সুদের টাকা দিতে না পারায় কৃষককে শিকলবন্দী, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার

 সুদের টাকা দিতে না পারায় কৃষককে শিকলবন্দী, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার

প্রথম নিউজ, নাটোর : নাটোরে সুদের টাকা দিতে না পারায় আসাদ আলী (৫৫) নামে এক কৃষককে শিকলবন্দী করার ঘটনায় অভিযুক্ত সুদ কারবারি আব্দুল আজিজকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টায় গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের অভিযুক্তের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী শাহানার খাতুন বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, শনিবার সুদের টাকা আদায়ের জন্য ভুক্তভোগী ওই কৃষককের বাড়ি থেকে তাকে জোরপূর্বক তুলে এনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে শিকলবন্দী করে রাখেন অভিযুক্ত আব্দুল আজিজ।

ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে রাতেই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযানে নামে পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার ভোর ৪টার দিকে অভিযুক্ত আব্দুল আজিজের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, সারারাত অভিযান পরিচালনা করে মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে জমি লিজের শর্তে সুদের কারবারি আজিজের থেকে ৮০ হাজার টাকা নেন কৃষক আসাদ। প্রথম দুই বছর সুদের টাকা ঠিকমতো পরিশোধ করলেও চলতি বছরের টাকা দিতে পারেনি কৃষক আসাদ। অনেক বার তাগাদা দিয়েও টাকা না পেয়ে গতকাল শনিবার সকালে কৃষক আসাদের বাড়িতে গিয়ে তার হাত-পা বেঁধে তুলে নিয়ে আসেন আব্দুল আজিজ ও তার লোকজন। পরে আজিজের বাড়ির বারান্দার খুঁটির সঙ্গে কোমরে শিকল পরিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় ওই কৃষককে।

শিকলবন্দি কৃষক আসাদ আলী বলেন, তিন বছর আগে আমি জমি লিজের ভিত্তিতে সুদে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম আব্দুল আজিজের কাছ থেকে। গত দুই বছরে ২০ হাজার টাকা সুদ এবং আসল ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি তাকে। বাকি ৫০ হাজার টাকা এ বছর দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই একটি দুর্ঘটনায় আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাই।

তিনি আরও বলেন, সংসারে স্ত্রী ও দুই মেয়ে আছে। একটি ছেলে ছিল সে বাড়িতে থাকে না। আমার উপার্জনেই সংসার চলতো। অভাবগ্রস্ত হয়ে যাওয়ায় আজিজের পাওনা টাকাগুলো দিতে বিলম্ব হচ্ছিল। তাই আজ সকালে আজিজ ও তার বাবা আফজাল হোসেনের সঙ্গে কয়েকজনকে নিয়ে আমার বাড়িতে আসেন। আমি বাড়িতে শুয়ে ছিলাম। আনুমানিক সকাল ৮টার সময় আমাকে জোরপূর্বক হাত-পা বেঁধে তারা তুলে নিয়ে আসে। এরপর আব্দুল আজিজের বসতবাড়ির বারান্দায় কোমরে শিকল পরিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখে। টাকা না দিতে পারলে আমাকে ছাড়বে না বলে জানায়। আমার এই মুহূর্তে টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই।