পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বড় ঘোষণা দিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে একটি নতুন আইন অনুমোদন করেছেন। গত মাসে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার পর জাতিসংঘ পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। বুধবার ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, মাসউদ পেজেশকিয়ান আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের আইন অনুমোদন করেছেন। খবর আল-জাজিরার।
কয়েকদিন আগেই ইরানের পার্লামেন্ট একটি প্রস্তাব পাস করে যাতে আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী, এখন থেকে আইএইএ পরিদর্শকদের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশের জন্য দেশের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
এর আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি, যিনি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানাননি, এখন আর ইরানে প্রবেশ করতে পারবেন না। গ্রোসি সম্প্রতি যুদ্ধকবলিত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের আবেদন জানালেও ইরান তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, এ পরিদর্শনের চেষ্টা অর্থহীন এবং কূটকৌশল। এদিকে ‘কায়হান’ নামের একটি পত্রিকা দাবি করেছে, গ্রোসি একজন ইসরাইলি গুপ্তচর এবং তার মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। যদিও ইরান সরকার বলেছে, আইএইএ প্রধান বা সংস্থার কর্মীদের প্রতি কোনো হুমকি দেওয়া হয়নি।
১২ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের হঠাৎ হামলায় ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী নিহত হন। জবাবে ইরানও ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়।
প্রসঙ্গত, ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের মিত্র হিসেবে ইরানের ফোরদো, ইসফাহান ও নাতাঞ্জের পারমাণবিক স্থাপনায় অভূতপূর্ব হামলা চালায়। ২৪ জুন দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ইরানের বিচার বিভাগের মুখপাত্র আসগার জাহাঙ্গির জানান, ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৯৩৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৩২ জন নারী ও ৩৮ জন শিশু। ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরাইলে ২৮ জন নিহত হয় বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ হয়ে গেছে, যদিও এর প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ স্পষ্ট নয়। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচি স্বীকার করেছেন যে ‘গুরুতর ক্ষতি’ হয়েছে, তবে তিনি সিবিএস ইভিনিং নিউজ-এ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বোমা মেরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ধ্বংস করা যায় না।
ইসরাইল ও কিছু পশ্চিমা দেশ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চায়—যা তেহরান বারবার অস্বীকার করে আসছে।