি প্রমুখ।
এছাড়াও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ হাজার হাজার বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews