মোহনবাগানকে ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির
প্রথম আইএসএল ট্রফি ঢুকল ক্লাবে। ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে সপ্তাহের শুরুর প্রথম দিন দুপুর ১২টায় হাজার হাজার সমর্থক উপস্থিত ক্লাবতাঁবুতে।
প্রথম নিউজ, খেলা ডেস্ক: প্রথম আইএসএল ট্রফি ঢুকল ক্লাবে। ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে সপ্তাহের শুরুর প্রথম দিন দুপুর ১২টায় হাজার হাজার সমর্থক উপস্থিত ক্লাবতাঁবুতে। প্রাপ্তি যোগ চলছে শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের। প্রথমে আইএসএল জয়। তারপর মোহনবাগানের নামের আগে থেকে এটিকের উঠে যাওয়া। এবার আইএসএল জিতে বাংলার ফুটবলকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সমর্থকদের কথা ভেবে ক্লাবের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হল। সোমবার দুপুরে মোহনবাগান মাঠে দাঁড়িয়ে এই ঘোষণা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। এছাড়াও ছিলেন মোহনবাগানের সভাপতি টুটু বসু। প্রথমে মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্তর ট্রফি নিয়ে নবান্নে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। যেমনটা অতীতে এটিকে জয়ের পরও হয়েছে। তবে হঠাৎই পরিকল্পনা বদল। মোহনবাগান তাঁবুতে আসার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে কলকাতা নাইট রাইডার্স আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ইডেনে উপস্থিত ছিলেন মমতা ব্যানার্জি।
কিন্তু কোনও ক্লাবে গিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ সেলিব্রেট করা এই প্রথম। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ট্রফি তুলে দেন প্রীতমরা। এরপর উত্তরীয়, ফুলের স্তবক দিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে বরণ করে নেন মোহনবাগানের সচিব দেবাশিস দত্ত। এরপর শুরু সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনার পালা। কোচ, ফুটবলার এবং কোচিং স্টাফদের জন্য মিষ্টি নিয়ে এসেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। জুয়ান ফেরান্দো, বাস্তব রায়ের হাতে রসগোল্লার হাড়ি তুলে দেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। ফুটবলারদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বসু, বিশাল কাইত, মনবীর সিং, কিয়ান নাসিরিরা। বিদেশিদের মধ্যে শুধু ছিলেন জনি কাউকো এবং তিরি। নিজের হাতে সবাইকেই সংবর্ধিত করেন মমতা ব্যানার্জি। বসন্তের আকাশে যেন শুধু একটাই রং, সবুজ মেরুন।
মমতা ব্যানার্জি বলেন, 'তোমরা দারুণ। তোমাদের নাম ইতিহাসে লেখা হয়ে গেল। আমরা তোমাদের জন্য গর্বিত। বাংলার ছেলেদের বুকভরা স্বপ্ন, সেটা সফল হয়েছে দেখেই ভাল লাগছে। এদিকে মোহনবাগান একটা করে জিতছে, কিন্তু ইস্টবেঙ্গল টিম তৈরি করতে পারেনি ভাল করে। যখন ওরা শুরু করেছে খুব দেরী হয়ে গিয়েছিল। টিম তৈরি করতে পারেনি। সেখানে মোহনবাগান আগেই খেলে দিয়েছে। সঞ্জিব গোয়েঙ্কা বাড়তি সাহায্য করছে। ক্লাবের নাম মোহনবাগান, এটিকে মোহনবাগান নয়। এবার থেকে নাম মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। অরূপকে সঞ্জীবের সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলাম। এটিকে শুনতে ভাল লাগে না। মোহনবাগান মোহনবাগানই। আমি সবার সাপোর্টার। আমার মা মোহনবাগানের খেলা হলেই কালি বাড়িতে পুজো দিতে যেতেন। দাদা সারাক্ষণ ফুটবল নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিলেন। আমাদের এলাকায় মিলন সংঘ ক্লাব আছে। আমার বাবা স্বাধীনতার আগে এই ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাই আমাদের পরিবার ফুটবলের সঙ্গে আন্তরিকভাবে জড়িত। অরূপকে বলেছিলাম ফাইনালে যেতেই হবে। একটা দল ফাইনালে যাওয়া মানেই জিতে যাওয়া।
ফাইনালের ভোরবেলায় আমি স্বপ্ন দেখি মোহনবাগান জিতে গিয়েছে। বাংলা এতদূর এগিয়েও পিছিয়ে যাবে, সেটা হয় না। বাংলা ভারতসেরা হওয়ায় আমরা গর্বিত। চাইব আগামী দিন মোহনবাগান বিশ্বসেরা হোক। কেন মোহনবাগান ব্রাজিল, ইতালি, পোল্যান্ডের সঙ্গে খেলবে না? বিশ্বজয় করতে হবে। আগামী দিনে আপনারা বিশ্বজয় করবেন। সারা পৃথিবী একদিন আপনাদের দুয়ারে আসবে আপনাদের স্বাগত জানাতে। আমরা তিনটে ক্লাবকেই সাহায্য করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে আরও ৫০ লক্ষ টাকা দিচ্ছি। মোহনবাগান বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছে, ওরা বাংলার ধ্রুব তারা। খেলা হয়েছে, আবার খেলা হবে। আবার জিততে হবে। বিশ্বজয় করতে হবে। জয় বাংলা, জয় মোহনবাগান। বাংলাই পথ দেখায়, বাংলাই দেখাবে।'
বাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বলেন, 'এই জয় শুধুমাত্র মোহনবাগানে আবদ্ধ থাকলে হবে না, পুরো বাংলার কৃতিত্ব। সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব সঞ্জীব গোয়েঙ্কার। উনি মোহনবাগানকে এশিয়ার সেরা দল করতে চান। আমরা এদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ক্লাবকে অনেক ওপরে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া আমরা একটা পদক্ষেপও ভাবতে পারি না। ২২ বছর পর আমরা হকি খেলে চ্যাম্পিয়ন, আইএসএল চ্যাম্পিয়ন। এবছর তাঁবু উদ্বোধন হয়েছে, পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। দিদির আশীর্বাদে আমরা এগিয়ে যাব। মোহনবাগান একনম্বর স্থানে থাকবে।' আইএসএল জয়ী অধিনায়ক প্রীতম কোটালের মুখেও একই কথা।
তিনি বলেন, 'জয় মোহনবাগান। আপনারা আমাদের পাশে সবসময় থাকবেন, আশীর্বাদ করবেন। যাতে বাংলা থেকে আরও প্লেয়ার জাতীয় দলে খেলতে পারে। এই শুরু, মোহনবাগান আরও আইএসএল জিতবে। সবাই পাশে থাকবেন। আমাদের সাপোর্ট করে যাবেন।' চলতি সপ্তাহ আইএসএল ট্রফি মোহনবাগান তাঁবুতেই থাকবে। সমর্থকরা সেটা দেখতে পারবে। ২৪ মার্চ মোহনবাগানের জিমনেশিয়ামের উদ্বোধন হবে। করবেন পিকে ব্যানার্জি এবং অমল দত্তের মেয়েরা। ২ এপ্রিল শিলিগুড়িতে মোহনবাগানের নামে রাস্তা হবে। এয়ার ভিউ মোড় থেকে সূর্য সেন পার্ক রোড শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের নামে নামকরণ করা হবে। পয়লা বৈশাখ চুনী গোস্বামী গেটের উদ্বোধন হবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: