মার্কিন বিনিয়োগে সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
গতকাল তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের একটি প্রতিনিধিদল সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, অনলাই: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি ‘উন্নত ও স্মার্ট’ দেশে পরিণত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট’ বাংলাদেশের আমাদের অগ্রযাত্রায় অংশীদার হওয়ার জন্য আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি। গতকাল তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের একটি প্রতিনিধিদল সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণে এ কথা বলেন। ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান স্টিভেন কোবোস স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং এর প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত (অব.) অতুল কেশাপ ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ও অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এই সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে অবহিত করেছেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন। এই সময় নজরুল বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য মার্কিন বিনিয়োগকারীরা উচ্চাকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, কিন্তু তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কিছু চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে আরও বলেন, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট নেশন’ হয়ে উঠতে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করি। আমাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং রপ্তানির ভিত্তি সম্প্রসারণে আপনাদের সমর্থন প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ২০২৬ সালে ‘স্বল্পোন্নত’ থেকে ‘উন্নয়নশীল’ দেশে পরিণত হবে। সরকার প্রধান বলেন, তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। তাদের প্রচেষ্টা গত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, এখন বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ‘আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃত। এটা সম্ভব হয়েছে সুশাসন, আইনের শাসন ও স্থিতিশীলতা, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন, এবং আইসিটি, যা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপান্তর ঘটিয়েছে। কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি প্রধান অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগী। তিনি আরও বলেন, উভয় দেশের অনেক ক্ষেত্রেই নিবিড় সম্পৃক্ততা রয়েছে, বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যৌথ লক্ষ্য হলো জনগণের জন্য পারস্পরিক সুবিধা এবং সমৃদ্ধি অর্জন করা। এটি আমাদের ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং জনগণের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে আমাদের রপ্তানির বৃহত্তম একক-দেশীয় গন্তব্য, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের বৃহত্তম এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ তিনি বলেন, আগামী দিনে এই অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা আরও বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী। এই প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য একটি মসৃণ এবং অনুমানযোগ্য সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির মাধ্যমে আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, অতএব, আমি আপনাদেরকে আমাদের অনেক প্রাণবন্ত এবং উচ্চ-সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র যেমন নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা ও ভারী যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার, আইসিটি, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল আমাদের দুই বন্ধু প্রতীম দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পরিশেষে, তিনি সকল মার্কিন ব্যবসায়ী নেতাদের বাংলাদেশে ব্যবসার সুযোগ নিতে এবং বিনিয়োগের অনুরোধ জানান। এ ছাড়া, তিনি বলেন, সরকার দেশে ১শ’টি ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ (এসইজেড) এবং ২৮টি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি চালু রয়েছে। বিশেষ করে আইটি সেক্টরে, ১০ লাখেরও বেশি ফ্রি-ল্যান্সিং আইটি পেশাদারসহ, বাংলাদেশ আইটি খাতে বিনিয়োগের জন্য সঠিক গন্তব্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে একটি তরুণ, দক্ষ এবং প্রাণবন্ত কর্মশক্তির প্রাপ্যতা একটি বিশাল সুবিধা। তিনি বলেন, এখানে, আমি আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশে এই অঞ্চলের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতির মর্যাদা রয়েছে। নিশ্চিত থাকুন আমরা আমাদের বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে নারীর ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ দেশ এবং বিশ্বব্যাপী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে রেটিং দিয়েছে। বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের বাজার এবং এর অবস্থান (ভৌগলিক) এটিকে ৩ বিলিয়ন মানুষের বাজারের কেন্দ্রস্থলে পরিণত করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে এর বর্ধিত সংযোগ এটিকে এই অঞ্চল এবং এর বাইরে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের জন্য একটি আদর্শ জায়গা করে তুলেছে।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের ফোকাস এখন শুধু আঞ্চলিক নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গেও অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করা। গত ১৫ বছরে বেশ কয়েকটি মেগা-অবকাঠামোপ্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কয়েকটির নাম বলতে গেলে, পদ্মা নদীর ওপর সেতু,
ঢাকায় মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকায় একটি আধুনিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি। আইনি ও আর্থিক অবকাঠামোও উন্নত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এইগুলো আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক সংযোগ বাড়িয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি। তিনি আরও বলেন, ‘এটি এখন ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ২৫তম হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এই বৃদ্ধি একটি প্রাণবন্ত বেসরকারি খাতের কারণে যেখানে মার্কিন ব্যবসায়ীদের একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ অনেক আর্থ-সামাজিক সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দেয়। পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রচেষ্টার কারণে দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালে থাকা ৪১ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৮ দমমিক ৭ শতাংশে এবং হতদরিদ্রের হার ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। গত এক দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হয়েছে। আরও চমকপ্রদ তথ্য হলো- প্রত্যাশিত গড় আয়ু যা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর ছিল ৪৬ দশমিক ৬ বছর তা বর্তমানে বেড়ে ৭৩ দশমিক ৪ বছরে উন্নীত হয়েছে। এখন প্রায় সব শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, নারী সাক্ষরতার হার ৭৩ দশমিক ২৫ শতাংশ যা দক্ষিণ এশিয়ার গড় ৬৫ শতাংশের চেয়ে বেশি।