পলকের নির্দেশে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়: তদন্ত প্রতিবেদন

গতকাল মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাফায়েত হোসেন এই তথ্য জানান।

পলকের নির্দেশে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়: তদন্ত প্রতিবেদন

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে একাধিকবার দেশব্যাপী মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয় এবং বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য বর্তমান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি  মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের নির্দেশে একটি সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করেছে। গতকাল মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাফায়েত হোসেন এই তথ্য জানান। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৫-১৬ই জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট এবং গত ১৮ই জুলাই থেকে ২৩শে জুলাই পর্যন্ত ও ৫ই আগস্ট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ ও চালু করার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়া ওই মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক মৌখিক নির্দেশ দেন। এবং সেই অনুযায়ী বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদের নির্দেশনায় তা সম্পন্ন করা হয়।

অপরদিকে, গত ১৭ই জুলাই থেকে ২৮শে জুলাই পর্যন্ত এবং ৫ই আগস্ট মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ও চালু করার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন “ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার” (এনটিএমসি)-এর নির্দেশনায় সম্পন্ন করা হয়। প্রাথমিক তদন্তের প্রতিবেদনে আরও জানা যায় যে, বর্ণিত সময়ে ডাটা সেন্টারে আগুন লাগার সঙ্গে ইন্টারনেট বন্ধের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ইন্টারনেট বন্ধের সঙ্গে ডাটা সেন্টারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি সম্পৃক্ত করে প্রচারণার মাধ্যমে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জাতির সঙ্গে মিথ্যাচার ও প্রতারণা করেছেন। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত চলমান আছে। 

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন তুঙ্গে, এমন সময় পুরো দেশকে ইন্টারনেটবিহীন করে জুনাইদ আহ?মেদ পলক ডেটা সেন্টারে আগুন, সাবমেরিন ক্যাবলের তার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ নানা কথা বলেন। সে সময় সরকারিভাবে জনগণের ফোনে বার্তা পাঠানো হয়, ‘সন্ত্রাসীদের আগুনের কারণে ডেটা সেন্টার পুড়ে যাওয়া এবং আইএসপি’র তার পুড়ে যাওয়ার কারণে সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত, মেরামত করতে সময় লাগবে। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ প্রসঙ্গে ১৮ই জুলাই জুনাইদ আহ?মেদ পলক জাতীয় ও নাগরিক নিরাপত্তার কথা বলেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো সহযোগিতা করলে সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতে হতো না বলেও সেদিন তিনি বলেছিলেন। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও ১৮ই জুলাই রাত ৯টা থেকে বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে জুনাইদ আহমেদ পলক ১৮ই জুলাই বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অগ্নিসংযোগের কারণে মহাখালীতে অবস্থিত ডেটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা বলেছেন। এ ছাড়া সারা দেশে শত শত কিলোমিটার ফাইবার ক্যাবল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। 

গত ২৭শে জুলাই সাবেক প্রতিমন্ত্রী আগারগাঁওয়ের ডাক ভবনে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, মহাখালীতে তিনটা ডেটা সেন্টারে আইএসপিদের (গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান) ৭০ শতাংশ সার্ভার থাকে। দেশের ৩৪টি আইআইজি’র (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) মধ্যে ১৮টির ডেটা এই তিনটি ডেটা সেন্টারে হোস্ট করা। সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করেনি। ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি গত ২৩শে জুলাই মহাখালীতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে গিয়েও তিনি বলেছিলেন, অগ্নিসংযোগের কারণে ডেটা সেন্টার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তখন তারা ইন্টারনেট বন্ধ করতে বাধ্য হন। তবে ২৮শে জুলাই জুনাইদ আহ?মেদ পলক জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ পুরোপুরি ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ছিল না। সরকারের কেপিআইভুক্ত যেসব প্রতিষ্ঠান ও জরুরি সেবা রয়েছে, সেখানে সব সময়ই ইন্টারনেট চলমান ছিল বলে জানিয়েছিলেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পরিকাঠামোতে ইন্টারনেট যুক্ত রাখা হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছিলেন, আমরা কখনোই ইন্টারনেট বন্ধ রাখার পক্ষে না। আমরা কোনো অ্যাপ বন্ধ রাখি না। ইন্টারনেট বন্ধ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টানা ১৩ দিন বন্ধ ছিল। প্ল্যাটফরমগুলো চালু না হওয়া প্রসঙ্গে জুনাইদ আহমেদ বলেছিলেন, ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল আচরণ ও দেশের আইন মেনে চললে চালু হবে, কিন্তু তিনি নিজে ফেসবুক থেকে শুরু করে প্রায় সব মাধ্যমেই সক্রিয় ছিলেন।