পরমাণু বোমা তৈরির সক্ষমতার কথা জানালো ইরান

পরমাণু বোমা তৈরির সক্ষমতার কথা জানালো ইরান
পরমাণু বোমা তৈরির সক্ষমতার কথা জানালো ইরান

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : ইরান চাইলেই পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারে। তবে সক্ষমতা থাকলেও এখনই সেরকম কোনো ইচ্ছা নেই তাদের। সোমবার এমন দাবি করেছেন ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামি। তার এই বক্তব্য পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রধান শত্রু রাষ্ট্র ইসরাইল বারবার দাবি করে আসছিল, ইরান পরমাণু বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন করে ফেলছে। এবার ইরানি কর্মকর্তারাই বিষয়টি নিশ্চিত করলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত জুলাই মাসে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সিনিয়র উপদেষ্টা কামাল খাররাজিও একই মন্তব্য করেছিলেন। তার বক্তব্যই আবারও সামনে আনলেন মোহাম্মদ এসলামি। কামাল খাররাজি বলেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে। তবে এই ধরনের কোনও কর্মসূচি সরকারের এজেন্ডায় নেই। ইরান ইতোমধ্যেই ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে তেহরানের ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির অধীনে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ৩.৬৭ শতাংশের বেশি। যদিও পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রয়োজন।

ইরান দাবি করে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। কিন্তু পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা এ ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। ইরানের পরমাণু কার্যক্রম থামাতে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের একটি সমঝোতা চুক্তি ছিল। তবে সেটি এখন আর নেই। পশ্চিমা কর্মকর্তারা এর আগে সতর্ক করেছেন যে চুক্তিটি পুনরায় কার্যকর করা প্রয়োজন কারণ এ বিলম্বের ফলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এমন এক স্তরে পৌঁছে যেতে পারে যেখান থেকে আর পেছন ফেরা যাবে না।

একটি পরমাণু বোমা বানাতে প্রায় ২৫ কেজি ইউরেনিয়াম দরকার হয় এবং যা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ হতে হবে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ মে মাসে এক রিপোর্টে বলেছিল, ইরানের হাতে ৬০% পর্যন্ত সমৃদ্ধ ৪৩.১ কেজি ইউরেনিয়াম আছে। অবশ্য এ সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রসি তখন বলেছিলেন যে, যথেষ্ট পরিমাণ ইউরেনিয়াম থাকলেই যে ইরান বোমা বানাতে পারবে তা নয়। পরমাণু বোমা বানানোর মত উচ্চ মাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম যথেষ্ট পরিমাণে হাতে পেতে ইরানের আরও সময় লাগবে। এই সময়টাকে বলা হচ্ছে 'ব্রেকআউট টাইম'। ইরানের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ হলো, ইরানকে থামানোর জন্য এ সময়টুকু হাতে আছে কিনা তা নিয়েই।

২০১৮ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ইরান পরমাণু চুক্তি’ থেকে বের করে নিয়ে আসেন। তিনি ইরানের বিরুদ্ধে আরোপ করেন নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা। ধাপে ধাপে দেয়া সেই নিষেধাজ্ঞায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ইরানের অর্থনীতি। তবে একইসঙ্গে পরমাণু কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিল ইরান। এরপরই তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করে। তারা আবারও পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে চাইছে। সে জন্য আলোচনাও চলছে গত কয়েক মাস ধরে। অনেকেই ধারণা করছেন, সে জন্যই পশ্চিমা বিশ্বের উপরে চাপ বাড়াতে নিজেদের পরমাণু সক্ষমতার কথা বলছে ইরান। তবে দেশটি এই নিশ্চয়তা চায় যে, ভবিষ্যতে অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় এসে যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে বের করে আনতে পারবে না। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন চাইলেই সেই প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন না। কারণ, পরমাণু চুক্তিটি হচ্ছে মূলত একটি রাজনৈতিক বোঝাপড়া। এটি কোনো আইনি বিষয় নয়। এমন অবস্থায় পরমাণু চুক্তির ভবিষ্যৎ যখন সংকটে তখনই নিজেদের পরমাণু বোমা তৈরির সক্ষমতার কথা জানালো তেহরান।

  Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom