শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হলো
আজ মহাষষ্ঠী। ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা, শঙ্খ আর উলুর ধ্বনির মাধ্যমে বেল গাছের নিচে পূজার মাধ্যমে আবাহন করা হবে দেবী দুর্গাকে দুষ্টের বিনাশ ও সৃষ্টের পালনে আজই হবে দেবীর বোধন পূজা।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: বছরব্যাপী অপেক্ষার প্রহর শেষে শুরু হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘শারদীয় দুর্গোৎসব’। আজ মহাষষ্ঠী। ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা, শঙ্খ আর উলুর ধ্বনির মাধ্যমে বেল গাছের নিচে পূজার মাধ্যমে আবাহন করা হবে দেবী দুর্গাকে দুষ্টের বিনাশ ও সৃষ্টের পালনে আজই হবে দেবীর বোধন পূজা। শাস্ত্রমতে, বোধন কথার অর্থ হলো জাগ্রত করা। রাবণের সঙ্গে যুদ্ধের সময় দেবী দুর্গার পুজো করেছিলেন রামচন্দ্র। সেটা ছিল দেবীর অকালবোধন। পুরান মতে-রাবণ ছিলেন দেবাদিদেব মহাদেবের বরপ্রাপ্ত। আবার দেবী দুর্গার বিভিন্ন রূপের একনিষ্ঠ সাধক ছিলেন তিনি। কিন্তু রামের হাতে রাবণের বধ ছিল দৈববাণী। তাই রাম-রাবণের যুদ্ধ যখন অবশ্যম্ভাবী সেসময় প্রজাপতি ব্রহ্মার স্মরণ নিলেন দেবতারা। কিন্তু দেবী তখন নিদ্রিতা।
দেবতাদের অনুরোধে স্বয়ং ব্রহ্মা দেবীর পুজো করে তাকে তুষ্ট করার উপায় জিজ্ঞাসা করলেন। দেবী বললেন- যদি রামচন্দ্র তার বোধন করেন, তবেই তিনি রাবণ বধে তাকে সাহায্য করবেন। রামকে দেবীর নির্দেশের কথা জানালেন প্রজাপতি ব্রহ্মা ও দেবরাজ ইন্দ্র। সময়টা ছিল শরৎকাল, তাই রামচন্দ্র নিজ হাতে দেবীর মূর্তি গড়ে তার আরাধনা প্রস্তুতি করলেন। সেসময় ধ্যানে বসে ব্রহ্মা দেখলেন একটি বিল্ব বৃক্ষ বা বেল গাছের নিচে একটি ৮-১০ বছরের বালিকা খেলা করছে। ব্রহ্মা বুঝলেন তিনিই দেবী। তারপরেই প্রজাপতি স্থির করলেন দেবীর বোধনের পুজো হবে ওই বিল্ব বৃক্ষের নিচেই। সেই কারণে প্রথা মেনে আজও বোধনের আগে বিল্ব শাখা বিল্ব বৃক্ষের পুজো করে তা প্রতিষ্ঠা করা হয় দেবীর ঘটে। তারপরেই শুরু হয় বোধন, দেবীর আরাধনা।
শনিবার সপ্তমী তিথিতে দেবীর নবপত্রিকা বা ‘কলাবউ’ স্থাপন সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভের মধ্যদিয়ে হবে মহাসপ্তমী পূজা। এই নবপত্রিকাকে অধিষ্ঠিত করা হবে সিদ্ধিদাতা গণেশের পাশে। এদিনই প্রাণ সঞ্চার করা হবে দেবীর মৃণ্ময়ীতে। রোববার মহাঅষ্টমী তিথিতে সনাতনী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ সকলে নতুন কাপড় পরিধান করে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দিবে। এইদিনই হবে সন্ধিপূজা। মাতৃরূপে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগজ্জননীর উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করে হবে ‘কুমারী পূজা’। শাস্ত্রমতে, এদিন পূজিত কুমারী কন্যার নামকরণ করা হয় দেবীর ৬ষ্ঠ রূপ ‘উমা’। ভক্তদের মতে, এটি একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। মূলত নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা। সোমবার নবমী পূজা শেষে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। মঙ্গলবার দশমী তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্যদিয়ে বিদায় জানানো হবে দেবী দুর্গাকে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, শাস্ত্রমতে বলা হয়- সপ্তমীতে দেবী দুর্গার আগমন এবং দশমীতে গমন হয়। আর দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন ও গমন যে বাহনে, তার ওপর নির্ভর করে গোটা বছর পৃথিবীবাসীর কেমন কাটবে। এ বছর দেবীর আগমন ও গমন দুটোই ঘোটকে। যার অর্থ ছত্রভঙ্গ। কোনো বছর দেবীর আগমন ও গমন একই বাহনে হলে তা অত্যন্ত অশুভ।
বাংলাদেশ পূজা উদ্?যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার জানান, এবার সারা দেশে ৩২ হাজার ৪০৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বেশ সজাগ রয়েছে। আশাকরি সকল অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে আমরা নির্ভিঘ্নে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করতে পারবো।