জ্বালানির দাম বাড়ায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ছে দেশ: এমসিসিআই
গতকাল মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও মুক্ত আলোচনায় সংগঠনটির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম এ কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদনের খরচ বাড়ছে। এতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ছে দেশ। এ কারণে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে ও চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাণিজ্যে টিকে থাকতে জ্বালানিতে আরও কিছুদিন ভর্তুকি দরকার। গতকাল মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও মুক্ত আলোচনায় সংগঠনটির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম, মহাসচিব ফারুক আহমদ প্রমুখ। এমসিসিআই সভাপতি বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) পরামর্শে সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে জ্বালানিতে কোনো ভর্তুকি দেবে না। আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে প্রতি মাসে না হলেও প্রান্তিকে সমন্বয় করে মূল্য নির্ধারণ করবে। কিন্তু এখনো বিশ্বে মহামারি শেষ হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান। এ অবস্থায় জ্বালানিতে ভর্তুকি তুলে নেয়া হলে দেশের ব্যবসায়ীরা চাপে পড়বে, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।
বিলাসপণ্যের আমদানি কমে যাওয়াকে সাধুবাদ জানিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, শিল্পের কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানি কমে যাওয়া উদ্বেগজনক। এতে রপ্তানির পাশাপাশি আমদানি বিকল্প পণ্যের উৎপাদন কমে যেতে পারে, যা নতুন ধরনের সংকট তৈরি করবে। আইএমএফ ঋণের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের আইডিএ তহবিল, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের প্রবাহ শক্তিশালী হলে লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা কেটে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এমসিসিআই সভাপতি বলেন, কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো বাধা নেই। তবে আমাদের প্রয়োজন হলে আগে ব্যাংকগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে এলসি করে দিতো। বাস্তবতা হচ্ছে এখন এলসি খুলতে সময় লাগছে।
ডলার সংকট নিয়ে তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে গত বছর থেকে দেশে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের মাঝে আমদানি ব্যয় মেটাতে বাধ্য হয়ে রিজার্ভ থেকে খরচ করেছে সরকার। ফলে রিজার্ভের মাত্রা আগের বছরের তুলনায় বেশ কমে এসেছে। তবে রেমিট্যান্স বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এমসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য দেশের সমৃদ্ধি বয়ে আনে। করোনার মধ্যেও আমরা বেশ কয়েকটি সূচকে উন্নতি করেছি। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৭ বিলিয়ন ডলার। ইতিমধ্যে প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৩২.৪৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এই অর্থবছরে ৬০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হবে। যে কোনো দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য কয়েকটি সূচক দরকার। একইসঙ্গে সুশাসনেরও দরকার রয়েছে। ২০২১ সালের করোনার মধ্যেও আমরা অনেক ভালো করেছিলাম।
তৈরি পোশাক নিয়ে এমসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের রপ্তানি খাতে রাজস্ব বাড়াচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে পোশাক খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪.৪০ শতাংশ। এ ছাড়া বর্তমানে দেশের পোশাক খাতে প্রতি মাসে ৪.৪৬ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হচ্ছে। তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুধু তৈরি পোশাকের উপর নির্ভর করা উচিত না। আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রপ্তানি বহুমুখীকরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এনবিআরের হয়রানি প্রসঙ্গে এমসিসিআই নেতা বলেন, মাঠপর্যায় রাজস্ব কর্মকর্তা একজন ব্যবসায়ীর ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকে। ব্যবসায়ীদের সহায়তা করার জন্য সরকার ও এনবিআরের যে সদিচ্ছা রয়েছে তা মাঠপর্যায়ে গিয়ে আর থাকে না। তাই আমরা সবসময় রাজস্ব খাতে হয়রানি দূর করতে অটোমেশন চালুর পরামর্শ দিয়ে আসছি। কিন্তু এ দাবি দীর্ঘদিনের হলেও এটা এখনো চালু হয়নি। তাই ভোগান্তিও কমেনি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: