রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কমবে, বাড়বে না
মাসটিতে নিত্যপণ্যের মূল্য এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী, আড়তদার এবং মিল মালিকদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় উঠে আসে, রমজান মাসে পণ্যের কোনো সংকট হবে না। তবে দাম বাড়ার দায় নিচ্ছে না কোনোপক্ষই। তেল, চিনিসহ ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতার জন্য খুচরা দোকানদার, পাইকার ও উৎপাদক কোম্পানির প্রতিনিধিরা একে অপরকে দুষছেন। ব্যবসায়ী নেতারা এলসি জটিলতা নিরসনের দাবি জানিয়ে বলেন, ঋণপত্র খোলার বিড়ম্বনায় ছোট ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছেন না।
পরে, দেখা গেল ঈদের সময় বাজারে তেল নাই। পরে, ভোক্তার (ভোক্তা অধিদপ্তর) লোকজন ধরে ধরে খাটের নিচ থেকে, গোডাউন থেকে এসব তেল উদ্ধার করেছে। আমি আপনাদের (ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি) মালিকদের সঙ্গে কথা বলবো। এবারের রমজানে ও ঈদে আমরা মূল্য কম রাখতে চাই। তিনি জানান, রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখতে এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে ৪৬ সদস্যবিশিষ্ট বাজার মনিটরিং কমিটি কাজ করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কিনা তা তদারক করছেন কমিটির সদস্যরা। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্ব আছে বলে মন্তব্য করেন সভাপতি। মতবিনিময় সভায় উৎপাদনকারীদের নিকট থেকে বিক্রয় চালান না পাওয়ার অভিযোগ করেন উপস্থিত কয়েকজন ব্যবসায়ী। পেলেও সেখানে সঠিক মূল্য উল্লেখ করা হয় না বলে তারা অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে সভায় উপস্থিত উৎপাদনকারীদের উদ্দেশ্যে জসিম উদ্দিন বলেন, পণ্য ক্রয়ের সময় উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে বিক্রেতারা মেমো না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। এটা মেনে নেয়ার মতো না। এটা কেমন কথা? আমরা কী অবৈধ ব্যবসায়ী? মাল বিক্রি করলে রিসিট অবশ্যই থাকতে হবে, টাকা দিবেন আর রিসিট থাকবে না- এটা চলবে না। বাংলাদেশ উন্নত থেকে স্মার্ট যুগে প্রবেশ করছে। এই স্মার্ট বাংলাদেশে চুরি চলবে না।
নিত্যপণ্য আমদানির জন্য পর্যাপ্ত এলসি খোলার অনুমতি নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারকে আমরা অনুরোধ করেছি অপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি না করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করার জন্য। এটা ছাড়া আর আমদানি-রপ্তানি ব্যালেন্স করার উপায় নেই। তিনি বলেন, গভর্নর এবং ব্যাংকারদের আহ্বান জানাবো রোজা ও ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসায়ের জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হলে ব্যবসায়ীদের অসাধু তকমা দেয়া হয়, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বন্ধে বিক্রয়ের পাকা রসিদ বা ভাউচার থাকা আবশ্যক বলে জানান তিনি। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে বেসরকারি খাতের বিরাট ভূমিকার কথা উল্লেখ করে টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, পিএসসি বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের আমদানি, মজুত ইত্যাদি নিয়ে বাজারে যে অভিযান আমরা করি, সেগুলো করতে চাই না। ব্যবসায়ীরাই নিজেরা সমাধান করতে পারে এগুলো।
এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে বাজার তদারকির পরেও রোজা বা ঈদকে ঘিরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধি পায়, যা লজ্জাজনক। সভায় দেশের শীর্ষস্থানীয় মিল মালিক প্রতিনিধিরা জানান, এলসি কম হওয়ার কারণে বাজারে পণ্যের সরবরাহও কম হয়, যা বাজারে মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও কারখানায় গ্যাস সংকটও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্য কমাতে শুল্ক পুনর্গঠনের দাবি জানান তারা। পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা জানান, বাজারে ভোজ্য তেলের কোনো সংকট নেই। তবে তেলের মূল্য পাইকাররা নির্ধারণ করি না, মিল মালিকরাই রিফাইন ও মূল্য নির্ধারণ করে। তারা চাইলেই দাম বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।