নজরদারিতে টেলিগ্রাম গ্রুপের ৯২ জন ফ্রিল্যান্সার

চক্রটি শুধু দেশে-বিদেশে প্রতারণার ফাঁদ পেতে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ-লাখ টাকা।

নজরদারিতে টেলিগ্রাম গ্রুপের ৯২ জন ফ্রিল্যান্সার

প্রথম নিউজ, অনলাইন: আপত্তিকর ভিডিও দেশে-বিদেশে বিক্রির  সঙ্গে জড়িত টেলিগ্রাম গ্রুপের একটি চক্রকে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সিআইডি। চক্রটি শুধু দেশে-বিদেশে প্রতারণার ফাঁদ পেতে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ-লাখ টাকা। চক্রের গ্রেপ্তার হওয়া সদস্য মারুফ হোসেন ও শাহরিয়ার আফসান অভ্র জানিয়েছে, অনেক ফ্রিল্যান্সার নিজেদের ফ্রিল্যান্সার পরিচয় দিলেও তারা মূলত টেলিগ্রাম গ্রুপের চক্রের সদস্য। 

মারুফের এবং শাহরিয়ারের পেজ ও অ্যাপস ঘেঁটে সিআইডি প্রায় ৯২ জন ফ্রিল্যান্সারকে চিহ্নিত করেছে যারা এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। এই ফ্রিল্যান্সার গ্রুপটি দেশে ও বিদেশে প্রতারণার ফাঁদ ফেলেছে। তারা বাংলাদেশ ছাড়াও সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, পাকিস্তান, ইরান, আজারবাইজান, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মরক্কো, কানাডা, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের তরুণীদের ফাঁদে ফেলেছে। হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। চক্রটি রাত জেগে এমন প্রতারণার কাজ করতো।     

গত ১৬ই মে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা হয়। মামলা নম্বর-২৯। মামলা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিআইডি ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়া ৯ জন এখন কারাগারে রয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ অপরাধ তদন্ত শাখার (সিআইডি) সহকারী পুলিশ কমিশনার (সাইবার) জুয়েল চাকমা মানবজমিনকে জানান, ‘ফ্রিল্যান্সাররা জড়িত আছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। আমরা এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি।’ 

মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা জানান, ভুক্তভোগীরা অভিনব প্রতারণার শিকার হয়েছে এই ফ্রিল্যান্সারদের। গ্রুপটি নিজেদের পরিচয় দিয়েছে একজন পরিশোধভুক্ত ফ্রিল্যান্সার হিসেবে। তারা তাদের ফেসবুক পেজে চটকদার ছবি ও ভিডিও দিয়ে তরুণীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করতো। এতে অনেক তরুণী তাদের পাতা ফাঁদে পা দিতো। যারা দিতো তাদের জীবনে নিমে আসতো অন্ধকারের ঘনঘটা।  সূত্র জানায়, ফ্রিল্যান্সাররা ভুক্তভোগী তরুণীদের সঙ্গে সম্পর্ক করে তারা তাদের ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম আইডি হ্যাক করতো। গভীর সম্পর্ক করে গোপন ছবি ও ভিডিও তারা স্কিন শর্ট রাখতো। অনেক সময় কুরুচিপূর্ণ ছবি পাঠিয়ে উত্তেজিত করতো ভুক্তভোগীদের। 

সূত্র জানায়, সিআইডি তদন্তে দেখতে পেয়েছে অধিকাংশই ফ্রিল্যান্সাররা তাদের তথ্য গোপন করেছে। ভুল ঠিকানা ও ভালো নাম দিয়েছে। আবার তাদের অনেক ব্যক্তিগত বিষয় সামনে নিয়ে আসেনি। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এমন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, এই চক্রটি প্রায় ৩ বছর ধরে এমন করে যাচ্ছে। 

সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ২ জন জানিয়েছে যে, টেলিগ্রাম গ্রুপে কয়েকজন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ট্রিপলির ছাত্র রয়েছে। যারা প্রযুক্তির জ্ঞানে যেমন দক্ষ পাশাপাশি বিদেশি তরুণীদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দিতে পারে। এই দক্ষতায় তারা নারীদের ফাঁদে ফেলেছে। 

সিআইডি জানায়, চক্রটি নগদ অর্থের পাশাপাশি ক্রিপ্ট ক্যারেন্সিতে লেনদেন করতো। যাতে এতে ক্রিপ্ট ক্যারেন্সির বড় একটি অবৈধ চক্র গড়ে উঠেছে। এতে তারা দেশের অর্থ বিদেশেও পাচার করেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা আরও বেশি তথ্য সংগ্রহের জন্য একাধিক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন। যাদের তথ্যের সূত্র ধরে তদন্ত করছেন তারা।  সূত্র জানায়, প্রায় ৯২ জন ফ্রিল্যান্সার গ্রুপকে চিহ্নিত করেছে সিআইডি। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদেরকে ধরতে অভিযান চলছে।