পি কে হালদারের সেই কুমির খামার খুলে দেওয়া হলো পর্যটকদের জন্য

আন্তর্জাতিক মানের এ খামারটিতে ২ হাজার ৫২৬টি ছোট-বড় ও বাচ্চা কুমির রয়েছে।

পি কে হালদারের সেই কুমির খামার খুলে দেওয়া হলো পর্যটকদের জন্য
পি কে হালদারের সেই কুমির খামার খুলে দেওয়া হলো পর্যটকদের জন্য

প্রথম নিউজ, ময়মনসিংহ : দেশের প্রথম বাণিজ্যিক কুমির খামার ময়মনসিংহের ভালুকা অবস্থিত র‌্যাপটাইলস ফার্ম আজ থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। নতুন আঙ্গিকে সাজানো এ কুমির খামারটি দেশি-বিদেশি পর্যটক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করবে- এমনটাই ধারণা হাইকোর্টের নির্দেশনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালনা পর্ষদের। আন্তর্জাতিক মানের এ খামারটিতে ২ হাজার ৫২৬টি ছোট-বড় ও বাচ্চা কুমির রয়েছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার কর্মসূচির পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন পিকনিক হল, সেমিনার রুম, ক্যান্টিন, রেস্টহাউজসহ নানা স্থাপনা। মঙ্গলবার বিকালে ভালুকার উথুরা ইউনিয়ন বাজার সংলগ্ন হাতিবের এলাকায় র‌্যাপটাইলস ফার্মে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন ফার্মের চেয়ারম্যান ড. নাইম আহমেদ।

এ সময় পর্ষদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কুমির বিশেষজ্ঞ এনামুল হক, পরিচালক ড. শেখ মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ ও ড. রফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। ফার্মের চেয়ারম্যান জানান, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কুমির খামারটি পরিচালনার জন্য হাইকোর্ট থেকে ৬ সদস্যের কমিটিকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। নানা অব্যবস্থাপনা, টানাপড়েন, অর্থনৈতিক সংকট ও খাদ্য সংকটে কুমির ফার্মটির অচলাবস্থা ছিল। কুমিরগুলোর যথোপযুক্ত পরিচর্যা না হওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে না রোগবালাই দেখা দিয়েছিল। কুমির মারা যাচ্ছিল। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের তড়িৎ পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় কুমিরের নানা রোগবালাই ও মৃত্যু রোধ সম্ভব হয়েছে। খামারটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে এবং আয়ের উৎস বাড়াতে নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

পর্ষদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কুমির বিশেষজ্ঞ এনামুল হক জানান, জীর্ণ এ খামারটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ফার্মের খাদ্যের ব্যয় মেটাতে আমরা পর্যটকদের জন্য আজ থেকে উন্মুক্ত করছি। যেখানে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ১৫০ টাকা ও শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

২০০৪ সালে খামারটি প্রতিষ্ঠার পর খামারটি থেকে ২০১০ সালে জার্মানিতে রিসার্সের জন্য ৬৭টি ফ্রোজেন কুমির এবং ২০১৪ সাল থেকে সর্বশেষ ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৫০৭টি কুমিরের চামড়া জাপানে রপ্তানি করা হয়। যা থেকে আয় হয় আনুমানিক ৬-৭ কোটি টাকা। পরিচালনা পর্ষদ জানান, উপমহাদেশের অন্যতম বাণিজ্যিক এ খামার থেকে কুমিরের চামড়া রপ্তানি করা হলেও কুমিরের মাংস, হাড় ও মাথা মূল্যবান। যা রপ্তানির অনুমোদন নেই। এব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তারা জানান, একটি কুমিরের সবকিছু রপ্তানি করা গেলে আয় বাড়বে কয়েকগুণ।

উল্লেখ্য, প্রায় ১৪ একর জমির উপর ২০০৪ সালে উথুরা ইউনিয়নের হাতিবের ৭৫টি কুমির মালয়েশিয়া থেকে এনে এই রেপটাইলস ফার্মটি প্রতিষ্ঠা করেন মেজবাউল হক ও মোস্তাক আহমেদ নামে দুজন ব্যবসায়ী। এরপর ২০১২ সালে আর্থিক প্রয়োজনে ফার্মটির মালিকানা হস্তান্তর করেন বহুল আলোচিত পি কে হালদারের কাছে। ২০১৯ সালে অর্থ কেলেঙ্কারিতে পি কে হালদার জড়িয়ে পড়ায় এবং ব্যাক অ্যাকাউন্ট জব্দ করায় খামারটিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধসহ চরম অব্যবস্থাপনায় কুমিরের খাদ্য সংকট দেখা দেয়।

পরে বিষয়টি নিয়ে একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ফার্মটি পরিচালনার জন্য সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. নাইম আহমেদকে চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কুমির বিশেষজ্ঞ এনামুল হককে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আরও চারজনকে পরিচালক করে ৬ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে। বর্তমানে ফার্মটিতে ব্রিডার কুমির রয়েছে শতাধিক, মাঝারি সাইজের রয়েছে এক হাজারেরও বেশি, বাচ্চা রয়েছে ৯শর মতো এবং রপ্তানিযোগ্য কুমির রয়েছে ৩শ।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: