টাঙ্গাইলে লাম্পি রোগে মরছে গরু, দিশেহারা খামারি
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গোপালপুর উপজেলার হেমনগর, ঝাওয়াইল, হাদিরা, নগদা শিমলা ইউনিয়নে এই রোগ বেশি ছড়িয়েছে। এবার বাছুর গরু আক্রান্তের হার বেশি।
প্রথম নিউজ, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাস। এ রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকায় লাম্পি আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে গরু। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গোপালপুর উপজেলার হেমনগর, ঝাওয়াইল, হাদিরা, নগদা শিমলা ইউনিয়নে এই রোগ বেশি ছড়িয়েছে। এবার বাছুর গরু আক্রান্তের হার বেশি।
নগদা শিমলা ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের আব্দুল কাদের, বনমালী পূর্বপাড়ার শাফি, চরচতিলার আম্বিয়া বেগম ও আনোয়ার হোসেন, জোতবাগলের নজরুল সুতার ও আল আমিনের একটি করে গরু লাম্পি রোগে মারা গেছে।
উত্তর বিলডগা গ্রামের ইকবাল হোসেন বলেন, আমার গরুও কিছুদিন আগে আক্রান্ত হয়েছিল। নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকায় পরিচিত একজন চিকিৎসককে দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে শেষে আশা ছেড়ে দিই। পরে ভূঞাপুরের এক চিকিৎসকের চিকিৎসায় আমার গরু সুস্থ হয়েছে। এই রোগে আমাদের গ্রামে অনেক গরু আক্রান্ত হয়েছে। কয়েকদিন আগে আমার বোন জামাইয়ের একটি গরু মারা গেছে।
বাছুরের গায়ে বড় ফোসকা দেখিয়ে বনমালী গ্রামের সুমন মিয়া বলেন, গ্রাম্য এক পশুচিকিৎসককে সাতশ টাকা ভিজিট দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছি। তবে এখন পর্যন্ত বাছুরটি সুস্থ হয়নি। চারিদিক থেকে গরু মারা যাওয়ার খবর পাচ্ছি। জানি না আমারটার কী হবে।
চরচতিলা গ্রামের বিল্লাল হোসেন বলেন, কয়েকদিন ধরে ভাইরাসে আক্রান্ত বাছুরটি নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসা করিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
গোপালপুর উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (কৃত্রিম প্রজনন) আলমগীর হোসেন বলেন, ঝাওয়াইল ইউনিয়নের যতগুলো খামার বা গোয়ালে গিয়েছি তাতে বেশির ভাগ গরু আক্রান্ত দেখেছি। এখন পর্যন্ত প্রায় আটটি গরু মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। লাম্পি স্কিন ডিজিজের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে কৃষক ও খামারিদের সচেতন করতে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে রোগটি সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে। আক্রান্ত প্রাণীকে পরিষ্কার স্থানে আলাদা মশারির ভেতর রাখতে বলা হচ্ছে। ভিটামিন সি/লেবু ও খাবার সোডা খাওয়ানোর পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রানা মিয়া বলেন, মশা-মাছি থেকে রোগটি ছাড়াচ্ছে। এতে আক্রান্ত হচ্ছে শুধু গরু আর মহিষ। শুধু গোপালপুরে নয় সারাদেশে প্রায় ৬০ শতাংশ গরু লাম্পিতে আক্রান্ত। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আগে বড় গরু আক্রান্ত বেশি হলেও এবার বাছুর আক্রান্তের হার বেশি। গোট পক্সের টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী সরকারি এ টিকার সাপ্লাই একটু কম। টাকা একটু বেশি লাগলেও বেসরকারিভাবে এই টিকা সংগ্রহ করা যাচ্ছে।
এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, শুধু লাম্পিতেই গরু মারা যাচ্ছে এমনটা না। অন্য রোগেও গরু মারা যাচ্ছে। তাই শঙ্কিত না হয়ে খামারিদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শ নিতে বলা হচ্ছে।