দেশে ‘অক্টোপাসের মতো দম বন্ধ করার পরিবেশ’ বিরাজ করছে: মির্জা ফখরুল

তিনি বলেন, প্রতিদিন বাংলাদেশে মানুষের অধিকার নিয়ে মানুষ কথা বলার চেষ্টা করছে, বলতে পারছে না।

দেশে ‘অক্টোপাসের মতো দম বন্ধ করার পরিবেশ’ বিরাজ করছে: মির্জা ফখরুল
বক্তব্য রাখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রথম নিউজ, ঢাকা: দেশে ‘অক্টোপাসের মতো দম বন্ধ করার পরিবেশ’ বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার সকালে গুলশানে লেকসোরে বিএনপির আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি  এই মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রতিদিন বাংলাদেশে মানুষের অধিকার নিয়ে মানুষ কথা বলার চেষ্টা করছে, বলতে পারছে না। তাঁকিয়ে দেখুন চারদিকে একটা ভয়াবহ রকমের মতো একটা অক্টোপাসের মতো সমস্ত কিছু দম বন্ধ করার একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সেই চেষ্টা করছি। আমরা চেষ্টা করছি যে, আমাদের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে আগামীদিনে অবশ্যই সেই ধরনের একটা আন্দোলন তৈরি করতে সক্ষম হবো যে আন্দোলরের মধ্য দিয়ে আমরা যে ভয়াবহ দানব আমাদের ওপর চেপে বসে আছে তাকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগনের একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো, পার্লামেন্ট তৈরি করতে সক্ষম হবো।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের দেশকে রক্ষা করবার জন্য, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করবার জন্য, আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরে পাবার জন্য এবং গুম হয়ে যাওয়া সন্তানদের ফিরে পাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করি, আন্দোলন করি। একটা সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে নিয়ে আসি যেখানে জবাবদিহিতা থাকবে যেন এই ধরনের কোনো মা কাঁদবে না, কোনো সন্তান তার বাবাকে খুঁজবে না-এই পরিবেশ আমরা তৈরি করি।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ যারা গুম হয়ে গেছেন আমি জানি না- তারা আমাদের কাছে ফিরে আসবে কিনা। আমরা প্রতিমুহুর্তে প্রার্থনা করি, আল্লাহর কাছে দোয়া চাই তারা(গুম হওয়া) যেন ফিরে আসেন। আর যারা খুন হয়ে গেছে, যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে যে, তাদের পরিবার-পরিজনদের একই অবস্থা।”

‘‘ আমাদের গুম হয়ে যাওয়া পরিবারগুলো আছেন তাদের স্বজনদের কথায় আমরা কষ্ট পেলেও অনুপ্রাণিত হই। তারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, এখনো করে যাচ্ছেন সেটা আমাদেরকে এই সংগ্রামে আমাদের এই যুদ্ধে সাহস যোগাবে এবং আমরা সামনের দিকে আরো এগিয়ে গিয়ে সফল হতে পারবো।”

গুম হওয়ার পরিবারের পাশে বিএনপি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব প্রত্যেকটি গুম হওয়া পরিবারের খবর রাখেন। আমাদের মানবাধিকার সেল তারা চেষ্টা করে বিষয়টাকে আন্তর্জাতিক মহলে নিয়ে এসে কাজ করার জন্যে।”

বিএনপির সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ১০ বছরপূর্তি উপলক্ষে ‘ইলিয়াস আলীসহ সকল গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দাও’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপির ৬‘শ অধিক ‘গুম’ হওয়ার ওপর একটি ভিডিও ক্লিফ দেখানো হয়।

২০১৭ সালে ১৭ এপ্রিল বনানীর আমতলীর কাছ থেকে এম ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালক আনসার আলীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ আজকে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমরা এখানে বসেছি। গুম পরিবারের সদস্যদের সাত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নাই, তাদের প্রতি কিভাবে আমরা সহানুভূতি প্রকাশ করবো তার ভাষাও আমাদের কাছে নাই। গুম করে নানা নির্যাতন করা এবংকি থানায় জিডি পর্যন্ত করতে দেয় নাই- আজকে কিন্তু এই বিষয়গুলো আর গোপন থাকে নাই। গুম হওয়া পরিবারে কান্নায় আমরা ভাষাহীন।

‘‘ আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আজকে আমাদের জনগনের কাছে এটা পরিস্কার যে, এই অবস্থা থেকে যদি মুক্তি পেতে হলে বর্তমানে এই স্বৈরাচারি ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে জনগনকে রক্ষা করতে হবে। এই কান্নার শেষ দেখতে হলে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। তা করতে হলে এদেশের সকল গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক সকল জনগন, ব্যক্তি, দলকে ‘সরকার হটানোর ইস্যুতে’ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তা না হলে এদেশে কারো কান্না থামবে না।”

