দেশ উন্নত হয়েছে একারণেই যানজট বেড়েছে: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
বর্তমান সরকার টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে তাই দেশে অনেক উন্নতিও হয়েছে
প্রথম নিউজ, ঢাকা: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, বর্তমান সরকার টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে তাই দেশে অনেক উন্নতিও হয়েছে। উন্নয়নের কারনে যানবাহন বেড়েছে। আর যানবাহনের কারনে যানজটও বেড়েছে। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনÑ ডুরা আয়োজিত ‘অসহনীয় যানজট: সমাধান কী’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, এই ১৩ বছরে অনেকগুলো উন্নতির কারণেই ট্রাফিক প্রবলেমটা আমাদের কাছে একটা হ্যাডেক হয়ে গেছে। ট্রাফিক সমস্যা নাই পৃখিবীতে এমন কোনো জায়গা নাই। আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি তা মাথায় নিয়ে সে বিবেচনায় সমাধানের চিন্তা করতে হবে।
ডুরার সভাপতি রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহেদ শফিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ, বুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক। বক্তব্য রাখেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, ট্রাফিক প্ল্যানার আসাদুর রহমান মোল্লা ও ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি আবুল কালাম। মন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে ঢাকাসহ উপজেলা পর্যায়ে যেন যানজট আর সৃষ্টি না হয় সেজন্য আমরা এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বাংলাদেশ ২০৪১ সালের আগেই উন্নত হবে। মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়বে। সবার গাড়ি কেনার সামর্থ্য হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা যদি এখন থেকে পরিকল্পিত অবকাঠামো ও রাস্তাঘাট নির্মাণ না করি তাহলে উপজেলাতেও ট্রাফিক জ্যাম হতে পারে বলে আমি বলেছিলাম। এখন থেকে প্রস্তুতি না নিলে এই সমস্যা দেখা দিবেই।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, রাজধানীর অধিকাংশ জায়গায় দেখা যায় রাস্তা দখল করে দোকান-পাট বসানো হয়েছে। রাস্তার উপরে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। যা ট্রাফিক জ্যামের অন্যতম কারণ। যারা রাস্তার উপরে গাড়ি রাখবে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। তিনি জানান, ট্রাফিক জ্যাম বিশ্বের সব দেশেই আছে। অনেক দেশ কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যে প্রক্রিয়ায় ট্রাফিক জ্যাম সমাধান করেছে হুবহু সেইভাবেই আমাদের করা সম্ভব নয়। কারণ তাদের দেশের চিত্র আর আমাদের দেশের চিত্র এক না। সবার আগে সমস্যা চিহ্নিত করে এরপর সমাধান খুঁজতে হবে। আমরাও বসে নেই। কাজ করছি। তবে ট্র্যাফিক জ্যাম নিরসন একক কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয়। সমন্বিতভাবে কাজ করলে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। এজন্য সবার অংশগ্রহণ দরকার।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নিকট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা হস্তান্তর করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সিটি কর্পোরেশন নিজেদের অর্থায়নে এয়ারপোর্ট বানিয়েছে, সাবওয়ে নির্মাণ করেছে। আমাদের দুই সিটি কর্পোরেশন অনেক দায়িত্ব পালন করছে। দুই মেয়রের কাজ করার অনেক আগ্রহ রয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করার সক্ষমতা তাদের আছে কি নেই তা দেখতে হবে।
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, সমন্নিত পদক্ষেপ না নিলে ঢাকার সমস্যা কখনও সমাধান হবে না। এজন্য আমাদের দুর্নীতি কমাতে হবে। দূর্নীতি কারা করে এটা সবাই জানে। এসব থামানো গেলে বর্তমান রাস্তা যা আছে তা দিয়েও যানজট সমস্যার সমাধান সম্ভব। তিনি বলেন, ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন করা জরুরি। লাখ লাখ রিকশা দিয়ে আধুনিক নগরী চিন্তা করা যায় না। গণপরিবহণ নিয়ে ভাবতে হবে। একটা স্কুলে এক হাজার শিক্ষার্থী হলে এক হাজার গাড়ি বের হচ্ছে। নিরাপদ সড়ক নিয়ে যখন বাচ্চারা আন্দোলন করছিল তখন ভালো ট্রাফিক সিস্টেম দেখেছি। কারণ তারা ট্রাফিক না মানাদের ধরেছে। তারা জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে এসেছিল। জবাবদিহিতার আওতায় আনা গেলে যানজট অর্ধেক কমে যাবে।
ড. শামসুল হক বলেন, ঢাকায় অনেক মেগাপ্রজেক্ট করা হলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সেগুলো কোনো কাজে আসেনি। আমি অনেক বিনিয়োগ করতে পারি। কিন্তু রাস্ত ও ভূমি ব্যবহারের কোনো পথ আমরা রাখিনি। সে কারণে এসব প্রকল্পের সুফল পাচ্ছি না। সমস্যা সমাধানে গণপরিবহনের অবকাঠামো বানাতে হবে, কোনোভাবেই ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য নয়। ফ্রাঞ্চাইজির আওতায় এসব বাস চালাতে হবে। আমাদের পথ খোলা আছে। যারা সফল হয়েছেন তাদের পথে হাঁটলে, গণপরিবহনকে জোর দিয়ে যদি আমাদের উন্নয়ন কাজ করি তাহলে সমাধান সম্ভব।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, বেইলি রোডে সচিবদের জন্য আবাসন করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিদিন সকালে একসঙ্গে ১১৪ জন সচিব-অতিরিক্ত সচিব গাড়ি নিয়ে বের হন। সচিবরা যদি বিশ্বমানের অত্যাধুনিক বাস বা মিনিবাসে করে সচিবালয়ে আসেন, তাহলে এসব গাড়ি আর রাস্তায় বের হবে না। প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।
চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ঢাকায় যানজট সমস্যার সমাধানে কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। চাইলে এখনও যানজট নিরসন করা সম্ভব। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ শহর যানজটমুক্ত ঘোষণা দেয়ার মাত্র কয়েকদিনের মাথায় অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখলমুক্ত করেছেন। সেখানে এখন যানজট হয় না। এইভাবে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews