মার্কিন ভিসানীতির পরও বিএনপির শুভবুদ্ধির উদয় হয়নি: তথ্যমন্ত্রী
তারা আগের মতো জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি, নির্বাচন প্রতিহত করা, বর্জন করার রাজনীতি থেকে সরে আসতে পারছে না
প্রথম নিউজ, ঢাকা : তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে মনে হচ্ছে— যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি চালু করার পরও তাদের কোনও শুভবুদ্ধির উদয় হয়নি। তারা আগের মতো জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি, নির্বাচন প্রতিহত করা, বর্জন করার রাজনীতি থেকে সরে আসতে পারছে না। তবে তাদেরকে সরে আসতেই হবে।’
বুধবার (৩১ মে) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস’ উপলক্ষে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা-‘মানস’ আয়োজিত আলোচনা সভায় অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে এটা স্পষ্ট করেছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি তাদের কোনও সমর্থন নাই। একটি সুষ্ঠু, অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক, সেটিই তারা চায়। যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধা দেবে বা নির্বাচন প্রতিহত করবে, তাদের বিরুদ্ধে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবে। কিন্তু এরপরও তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়নি।’
অপর দিকে সরকারের সবসময় শুভবুদ্ধি আছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সরকার সবসময় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় এবং আমরা চাই, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল সেখানে অংশগ্রহণ করুক। আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন হোক এবং তার মাধ্যমে দেশের জনগণ আগামীর সরকার নির্বাচিত করুক। সেটিই সরকার চায়, সেটিই শেখ হাসিনা চান, সেটিই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চায়।’
এ সময় বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিচারের রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকা নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বিরূপ মন্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমান সাহেব আর টুকু সাহেবের মামলা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। এই মামলা আওয়ামী লীগ দায়ের করেনি। সেই মামলায় তাদের শাস্তি হয়েছিল। তারা হাইকোর্টে গিয়েছিল, হাইকোর্ট সেই রায় বহাল রেখেছে। আবার গয়েশ্বর বাবুসহ আরও অনেকে গাড়ি-ঘোড়া ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, একইসঙ্গে সেখানে পুলিশ ও জনতার ওপর হামলা পরিচালনা করা সত্ত্বেও তারা যে আগাম জামিন পেয়েছে, এতেই তো প্রমাণ হয়— আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করে। এর চেয়ে আর বড় প্রমাণ তো দরকার নেই।’
‘রাজনীতি করতে হলে সাধারণ মানুষের কাতারে নামতে হয়’
‘এক সময় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন। রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন। আর এখন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা’, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তার প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখেই বলতে চাই— দুর্নীতি দমন কমিশন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সত্যতা পেয়েছে বিধায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কারণ, শ্রমিক-কর্মচারীদের যে লভ্যাংশ দেওয়ার কথা, সেটি না দিয়ে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা শ্রমিক-কর্মচারীদের নেতাদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে ঘুষ হিসেবে। সে জন্য মামলায় তার সঙ্গে নেতারাও আসামি হয়েছেন। এখানে দুর্নীতি হয়েছে, অনিয়ম হয়েছে, সেটিই দুদক বলছে এবং সে জন্য মামলা হয়েছে।’
মন্ত্রী হাছান বলেন, ‘আর তিনি রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা করেছিলেন এবং বুঝতে পেরেছেন, যারা মানুষের কাছ থেকে যোজন যোজন দূরে থাকেন, তাদের পক্ষে রাজনৈতিক দল করা সহজ নয়। রাজনীতি করতে হলে সাধারণ মানুষের কাতারে নামতে হয়, সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকতে হয়। নিজের পরিবারের চেয়েও সাধারণ মানুষকে গুরুত্ব বেশি দিতে হয়। সেটি যারা করতে পারে না, তাদের পক্ষে রাজনৈতিক দল বা রাজনীতি করা সম্ভবপর নয়। তারা কেউ কেউ মন্ত্রী হতে পারেন, কিন্তু রাজনীতিবিদ বা গণমানুষের নেতা হওয়া তাদের পক্ষে কখনও সম্ভব নয়।’
‘মাদক চাষের চেয়ে খাদ্য ফলানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ’
এর আগে ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য ‘উই নিড ফুড, নট টোব্যাকো’ অনুসারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিপাদ্য ‘তামাক নয় খাদ্য ফলান’ উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে তামাকের কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। আমি সারা জীবন একটিও সিগারেট বা তামাক গ্রহণ করিনি। পৃথিবীতে বহু ক্ষুধার্ত মানুষ আছে। মাদক চাষের চেয়ে তাদের জন্য খাদ্য ফলানো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মাদক চাষের জন্য ব্যবহৃত জমি যদি আমরা খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে খাদ্য উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। দেশ, জাতি, সমাজ ও বিশ্ব উপকৃত হবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একটি মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছেন। কোনও পরিবারে যদি কেউ মাদকাসক্ত থাকে সেটি শুধু তাকে নয়, পুরো পরিবারকে ভোগায়। এটি একটি মারাত্মক ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ব্যাধি। এটি থেকে সমাজকে আসলেই মুক্ত রাখা দরকার। এ জন্য ব্যাপক ক্যাম্পেইন প্রয়োজন। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক ও গণমাধ্যমে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে আরও সচেতন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।’
‘মানস’ সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রধান নির্বাহী মোহম্মদ নূরুজ্জামান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।