বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের প্রেস বক্স দেখে বিস্মিত-অসন্তুষ্ট পাপন
প্রথম নিউজ, ঢাকা: শুধু যুব মন্ত্রী নন, তিনি এখন ক্রীড়ামন্ত্রীও। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে দেশের ক্রীড়াতীর্থ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের প্রেসবক্স দেখে রীতিমত বিস্মিত নাজমুল হাসান পাপন। তার কণ্ঠে ঝরে পড়লো অসন্তোষও।
ক্রীড়ামন্ত্রি বলেন, ‘আমি মাঠে ঢুকে প্রেস বক্স দেখে নিজ থেকে প্রশ্ন করেছি, এত ঘন ঘন পিলার কেন? কোনো আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এমন পিলার তো আমি কোথাও দেখিনি! বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ব্যাপক সংস্কার কাজ চলছে প্রায় আড়াই বছর ধরে। ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন আজ বৃহস্পতিবার গিয়েছিলেন স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ দেখতে।
২০২১ সালের আগস্টে দেশের খেলাধুলার এ তীর্থকেন্দ্রের ব্যাপক সংস্কার শুরু হয়। প্রথমে কথা ছিল, ২০২২ সালের শেষ দিকে নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শেষে আবার খেলা চলবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। কিন্তু সে সময় তো বহুদূরে, আজ পর্যন্ত সংস্কার কাজ শেষ হয়নি।
এ বছর মানে ২০২৪ সালের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষে আবার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হবে, এমনটাও নিশ্চিত করে বলা কঠিন। শুরুতে বা প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ২০২২ সালের শেষের দিকে সংস্কার কাজ শেষ হবে। এর তা এক বছর পিছিয়ে ২৩ এর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার সময় ধার্য্য করা হয়। সেটাও হয়নি। এখন স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শেষ করার সর্বশেষ সময় ধরা হয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বর।
শুধু কাজের সময়ই বাড়েনি। সময় বাড়ার সাথে সাথে বাজেটও বেড়েছে বেশ। শুরুতে সংস্কার কাজের বাজে ছিল ৯০ কোটি টাকা। সেটা বাড়তে বাড়তে এখন দেড়শো কোটির বেশিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপক সংস্কারের মধ্যে নতুন ফ্লাডলাইট, গ্যালারির শেড, প্রেস বক্স , ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড, মাঠ সংস্কার ও অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক নির্মাণ-সবই ছিল।
শেডের কাজ চারভাগের এক ভাগ প্রায় সম্পন্ন। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পশ্চিম দিকে (আবাহনী সমর্থক গ্যালারির পুরোটা), প্রেস বক্স ও মোহামেডান সমর্থক গ্যালারির তিনভাগের এক ভাগ শেড নির্মাণ সম্পন্ন। আউটফিল্ডের কাজ চলছে। আর ২০০৭ সালে ছাদ ধসে পড়া প্রেস বক্সও নতুন করে নির্মিত হচ্ছে।
সেই আউটফিল্ডের পানি ছিটানো পদ্ধতি আর প্রেস বক্সের নির্মাণ শৈলি নিয়েই লেজেগোবড়ে অবস্থা। বিশাল প্রেস বক্সের দোতলা ও তিন তলায় অল্প একটু জায়গা পর পর পিলার স্থান করা হয়েছে। যা সাংবাদিকদের খেলা কভারে রীতিমত বাধার সৃষ্টি করবে। প্রেস বক্স থেকে নির্বিঘ্নে ও সুন্দরভাবে খেলা দেখা সম্ভব না। এসব দেখেই রীতিমত হতাশ ও হতভম্ব ক্রীড়ামন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার ভরদুপুরে স্টেডিয়াম পরিদর্শনে এসে মাঠে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি অনেক কথার ভিড়ে একটি কথা জানিয়ে দিয়েছেন, মাঠের সংস্কার কাজে বেশ কিছু সমস্যা ধরা পড়েছে। বিশেষ করে মাঠে পানি ছিটানো পদ্ধতি আর প্রেস বক্সের নির্মাণ কাজের ডিজাইন, ঘন ঘন পিলার দেওয়া বড় ধরনের ত্রুটি বলে মনে হয়েছে তার।
তবে এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নাজমুল হাসান পাপন চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ কাজ শেষ করার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের নামের এ স্টেডিয়াম পরিদর্শনে এসে পাপন বলেন, ‘মন্ত্রী হওয়ার পর আজই প্রথম আসলাম এই মাঠ দেখতে। কী কী সমস্যা আছে, তা দেখলাম।’
কী দেখলেন? কোনো সমস্যা চোখে পড়লো কি? পাপনের সোজাসাপ্টা জবাব, ‘অনেক কিছু সমস্যা আছে। দুটি সমস্যা নিয়ে কথা হলো। এক, মাঠের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা আর দ্বিতীয় হলো প্রেস বক্স।’
তিনি যোগ করেন, ‘প্রথম যখন দেখলাম... কিন্তু এখন আর কী বলবো! যা হয়ে গেছে, হয়েই গেছে। এখন এটাকে যদি চেঞ্জ করা যায়, করবো। আর চেঞ্জ করা না গেলে যা আছে, তাই থাকবে। কিন্তু এই চেঞ্জের কথা বলে স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ আরও এক বা দুই বছর বাড়াব, তা হবে না।কোনোভাবেই সংস্কার কাজের সময় বাড়ানো সম্ভব না।’
নির্মাণ কাজে কিছু ত্রুটি ও অসঙ্গতি ধরা পড়লেও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন তাৎক্ষণিকভাবে কারো ওপর দোষ চাপাননি। তার কথা, ‘আমি যদি এখন কোনো মন্তব্য করি, তাহলে বলতে সেটা এনএসসি, আমাদের সংস্কার কাজের কনসালটেন্ট না হয় বাফুফের ওপর আসবে। কাজেই স্পেসিফিক কাগজপত্র না দেখে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’