স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না জাপা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আর কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলগতভাবে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না জাপা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আর কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলগতভাবে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আর কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলগতভাবে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। এর অংশ হিসেবে আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে দলটি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নানা কৌশলের মাধ্যমে এই নীতিই ধরে রেখেছে দলটি। কখনো প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কখনো প্রার্থী নিজেই নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সর্বোপরি জাপার সমর্থন অদৃশ্য সুতোর টানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর দিকেই গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় নির্বাচনে জাপার এই আচরণ রাজনৈতিক কৌশল বলেও অনেকে মনে করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টি এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং দলের সাংগঠনিক ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করতে মনযোগ দিয়েছে। যেসব জেলা বা মহানগরে সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে সেখানে কীভাবে দলকে এগিয়ে নেওয়া যায় সেই কর্মকৌশল নিয়েই এগোচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কীভাবে সব আসনে প্রার্থী দেওয়া যায় তার কৌশল নিয়েও কাজ শুরু করেছেন তারা। এমন প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে আর সময় ব্যয় করতে চায় না হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত দলটি।
জাপার নেতৃবৃন্দ জানান, রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে সিরাজগঞ্জ-৬, কুমিল্লা-৫, সিলেট-৩ ও ঢাকা-১৪ উপনির্বাচনে দলের গঠনতন্ত্র মেনে মনোনয়ন দেয় জাতীয় পার্টির মনোনয়ন বোর্ড। পরবর্তীকালে প্রার্থীরা নিজেদের সিদ্ধান্তেই প্রার্থিতা থেকে সরে যান। এ নিয়ে পরবর্তী সময় দলীয় তদন্ত কমিটি হতে দেখা গেছে। আবার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দলকে না জানিয়ে প্রার্থিতা থেকে সরে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বহিষ্কারেরও ঘটনা ঘটেছে জাপায়।

তদন্ত কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাপার অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূইয়া আমাদের সময়কে বলেন, যারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছিল সাংগঠনিক রীতি অনুযায়ী তাদের বহিষ্কার করা হয়। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে জাতীয় পার্টি প্রার্থিতা করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের অথবা মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু বলতে পারবেন। আমি এই বিষয়ে বলার উপযুক্ত লোক নই।

কুসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেবে কিনা জানতে চাইলে পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এক শব্দে বলেন, ‘না।’ দলের একজন অতিরিক্ত মহাসচিব বলেন, প্রার্থী দিয়েই বা লাভ কী। নির্বাচন তো আর সুষ্ঠু হবে না। হয়তো জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে দুই বা আড়াই হাজার ভোট দেবে। এতে তো দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিহীনতা জাতীয় পার্টিকে জনপ্রিয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে; যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হলে প্রমাণ হবে। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আর কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলগতভাবে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেবে না।

দলটির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, প্রার্থিতা থেকে সরে যাওয়া, এটি কেন্দ্রেরই সিদ্ধান্ত। তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোথাও কোথাও প্রার্থীরা সরকারদলীয় প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা খসিয়ে নিয়েছে। কখনো কখনো টাকা খসিয়েছেন জাপার কেন্দ্রীয় নেতারাও। আর বহিষ্কার করার বিষয়টা আইওয়াশ মাত্র; এটা রাজনৈতিক কৌশলও।

জাপার প্রার্থিতা থেকে সরে যাওয়ার কৌশল শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিযোগ আছে, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে টাকার বিনিময়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যান মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাওয়া জাপার প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান। ওই সময় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদ ইসলাম পাপুলের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে নোমানকে দল থেকে বহিষ্কার করে জাপা। ওই নির্বাচনে পাপুল এমপি হন। বর্তমানে তিনি কুয়েতে মানব ও অর্থপাচারের দায়ে দ-িত হয়ে জেল খাটছেন। তার সংসদ সদস্যপদও বাতিল হয়েছে। পাপুলের শূন্য আসনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী নূর উদ্দিন চৌধুরী। সেখানে জাপার প্রার্থী ছিলেন শেখ মোহাম্মদ ফায়িজ উল্ল্যাহ। অভিযোগ আছে, এই উপনির্বাচনেও জাপার প্রার্থীকে সরিয়ে নিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চেষ্টা করেন। তবে জাপার প্রার্থী তার প্রস্তাবে রাজি হননি।

জানা গেছে, ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫, সিলেট-৩ ও সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে প্রার্থিতা থেকে সরে যাওয়া কৌশল ছিল জাতীয় পার্টির। কারণ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তারা স্থানীয় বা জাতীয় প্রোগ্রামে দলীয় কর্মসূচিতে এখনো আসা-যাওয়া করেন। কুমিল্লা সিটি নির্বাচন ১৫ জুন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন ২৬ মে। জাতীয় পার্টি থেকে এখন পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কেউ দলীয়ভাবে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন এমন কোনো খবর এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom