খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে- এই মুহূর্তে তাকে বাসায় নেয়া সম্ভব নয়। আপাতত হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক ক্লোজ মনিটরিংয়ে রাখতে হবে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: গত ২৯ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দুরারোগ্য ব্যাধি লিভার সিরোসিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। হাসপাতালে প্রায় এক মাস চিকিৎসার পরও তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। বরং দিন দিন অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে- এই মুহূর্তে তাকে বাসায় নেয়া সম্ভব নয়। আপাতত হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক ক্লোজ মনিটরিংয়ে রাখতে হবে।
এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার। তিনি মানবজমিনকে বলেছেন, ম্যাডামকে বিদেশে নেয়ার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ফের একটি আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো সরকারের তরফ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে বিএনপি’র স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা প্রতিদিনই ম্যাডামকে পর্যবেক্ষণ করেন। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় মেডিকেল বোর্ড উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, মূলত লিভার সিরোসিস থেকেই ম্যাডামের শারীরিক জটিলতা বাড়ছে। পেটে পানি চলে আসছে। প্রতিনিয়ত তা অপসারণ করতে হচ্ছে। লিভার সিরোসিসের কারণে শরীরে প্রোটিন কমে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল ম্যাডামকে বিদেশে নিয়ে তার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা। যেটা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। মেডিকেল বোর্ড পরামর্শ দিয়েছেন- তাকে বিদেশে নিয়ে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি এডভান্স সেন্টারে চিকিৎসা দেয়ার জন্য।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন দলটির নেতারাও। তাকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার অনুমতি দিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ৫৮২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ম্যাডাম দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে অতিদ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার অনুমতির দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। ওদিকে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় গতকাল নয়াপল্টন কার্যালয়ে সকাল বিকাল দু’দফা দোয়া মাহফিল করেছে ছাত্রদলের সাবেক নেতৃবৃন্দ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর ২০২০ সালের ২৫শে মার্চ তাকে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়। তখন থেকে তিনি গুলশানের বাসভবনে অবস্থান করছেন। ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদণ্ড, ঘাড়, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
২০২১ সালের এপ্রিলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা অসুস্থতার কারণে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। গত বছরের জুনে বুকে ব্যথা অনুভব করলে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে ৩টি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। চলতি বছরের ১৩ই জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময় হাসপাতালে ৫ দিন চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।
সর্বশেষ গত ৯ই আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে ওই হাসপাতালের প্রফেসর শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। প্রফেসর শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ড সার্বক্ষণিক তার চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুই মামলায় তিনি কারা ভোগ করছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে ৭ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর নাইকো দুর্নীতি মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।