রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের দায়িত্ব শেখ হাসিনার

আ.লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত

রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের দায়িত্ব শেখ হাসিনার
রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের দায়িত্ব শেখ হাসিনার

প্রথম নিউজ, অনলাইন : দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন-ঠিক করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় প্রধানের হাতে রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের এই দায়িত্ব অর্পণ করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলায় সরকারি দলের সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৮টা ১০ মিনিটে শুরু হয়ে বৈঠকটি শেষ হয় ৮টা ৫০ মিনিটে। ৪০ মিনিটের বৈঠকে শেখ হাসিনা দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা জানান। বৈঠকে ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার জন্য দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। এ সময় অন্য সদস্যরা এই প্রস্তাব সমর্থন করেন। এর ফলে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন-তা জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের একাধিক সদস্য বলেন, সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এরপর তিনি রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন প্রসঙ্গটি তোলেন। এ বিষয়ে তিনি সদস্যদের মতামত চাইলে শুরুতে বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে সে দায়িত্ব আমরা সংসদীয় দলের পক্ষ থেকে আমাদের সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিতে চাই। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন, আমরা সবাই তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করব। উপস্থিত সবাই ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যকে সমস্বরে সমর্থন জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বেশ কঠিন হবে। ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ নেই। এই নির্বাচনে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হবে, নানা অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করা হবে। এসব বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে আমাদের পুরোদমে প্রস্তুতি নিতে হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের যেসব উন্নয়ন আছে সেগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করার নির্দেশ দেন তিনি।

আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে। কেবল সংসদ সদস্যরাই ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন। তবে যদি একাধিক প্রার্থী না থাকে তবে ১৩ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। একাধিক প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীই রাষ্ট্রপতি হবেন, কারণ বর্তমান সংসদে ক্ষমতাসীন এই দলটির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ৩৫০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে বর্তমানে আওয়ামী লীগের রয়েছে ৩০২টি এবং প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির রয়েছে ২৬টি। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৪টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ এবং গণফোরামের রয়েছে ২টি করে আসন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টি- জেপির একটি করে আসন রয়েছে। বাকি ৩টি আসনে রয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য।

বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে। এর আগেই ক্ষমতাসীনদের বেছে নিতে হবে তার পরবর্তী উত্তরাধিকারীকে। কে হচ্ছেন নতুন রাষ্ট্রপতি-এ নিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে নানা আলাপ-আলোচনা ও গুঞ্জন আছে। আসছে নানা মত। রাজনীতির অন্দরমহলেও এ পদের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির নাম আলোচিত হচ্ছে। তবে আলাপ-আলোচনা যাই থাকুক না কেন, দিনশেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সংসদীয় দলের সভায় সেই দায়িত্ব তার হাতেই অপর্ণ করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদ-সদস্যরা। তৃণমূল থেকে উঠে আসা বর্ষীয়ান ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ মো. আবদুল হামিদ বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রপতি, যিনি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথমে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন তিনি। ৫ বছর মেয়াদপূর্তির পর ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

সংবিধান অনুযায়ী তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে ৫ বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধানের ৫০(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘একাধিক্রমে হোক বা না হোক, দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।’ ফলে মো. আবদুল হামিদের রাষ্ট্রপতি হিসাবে চলতি মেয়াদই শেষ। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পর্কে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে অথবা মেয়াদ শেষ হইলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্যপদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’

আওয়ামী লীগের অনেকে মনে করেন, গত দুই মেয়াদে মো. আবদুল হামিদ যেভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন, তা অভাবনীয় ও অসাধারণ। তার একজন বিকল্প খুঁজে পাওয়া দলটির জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। মো. আবদুল হামিদের একদিকে যেমন সব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ছিল। অন্যদিকে প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসাবে ছিলেন সবার আছে আস্থাভাজন। দুই মেয়াদে তিনি নিজেকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে তুলে রাখতে পেরেছিলেন এবং জনপ্রিয়তার দিক থেকেও ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন। আর এ কারণেই দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন-এ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল, সবাই সজাগ দৃষ্টি রাখছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে একজন দল নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসাবে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে রাষ্ট্রপতি করে আওয়ামী লীগ। তবে সেই অভিজ্ঞতা দলটির জন্য খুব একটা সুখকর ছিল না। এরপর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ দলটির সাধারণ সম্পাদক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ মো. জিল্লুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে। তার মৃত্যুর পর এ পদে অধিষ্ঠিত হন আরেক প্রবীণ রাজনীতিবিদ মো. আবদুল হামিদ। আগামী দিনেও শেখ হাসিনা বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন ব্যক্তিকেই বেছে নেবেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা হিসাবে। যদিও ১৯৯১ সালে পরোক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সাতবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একবার রাষ্ট্রপতি পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় সংসদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে মনোনয়ন দেয়। আর ওই সময়কার বিরোধী দল ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছিল বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে। ওই নির্বাচনে আব্দুর রহমান বিশ্বাস জয়ী হন। এছাড়া প্রতিবার একক প্রার্থী হিসাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন।