জামিন পেলেন রানা প্লাজার সোহেল রানা
হত্যা মামলাটিতে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি শাহেদ নুরউদ্দিনের বেঞ্চ প্রধান আসামি রানাকে জামিন দেয়।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: আটকের ১০ বছর পর মুক্তি পেতে যাচ্ছেন রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। ২০১৩ সালে সোহেল রানার মালিকানাধীন ভবন রানা প্লাজা ধসে হাজারো পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এতে সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। ওই ভবন ধসের পাঁচ দিন পর রানা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছিল। আরও কয়েকটি মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল তাকে। হত্যা মামলাটিতে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি শাহেদ নুরউদ্দিনের বেঞ্চ প্রধান আসামি রানাকে জামিন দেয়।
আদেশের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এই জামিনের ফলে রানার মুক্তিতে আর বাধা নেই। রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় সোহেল রানাকে কেন জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে গত বছর ১লা মার্চ রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সোহেল রানাকে জামিনের আদেশ দিলো আদালত। ভবন ধসের ১০ বছর পূর্তির ২০ দিন আগে রানার জামিনের এই আদেশ হলো।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ১০ তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে পড়ে। ওই ভবনে থাকা কয়েকটি পোশাক কারখানার ৫ হাজারের মতো শ্রমিক তার নিচে চাপা পড়েন। কয়েকদিনের উদ্ধার তৎপরতায় ১ হাজার ১৩৬ জনের লাশ তুলে আনা হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক আহত ও পঙ্গু হন। ঘটনার পাঁচদিন পর ২৯শে এপ্রিল ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে সোহেল রানাকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ওই ঘটনায় সাভার থানার তৎকালীন এসআই ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে অবহেলা ও ত্রুটিজনিত কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার অভিযোগে মামলা করেন।
মামলায় ভবন মালিক রানা ছাড়াও আসামি করা হয় তার বাবা আব্দুল খালেক, মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র মো. রেফাতউল্লাহ, তৎকালীন ওয়ার্ড কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী, সাভার পৌরসভার তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, তৎকালীন সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, তৎকালীন উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, সাভার পৌরসভার তৎকালীন টাউন প্ল্যানার ফারজানা ইসলাম, তৎকালীন লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আব্দুল মোত্তালিব, তৎকালীন সচিব মর্জিনা খান, তৎকালীন সচিব মো. আবুল বাশার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিন) এ টি এম মাসুদ রেজা, প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসাইন, ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের এমডি বজলুস সামাদ ও ইথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান। এদের মধ্যে দুই আসামি রানার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে খালেক কুলু এবং আতাউর রহমান মারা গেছেন।
২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। মামলায় ৫৯৪ জনকে সাক্ষী করা হয়। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামানের আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার। তবে ৩৯ আসামির মধ্যে দুইজনের পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ থেমে ছিল। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি মামলার বাদী ওয়ালী আশরাফ আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করলে বিচার কাজে গতি আসে।