তিনি বলেন, ‘‘ সম্প্রতি প্রকাশিত আমেরিকার মানবাধিকার রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে পুঙ্খনাপঙ্খুরুপে প্রকৃত সত্য ঘটনাগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে। অনেক মন্ত্রী বলেন, এই রিপোর্টের সাথে বাস্তবতার অনেক তফাত। আমি তাদের সাথে একমত যে এই রিপোর্টের সাথে বাস্তবতার তফাত এই কারণে যে, বাস্তবতা হচ্ছে আরো কঠিন, বাস্তবতা হচ্ছে আরো বেশি ঘটনা। এই রিপোর্ট দেখলে বুঝতে পারি সরকার কোনো কিছু ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারিনি।”

‘সিন্দাবাদের দ্বৈত্যের চাইতে নিষ্ঠুর দ্বৈত্য বসে আছে’

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ এখন এতোগুলো বছর পরে এটাই হলো সত্য যে, আমরা সিন্দাবাদের দ্বৈত্যের চাইতে নিষ্ঠুর একটা দ্বৈত্যকে কাঁধে নিয়ে চলছি। না নিয়েও উপায় নেই। আমরা যদি অনেক জোরে কাঁধ ঝাঁকি দেই উনি পড়েন না, আমরা যেরকম করেই চেষ্টা করছি উনি যাচ্ছেন না।”

‘‘ ভাববার বিষয়। তখনই বলেছিলাম, মাফ চেয়ে, হাত বদল করে যত মিনতি করেন এরা আপনাদের হারানো স্বজনদের ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। কারণ ওরা তো নিজেরাই নিয়ে গেছে এবং নিয়ে যে গেছে, এর পেছনে লক্ষ্য ছিলো একটাই তাদের রাজনীতি, তাদের দল, তাদের ক্ষমতা পাকাপুক্ত করবে।”

তিনি বলেন, ‘‘ এটা এমন একটা সময় যখন ক্ষমতাসীনরা চূড়ান্ত বিপদের মধ্যে। ওরা একদিকে আপনাদেরকে স্টিক দেখাবে, আরেক দিকে ক্যারেড দেখাবে। ইংরেজীতে যেমন বলে স্টিক এ্যান্ড ক্যারেড পলিসি- ঠিক এরকম চেষ্টা করবে। আপনাদেরকে ধমক দেবে আবার ওইদিকে নির্বাচনের টোপ দেবে।”

‘‘দেখেছেন না, সেনশন(নিষেধাজ্ঞা) দেবার চার মাস পরে গতকালকে কুমিল্লাতে একটা আবার ক্রসফায়ার হয়েছে। এই ক্রসফায়ারের জন্য আমেরিকা বলেন, অন্যরা বলেন নতুন করে আবার প্রশ্ন করবে, আবার তাদের নতুন করে সেনশন দেবে, সেকেন্ড যে সেনশনের কথা শুনেছেন যেটা কী আর রয়েছে? আন্তর্জাতিক রাজনীতি মানবতা রেখে চলে না সবসময়। বরঞ্চ বেশিরভাগ সময় আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবংকি দেশেরও রাজনীতি কেবলমাত্র ক্ষমতার হিসাব-নিকাশের ওপরে চলে। আমি মনে করি খুবই যথার্থ ভাবে আপনার দল এটা বলেছেন নো টু দিস গর্ভামেন্ট, আমরা একে মানি না, এর অধীনে কোনো নির্বাচন করব না।”

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল ও ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াসের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, গণ-অধিকার পরিষদের আহবায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ এবং বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভেকেট আসাদুজ্জামান আসাদ বক্তব্য রাখেন।

এই অনুষ্ঠানে গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সাইদুর রহমানের বাবা শফিকুর রহমান, মাজহারুল ইসলাম রাসেলের ভাই মশিউর রহমান লোটাস, পারভেজ হোসেনের ছোট মেয়ে আদিবা হোসেন হৃদি, নুরুজ্জামান রনির স্ত্রী মনিসা, মনির হোসেনের ভাই ওবায়দুল্লাহ হোসেন তাদের মনবেদনা ও আকুতির কথা তুলে ধরেন।  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, জ্যেষ্ঠ নেতা শাহজাহান ওমর, জয়নুল আবদিন ফারুক, শাহজাদা মিয়া, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক সাহিদা রফিক, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, শ্যামা ওবায়েদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর হেলাল, ফরিদা ইয়াসমীন, আবেদ রাজাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় যুক্তরাজ্য ও কানাডা দূতাবাসের কুটনীতিকরা ছিলেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom