টাকার বিনিময়ে রিকশার দখলে মগবাজার মোড়!

এই মোড়টিকে রীতিমত রিকশা স্ট্যান্ড বানিয়ে যান্ত্রিক যানবাহনের চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সাধারণ পথচারীরাও নিয়মিত এই মোড়ে রিকশার জটলায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

টাকার বিনিময়ে রিকশার দখলে মগবাজার মোড়!

প্রথম নিউজ, ঢাকা: রাজধানীর প্রায় প্রত্যেক সড়কের মোড়ে মোড়ে তৈরি হয়েছে রিকশা স্ট্যান্ড। ব্যতিক্রম নয় মগবাজার মোড়ও। এই মোড়টিকে রীতিমত রিকশা স্ট্যান্ড বানিয়ে যান্ত্রিক যানবাহনের চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সাধারণ পথচারীরাও নিয়মিত এই মোড়ে রিকশার জটলায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

সরেজমিন মগবাজার মোড়ে কথা হয় পথচারী লাবনী আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, কর্তব্যরত আনসার ও পুলিশ সদস্যদের টাকা দেন রিকশা চালকরা। যার কারণে ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল ও আনসার সদস্যরা কিছু না বলায় এই চার পাশের মোড়ে রিকশার স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে।

৬ নম্বর পরিবহনের চালক রবিন হোসেন বলেন, প্রতিদিন মগবাজার মোড়ে যানজট লেগেই থাকে। ঠিকমত বাস যেতে পারে না, রিকশা চালকরা একপ্রকার রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। সুপ্রভাত পরিবহনের চালক লালন মিয়ার অভিযোগ, প্রতিদিন মগবাজার, মালিবাগ সড়কে যানজট থাকে। রিকশার কারণে এই সড়কে বেশি যানজট হয়। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা গেছে আনসার সদস্যরা রিকশার চালকদের কাছ থেকে মাসিক টাকা নেন। রিকশা চালকরা আনসার এবং ট্রাফিক কনস্টেবলদের টাকা দিয়ে মূলত মোড়ে মোড়ে অবস্থান করেন।

তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, অনেক সময় আমরা বাস নিয়ে দাঁড়ালে পুলিশ আমাদের লুকিং গ্লাস ভেঙে ফেলেন। কিন্তু রিকশা চালকদের মোড় থেকে সরায় না। তিনি বলেন, রিকশা চালকরা গরিব মানুষ সেটা বুঝলাম। মোড় থেকে তাদের ১০০ গজ দূরে সরিয়ে দিলেই তো রাস্তায় যানজট কমে আসে। বিষয়টি ট্রাফিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্টদের নজরে আনার জন্য অনুরোধ করছি।

সম্প্রতি মগবাজার মোড়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চৌরাস্তার সবকটি পয়েন্টে গাড়ি পার্কিং এর মত রিকশা পার্ক করে রাখা। এখান থেকেই রিকশাচালকরা যাত্রীদের ডেকে রিকশায় তুলে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন। ফলে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। কয়েকজন রিকশা চালকের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ট্রাফিক কনস্টেবলদের হাত করেই আমরা প্রতিদিন এখানে অবস্থান করি। মোড়ের পাশে থাকলে বেশি ভাড়া পাওয়া যায়, এজন্য মূলত আমরা ট্রাফিক কনস্টেবলদের ম্যানেজ করেই এখানে অবস্থান করি।

জানা যায়, মগবাজার মোড়ে রিকশার স্ট্যান্ড থেকে ট্রাফিক কনস্টেবল সোহেল, সিরাজ মিয়া, আনসার সদস্য রবিউল, ট্রাফিক সার্জেন্ট সিরাজুল রিকশা এবং পাঠাও চালকদের কাছ থেকে টাকা নেন। ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকদিন গিয়ে একাধিক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে। একজন রিকশাচালক জানান, প্রতিদিন ৩০-৫০ টাকা আনসার সদস্য আর পুলিশ কনস্টেবলদের দিতে হয়। অন্যথায় তারা আমাদের এখানে দাঁড়াতে দেন না।

অবশ্য মগবাজার মোড়ে ডিউটিরত সার্জেন্টরা বলছেন, রিকশা চালকদের কাছ থেকে কোনো ধরনের টাকা পয়সা নেওয়া হয় না। রিকশা, ভ্যান দেখাশোনা করেন ট্রাফিক কনস্টেবল ও আনসার। ট্রাফিক কনস্টেবল আনসারদের গাইডলাইন করে। যে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে সেটি সত্য নয়। ট্রাফিক কনস্টেবল ও আনসার ম্যানেজ করার কথা জানিয়ে রিকশাচালক বশির মিয়া বলেন, আনসার এবং ট্রাফিক পুলিশদের (কনস্টেবলদের) টাকা না দিলে তারা রিকশার চাকা পাংচার করে দেন। এ ছাড়া প্রতিদিন এ রোড দিয়ে যেহেতু চলাচল করি এজন্য আনসার এবং ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে মিল দিয়ে আমরা চলি।

রিকশাচালক আব্দুল মালিক বলেন, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে জমা দিতে হয়। তবে অভিযান চালালে তখন একটু বেশি টাকা দিতে হয়। তিনি বলেন, টাকা জমা নেওয়ার আলাদা লোক আছে। ট্রাফিক পুলিশ সরাসরি টাকা নেয় না, আমরা অন্য মানুষের মাধ্যমে তাদের টাকা দিয়ে থাকি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মগবাজার ট্রাফিকবক্সে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মো. শামীম বলেন, রিকশাচালকদের কাছ থেকে ট্রাফিক পুলিশের টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই যে ট্রাফিক কনস্টেবলরা টাকা নিচ্ছেন।

মগবাজার মোড়ের রিকশার স্ট্যান্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, রিকশাচালকদের আমরা বারবার অবস্থান করতে নিষেধ করি, এরপরও তারা আমাদের কথা অনেক সময় মানেন না। দিনমজুর এজন্য আমরা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের জয়েন কমিশনার মনিবুর রহমান বলেন, ট্রাফিক পুলিশ কারো কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে এমন কোনো অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আপনাদের কাছে যদি কোনো তথ্য থাকে সেগুলো আমাদের দিতে পারেন আমরা অফিসিয়ালি বিষয়টি দেখব।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom