ভুলে জাতিসংঘের লোগো মোছা হয়নি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বুধবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন : কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট অশান্ত পরিস্থিতি থামাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জাতিসংঘের লোগোযুক্ত যানবাহনের ব্যবহার নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জাতিসংঘের কোনো বাহন ব্যবহার হয়নি। যে সমস্ত বাহন ব্যবহার হয়েছে তা জাতিসংঘকে ভাড়া দেয় বাংলাদেশ। সেই বাহনে তাদের লোগো লাগানো ছিল। এটি ভুলে মুছা হয়নি। এখন তা মুছে ফেলা হয়েছে। বুধবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গত কয়েকদিনে রাজধানীতে যে ভাঙচুর হয়েছে সেটি দেখাতে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিদেশি কূটনীতিকদের। তাদের সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কূটনীতিকদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, ৪৯ জন কূটনীতিককে তারা ধ্বংসযজ্ঞ দেখিয়েছেন। যার মধ্যে ২৩ জন রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
এই কঠিন সময়ে আধাবেলার নোটিশে এই কঠিন কাজে কূটনীতিকরা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন তার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মন্ত্রী। বলেন, অনেক কূটনীতিক ধ্বংসযজ্ঞ দেখার পর এটাকে লজ্জাজনক বলেছেন। তারা স্তম্ভিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা বলেছেন, যদিও এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়, তারপরও আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৩, ১৪ এবং ১৫ সালে যারা তাণ্ডব চালিয়েছিল তাদের অনেকের শাস্তি হয়েছে। অনেকে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেছে। অনেকের বিরুদ্ধে আসলে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু এবার আমরা খুবই কঠিন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। প্রতিটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। কারা বিটিভিতে আগুন দিয়েছে, কারা গেট ভেঙেছে সব ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। এটি দেখে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর।
এই আন্দোলনের আগাম বার্তা পেতে এবং আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ব্যর্থতা আছে কি না, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে কি না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে শান্তি স্থাপিত হয়েছে। তারা যথেষ্ট চেষ্টা করছেন। বিটিভিতে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কীভাবে ঢুকলো। তারা বলেছেন, সেদিন পুলিশের কোনো গুলির অর্ডার ছিল না। পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু গুলি করেনি। মন্ত্রী বলেন, সেদিন পুলিশের গুলির অনুমতি থাকলে হয়তো বিটিভি জ¦লতো না। সুতরাং এখানে অনেকগুলা ফ্যাক্টর ঢুকেছে।
মন্ত্রী জানান, আমেরিকার লসএঞ্জেলসসহ বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনের সামনে যেসব বিক্ষোভ হয়েছে তাতে পাকিস্তান কমিউনিটির লোকজনের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। বিএনপি-জামায়াত চক্র সেই বিক্ষোভ আয়োজন করেছে, যেখানে পাকিস্তান কমিউনিটির লোকজন সহায়তা করেছে বলে সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য রয়েছে।
মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল- ঢাকার পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এ বিষয়ে সরকার কিছু বলবে কি না? জবাবে মন্ত্রী বলেন, যেহেতু এরা প্রবাসী পাকিস্তানি এবং তারা পাকিস্তানের বাইরে থাকেন তাই ডাকা হবে না। তাছাড়া পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আজ আমাদের সঙ্গে ছিলেন। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভকালে বাংলাদেশিরা গ্রেপ্তার হয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমিরাত সরকার ৫৭ জনকে শাস্তি দিয়েছে। সৌদিতেও অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। আমিরাতে ভিসা বন্ধ হওয়ার খবর সঠিক নয় বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
তিনি কূটনীতিকদের এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি না দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। সেইসঙ্গে বিবৃতি না চাওয়ার জন্য গণমাধ্যমেও ধন্যবাদ জানান। মন্ত্রী বলেন, অতীতে যেকোনো ঘটনা ঘটলে বিদেশি কূটনীতিকদের বিবৃতি দেয়ার জন্য প্রভোক করতো মিডিয়া। এবার কিন্তু তারা তা করেনি।